ভোলা নিউজ ২৪ ডটকম :: নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের হয়রানি ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৩০১ জন আইনজীবী। আজ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান আইনজীবীরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের দারিদ্রপীড়িত কর্মহীন মানুষের স্বপ্নের নায়ক, ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীর সব থেকে কঠিন এবং দীর্ঘ সমস্যা দরিদ্র নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণের যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন, তা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের দারিদ্রপীড়িত সমাজ বদলে এক অনন্য নজির। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। দরিদ্র নিরসনে এক অনবদ্য চিন্তার ফসল এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প, যা সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আইনজীবীরা বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তাই নন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায় করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি’ গঠন করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় করেছিলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে তিনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করেছেন। তিনি স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, কগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল, আন্তর্জাতিক গান্ধি শান্তি পুরস্কার ও প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমস এবং বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে তার জন্য গর্বিত।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উপলব্ধি করছি, ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণের এই মহান কারিগরের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে নানা রকমের নিপীড়ন ও হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বর্তমান সরকার যাকেই তার প্রতিপক্ষ মনে করে, তাকেই রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নির্যাতন, নিপীড়ন করে নিঃশেষ করার চেষ্টা করছে। বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের রোষানলে পড়ে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় তথাকথিত বিচারিক প্রক্রিয়ায় ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে হয় সাজাভোগ করেছেন, নয়তো কারান্তরীণ আছেন। বাংলাদেশের গর্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া একপেশে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অবৈধ সরকারের আক্রোশ প্রসূত। আমরা এদেশের আইনজীবী সমাজ মনে করি, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসা এবং সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত আক্রোশ ও হিংসার শিকার।’
বিবৃতিতে আইনজীবীরা বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফরমায়েশি বিচারের নামে যে বিচারিক হয়রানি, তা দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ করছে। আইনজীবী হিসাবে আমরা দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ চাই। আমরা বাংলাদেশের সাংবিধানিক আদালতের আইনজীবীরা সরকারের এহেন ফ্যাসিস্ট আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধের জন্য এবং সব ধরনের হয়রানিমূলক চলমান মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, আডভোকেট রেজাউল করিম রেজা, অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মাহবুব, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মেহেদী, অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আখতার ওয়াহিদা, অ্যাডভোকেট কে আর খান পাঠান, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সুমন, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম সপু, ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহদিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব, অ্যাডভোকেট মোহাদদেস ইসলাম টুটুল, অ্যাডভোকেট মহসিন কবির রকি, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান, ব্যারিস্টার মরিয়ম ই খন্দকার, অ্যাডভোকেট কাজী মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ, অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল, অ্যাডভোকেট আল ফয়সাল সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট এম এরশাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম, অ্যাডভোকেট জুলফিকার আলম শিমুল, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ফাহিম, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান শাহীন, অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হানিফ, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট রেশমা রোকাইয়া, অ্যাডভোকেট আইনুন নাহার শিউলি, অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা, অ্যাডভোকেট বিলকিস আরা মিতু, অ্যাডভোকেট রেজওয়ান নূর সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট ফারিহা ফেরদৌসসহ সুপ্রিম কোর্টের ৩০১ জন আইনজীবী।