ভোলা নিউজ ২৪ ডটকম ।। এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহিদ একজন সৎ, সাহসী ও নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) নেতারা। তাঁরা বলেন, আবদুস শহিদের অকাল মৃত্যু সাংবাদিক সমাজের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতির এ ক্রান্তিকালে তাঁর মতো সৎ, সাহসী ও নির্ভীক সাংবাদিক নেতার খুব প্রয়োজন ছিল।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে আবদুস শহিদ স্মরণে আয়োজিত এক ভার্চুয়ালি শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, দৈনিক দিনকাল সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, বিএফইউজের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, সিনিয়র সাংবাদিক মুজতবা খন্দকার, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম মহসীন, ডিইউজের সহসভাপতি শাহীন হাসনাত, সাবেক সহসভাপতি খুরশীদ আলম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের জি এ এম আশেক উল্লাহ, কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল্লাহ মিয়াজী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, আবদুস শহিদ সাংবাদিক হিসেবে বরাবরই পেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছেন। সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে চাননি। নীতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। ফোরামের নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, আবদুস শহিদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় অকপটে সত্য বলতে পারতেন। মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটার মতো সাংবাদিক কমই আছেন, আবদুস শহিদ ছিলেন তেমন এক ব্যক্তি। তিনি গণতন্ত্রের জন্য, মুক্তমতের জন্য, কথা বলার স্বাধীনতার জন্য, সাংবাদিকদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
এ সময় সাংবাদিক নেতারা আবদুস শহিদের সঙ্গে পথ চলার বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আবদুস শহিদ এত অল্প সময়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, তা ভাবিনি। তাঁর অকাল মৃত্যু খুবই কষ্টদায়ক। তাঁর জন্য সাংবাদিক সমাজে এক শূন্যতা বিরাজ করছে। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে শহিদ ছিলেন আপসহীন। শহিদ তাঁর জীবন চলায় কথা বলত খুবই কম। আর যখন কথা বলত, তখন ন্যায় ও সততার সঙ্গে সে বজ্রকণ্ঠে কথা বলত। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসিব করুন- এই প্রার্থনা করছি।’
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বলেন, ‘আবদুস শহিদের জন্য এভাবে স্মরণসভা করতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। আমরা কেউ বেঁচে থাকব না। একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে, আবদুস শহিদের অকালমৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেস্ত নসিব করেন এজন্য প্রার্থনা করছি।’
বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘আবদুস শহিদের অকালমৃত্যু আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। সাংবাদিক সমাজ তাঁর অবদানের কথা কোনোদিন ভুলবে না। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন- এজন্য দোয়া করছি।’
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘আবদুস শহিদ গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতার জন্য সব সময় সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর অকালমৃত্যুতে আমরা ব্যথিত হয়েছি। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন।’
শোকসভা শেষে মরহুমের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
গত রোববার করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহিদ। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তাঁর লঅশ লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এতিমখানার পাশে দাফন করা হয়।
এর আগে গত ২৫ জুলাই আবদুস শহিদের করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ২৭ জুলাই তাঁকে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৮ জুলাই তাঁকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
১৯৫৭ সালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামে আবদুস শহিদের জন্ম হয়। সৃজনশীল এই মানুষটি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে এনটিভিসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। সাংবাদিকদের নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশের সভাপতি হিসেবে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন আবদুস শহিদ। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করে গেছেন তিনি। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে আবদুস শহিদ তাঁর মা-বাবার নামে আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এনটিভির সংবাদকে গণমানুষের কাছে জনপ্রিয় করার পেছনে তাঁর ছিল বিশেষ ভূমিকা।