ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। ভোলায় এক ঘন্টার জন্য প্রতীকী পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিম আজিজ রিমি। প্রতীকী দায়িত্ব নিয়েই ভোলার সাত উপজেলাকে নারীবান্ধব করতে ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানান।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের কাছ থেকে প্রতীকী পুলিশ সুপারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাসনিম আজিজ রিমি। এক ঘণ্টার জন্য তার অধীন হন সকলে। এসময় পুলিশ সুপার তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান।
প্রতীকী দায়িত্ব নিয়ে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন রিমি। তিনি বলেন, ভোলা জেলায় প্রতি ৫ দিনে একটি করে ধর্ষণ মামলা করা হচ্ছে। আর ৮ ঘন্টায় একটি করে নারী নির্যাতনের মামলা করা হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়ে চলছে। নারী ও কিশোরী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে আমি একজন মেয়ে হিসেবে এদেশের লাখ লাখ কিশোরীর মত স্বপ্ন দেখি একটি সুস্থ, নিরাপদ পরিবেশ এবং সুন্দর সমাজের।যেখানে হাজারো স্বপ্ন বুকে নিয়ে কোন কিশোরী কিংবা কোন শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হবে না। যেখানে ধর্ষণের শিকার হয়ে কোন মেয়ে আত্মহত্যা পথ বেছে নিবে না। রাষ্ট্র প্রতিটি নারীর ও শিশুর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাই আমি আশাকরি ধর্ষিত কিশোরীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং ধর্ষকদের প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। একটি ধর্ষণমুক্ত, ইভটিজিংমুক্ত নারী ও শিশুবান্ধব ভোলা জেলা গড়ে তুলতে সকলকে এগিয়ে আশার আহ্বান জানান।
প্রতীকী এই পুলিশ সুপার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে নারী ও কিশোরীরা তরুনীরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখিন হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম অনলাইন ভিত্তিক সাইবার বুলিং। এর মাধ্যমে নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছে। এখনো বাংলাদেশের অধিকাংশ কিশোরীরা জানে না ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সর্ম্পকে। আমি চাই ভোলা জেলা পুলিশ এর পক্ষ থেকে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রনে একটি টিম থাকবে। যার মাধ্যমে কিশোরীরা সাইবার নিরাপত্র নিশ্চত করবে ও সকলকে সচেতন করে গড়ে তুলবে।
সর্বোপরি নারী বা পুরুষ নয় একজন মানুষ হিসেবে মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।এসময় তিনি নারী নির্যাতন, কন্যা শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, ইভটিজিং, কিশোর গ্যাং, বাল্যবিয়ে রোধ ও সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রন সামাজিক অপরাধ রোধে আরো সোচ্চার ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন।
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের বলেন, নারীদের বাদ দিয়ে কোন সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীদের নিয়েই আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, অসীম ক্ষমতার অধিকারী নারী। আল্লাহতালা শুধু নারীকে দিয়েছেন। যে সব রাষ্ট্র যারা নারীর ক্ষমতায়ন দিয়েছে তারাই এগিয়ে গেছে। তাই নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন না দিলে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবেনা।
এসময় তিনি আরো বলেন, সমাজ ব্যবস্থাকে ভালো রাখতে হলে পরিবারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা রাখতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জন করতে পারলেই আমরা টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে হবে বলে তিনি জানান।
এনসিটিএফ এর জেলা সমন্বয়কারি সাংবাদিক আদিল হোসেন তপুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ভোলা জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আকতার হোসেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চামেলি বেগম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর আহ্বায়ক সাংবাদিক হামিদুর রহমান হাসিব, ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিন জাহান শ্যামলী, ভোলা সদর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আবিদুল আলম, ভোলা জেলা এনসিটিএফ এর সভাপতি জান্নাতুল ফেরদাউস মিম, ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান। এসময় তাসনিম আজিজ রিমি অভিভাবক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তারেক আব্দুল আজিজ ও মাতা শিক্ষিকা মরিয়ম বেগম উপস্থিত ছিলেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এর ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসূচির আওতায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্সের (এনসিটিএফ) সহযোগিতায় নারী নেতৃত্ব উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীর আওতায় এই দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে একজন কিশোরী, কন্যা শিশু অথবা যুব নারীকে নেতৃত্ব প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করা হয় যাতে করে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং নিজের স্বপ্ন পূরণে সে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।
এ ঘন্টার পুলিশ সুপার তাসনিম আজিজ রিমিকে দায়িত্ব শেষে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।