ভোলায় শ্মশান ভেঙ্গে ঘর উত্তোলন, আদালতে মামলা

0
58

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ভোলার বাপ্তায় রাতের আধারে শ্মশান ভেঙ্গে ও গাছ কেটে সংখ্যালঘু পরিবারের ভোগদখলীয় জমি জোরপূর্বক দখল করেছে একদল ভূমিদস্যু। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভোলা সদরের বাপ্তা ৩নং ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে জমির মালিক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দে কে বিভিন্নভাবে হুমকী-ধামকি ও হয়রানী করে আসছে ভূমিদস্যুরা। এই জমি ফিরে পেতে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানিয়ে কোন সমাধান না পেয়ে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। ক্রয়কৃত ভোগদখলীয় সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দেয়।

মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদরের বাপ্তা ৩নং ওয়ার্ডের মৃত হরিদাস দের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দে পিতা-মাতার শ্মশানের কথা চিন্তা করে তার চাচা শ্রী পাচু লাল দে ও শ্রী দিলিপ চন্দ্র দে এর কাছ থেকে ‘বাপ্তা মহাপ্রভূর আশ্রম মন্দির’ সংলগ্ন ১৪ শতাংশ জমি ক্রয় করে। ৩১-০১-২০১৮ইং সালে জমি ক্রয়ের পর কয়েক মাস শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দে। এরপর তার উপর নেমে আসে মামলা, হামলা, হুমকি-ধমকি। একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানী করে ভূমিদস্যূরা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই জমিতে একাধিকবার জোরপূর্বক প্রবেশ করে গাছ-গাছালি কেটে দখলের চেষ্টা চালানো হয়। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েও মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দে এর বাধার মুখে ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রথম দিকে ভূমিদস্যুরা জমি দখল করতে ব্যার্থ হয়। এ ঘটনায় আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করা হয়। যার নং-১০৯/১৮। যা বর্তমানে বিচারাধীন আছে। দেওয়ানী মামলা করার পর থেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ভুমিদস্যুরা। গত ১২-১২-১৯ইং তারিখ গভীর রাতে ভূমিদস্যু জসিম পাঠানের নেতৃত্বে ঠাকুর পদ দে, মনা ওরফে সাগর, মিঠুন চন্দ্র দে, গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে, উপলাল দে ও তাদের বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জমির মালিক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দে ও তার পরিবারকে ঘরের বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রেখে জমি দখল করে। এসময় জসিম পাঠান বাহিনী ওই জমিতে প্রবেশ করে মৃত্যুঞ্জয়ের পিতা-মাতার শ্মশান ভেঙ্গে, গাছ-গাছালি কেটে ফেলে। এসময় তারা মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা-মায়ের শ্মশানের উপর ছোট্ট একটি টিনের ঘর উত্তোলন করে। নিজেদের জমি দাবী করে জসিম বাহিনী সেখানে একটি সাইনবোর্ডও টানিয়ে দেয়। ঘরের জানালা খুলে মৃত্যুঞ্জয় ডাকচিৎকার দিলেও কেউ এগিয়ে না আসায় সে হেলপ লাইন ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ এসে জসিম পাঠানকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় জমির মালিক ভুক্তভোগী মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দে বাদী হয়ে ভোলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার নং-৪৫১/১৯। মামলা দায়েরের পর জসিম পাঠান ছাড়া পেয়ে অন্যান্য আসামীদেরকে নিয়ে জমি ভোগদখল করার পায়তারা চালায় এবং মৃত্যুঞ্জয়কে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দেয়। জীবনের নিরাপত্তার ও জমি দখলমুক্ত রাখার জন্য মৃত্যুঞ্জয় দেয় আরও একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৪৫/২০ইং। মামলার পর বিজ্ঞ আদালতে সেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালতের নোটিশ পাওয়ার পরও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জসিম ও ঠাকুর পদ দে ওরফে হিরন গংরা ওই জমির উপর তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

আমি জীবনের নিরাপত্তা ও জমি দখল মুক্ত রাখার জন্য আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করি। ভুমিদস্যুদের হুমকি-ধামকির ভয়ে বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার জমি যাতে সুষ্ঠুভাবে ফিরে পেতে পারি সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জসিম পাঠান বলেন, মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দে তার চাচাদের কাছ থেকে জমি কিনছেন বলে আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সেই মামলায় উনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। উনার চাচাতো ভাইয়েরা বাড়ীতে গেলে অকর্ত ভাষায় কথা বলে। তার ভয়ে তারা বাড়িতে যেতে পারেন না এজন্য মৃত্যুঞ্জয়ের চাচাতো ভাইরা আমার কাছে তাদের ৬০ শতাংশ জমি বিক্রি করে দলিল দেয়। জমি বিক্রয়ের পরে তারা আমাকে জমির দখল বুঝিয়ে দেয়। এছাড়াও অন্যান্যদের কাছেও কিছু জমি বিক্রি করে। এ ঘটনায় মৃত্যুঞ্জয় আমাকে হয়রানী করার জন্য কয়েকটি মিথ্যা মামলা দেয় এবং পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। পুলিশ কাগজপত্র দেখে আমাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। উনি যার কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে মালিক, আমিও তাদের কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে মালিক।

LEAVE A REPLY