নারায়ণগঞ্জ:সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নির্বাচনের বছরে আপনি অ্যাক্টিভ হয়ে যান। আপনার এই হুঙ্কার বন্ধ করে শেখ হাসিনার জন্য কাজ করেন, জনকল্যাণে কাজ করেন। তা নাহলে আপনার অবস্থান কিন্তু থাকবে না। এখনই অবস্থান নাই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। এই শহরের মানুষকে এত বেশি অত্যাচার করা হয়েছে যা বলার ভাষা নাই।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে দুই নম্বর রেলগেইটে দলীয় কার্যালয়ে শ্রমিক লীগের আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির রানিং কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্টকে ডাইকা আইনা আপনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানাইলেন। আপনার লজ্জা করে না? আপনি বারবার বলেন যে আপনি বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেন। তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিএনপির লোকজনকে কেনো বসিয়েছেন? ফতুল্লার সেন্টু জীবনে কী জয় বাংলা বলবে? তাহলে কেনো তাকে চেয়ারম্যান বানালেন? চেয়ারম্যান বানাইলেন কিন্তু ভাড়ার লোক এনে আপনার করা মিছিলে তো সেন্টু আসলো না। আপনি টাকার বিনিময়ে মানুষকে দলে নিয়ে আসেন আবার টাকার বিনিময়ে আপনি মানুষের ক্ষতি করেন। এইসব কাজ থেকে বিরত থাকুন।
আইভী বলেন, আপনার জন্য অনেকেই আমাদের সাথে এসে কাজ করতে ভয় পায়। আপনি দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিভেদ তৈরি করেন। আপনি জামাত-বিএনপিকে পেট্রোনাইজ করেন। আপনি হেফাজতের ফেরদৌসকে পেট্রোনাইজ করেন। তাকে আপনি জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছেন। আপনি এসব বন্ধ করেন। অন্যথায় আপনার পরিণতি খুব খারাপ হবে।
সিটি মেয়র আরও বলেন, সব জেলায় উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এই সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। যেখানেই যাবেন সেখানেই সরকারের কথা বলবেন। যারা বিভেদকারী তারা বিভেদ করবেই। দলের মধ্যেই সবচেয়ে বড় গ্যাঞ্জাম করা হয়। মোশতাকও দলের মধ্যেই ছিলেন। আপনার চরম শত্রু লুকিয়ে থাকে আপনার পাশেই। দুঃসময়ে কারা পাশে ছিল তাদের চিনে রাখতে হবে।
আইভী আরও বলেন, ২১শে আগস্টে নেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। তখন তাৎক্ষনিকভাবে তখনকার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আমি, আরাফাতসহ অনেকেই পার্টি অফিসে মিলিত হলাম। কোন ভয়ভীতি আমরা পাইনি। আমরা রাস্তায় নেমে পড়লাম। তখন খোকন সাহাও ছিলেন। কারণ তখন তার প্রভু দেশে ছিল না। আমার সহযোগিতায় তিনি তখন শহর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হয়েছেন। এই কথা প্রেসিডেন্টও স্বীকার করবে। সত্য কথা বলতেই হবে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সে কোন বিভেদ তৈরি করে নাই। এরপর এমন কোন জাদুর কাঠি আসলো যে ২০০৯ থেকে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা শুরু করে! শহর অনেক সুন্দর ছিল। আমরা যৌথভাবে সকল কাজে অংশগ্রহণ করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কাদের পকেট সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে? কাদের দেশে-বিদেশে অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে? কাদের বাড়িঘর-ব্যবসা কাদের হয়েছে? খুঁজে দেখেন।
আইভী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে তারাই দেশে থেকে যায়। তারাই দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ায়। এক-এগারোতে যখন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয় তখন তো এই শহরে বড় কোনো নেতারে দেখলাম না। আজকে যারা হুঙ্কার দেয়, মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু করে ফেলবে তারা কোথায় ছিলেন? কাউরে তো চোখে দেখলাম না। এই যারা এইখানে বসে আসে তারাই তো ছিল রাজপথে। দল ক্ষমতায় আসলে একটা গ্রুপ দ্বারা নির্যাতিত হই। তাদের মামলা-মোকদ্দমার শিকার হই। আপনাদের শ্রমিক নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে জেলে ভরেছিল।
তিনি বলেন, হকারদের কতিপয় নেতৃবৃন্দ যারা এক বড়ভাইয়ের নির্দেশে আমার উপর হামলা করলো, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছিলাম নয়জনকে। এইটা কইরা নাকি আমি মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছি। এইরকম মামলা আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই অঞ্চল থেকে পঞ্চাশটা হওয়ার কথা ছিল। আপনার ভাগ্য ভালো আমরা মামলা-মোকদ্দমা করি না। আমরা জনকল্যাণে কাজ করতে গিয়ে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করার সময় পাই না। সুতরাং আপনাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নাই।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করে আইভী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার কর্মী হয়ে রাজনীতি করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে কল্যাণকর রাজনীতি করে বলেই আওয়ামী লীগের উপর বারবার আঘাত আসে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই কারণে চক্রান্তস্বরূপ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক ঘটনা ঘটানো হয়। অনেক দেশেই রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার ইতিহাস আছে। কিন্তু এইভাবে সপরিবারে হত্যার নজির সারা পৃথিবীতে আর নাই।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা এইটা আমাদের কাছ থেকে আশা করেন নাই। কিছু কুলাঙ্গার অফিসারের জন্য আমরা বেঈমান জাতি হিসেবে পরিচিত। এই জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই হত্যাকারীদের বিচার করেছেন। তাদের কয়েকজন এখনও পলাতক। মিটিং-মিছিলের দরকার আছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনাও প্রজন্মকে জানাতে হবে।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।