বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভোলার মনপুরায় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আমানতউল্লাহ আলমগীরের সমর্থকদের উপর সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন নেতৃত্বে হামলায় কমপক্ষে ১০জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম সোহাগকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে মনপুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপর আহতরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আলমগীর চেয়ারম্যান সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ঘটে। পরে রাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস ও ওসি সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ রামনেওয়াজ বাজারে অবস্থান নেয়। এ সময় মাইকিং করে উভয় গ্রুপকে শান্ত থাকতে ও সরে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। শুক্রবার (০১ মে) রাত ১১টায় উপজেলার ১নং মনপুরা ইউনিয়নের রামনেওয়াজ বাজারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে ফের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আশরাফুল ইসলাম সোহাগ ইউনিয়ন যুবলীগের সাংঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের গদির কেরানি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপর আহতের নাম পাওয়া যায়নি। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, সরকারি চাল বিতরণে সঠিকভাকে নিয়ম নীতি অনুসরণ না করায় সাময়িক বহিস্কৃত হন মনপুরা ইউপি চেয়ারম্যান আমানাতউল্লাহ আলমগীর। শুক্রবার রাতে এমন সংবাদ পেয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন গ্রুপ। এই সময় আলমগীর চেয়ারম্যান সমর্থিত ইউনিয়ন যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সোহাগ দুই লক্ষ ৪০ হাজার টাকা রামনেওয়াজ বাজারের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনকে দেওয়ার জন্য তুলাতুলী বাজার থেকে রওনা দেয়। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের বাড়ীর গেইটের কাছে আসলে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ফরাদ, মনির, লিটনসহ ১৫/২০জন ক্যাডার বাহিনী আশরাফুল ইসলাম সোহাগকে এলোপাধারী মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এসময় সোহাগের কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণের চেইন ও আংকটি ছিনিয়ে নেয় আলাউদ্দিন বাহিনী। খবর পেয়ে রিপন, মুসা, সালাউদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আশরাফুল ইসলাম সোহাগকে উদ্ধার করে একটি বাড়িতে রাখে। খবর পেয়ে মনপুরা থানা পুলিশ সোহাগকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বতর্মানে সোহাগ মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এমন খবরে রাতেই আলমগীর সমর্থিত নারী পুরুষরা বাজার মুখি হলে উভয় গ্রপে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস ও ওসি সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ রামনেওয়াজ বাজারে অবস্থান নেয়। এ সময় মাইকিং করে উভয় গ্রুপকে শান্ত থাকতে ও সরে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। শনিবার সকালে ফের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এর আগে শুক্রবার স্থানীয় মোজাম্মেল হক কাঞ্চন মাস্টারের ছেলে মোঃ মামুন আছরের নামাজ শেষে হাত তুলে আল্লাহ কাছে আলমগীর চেয়ারম্যানের জন্য দোয়া করে। এটি পাশ থেকে আঃ সাত্তার শুনতে পায়। মামুন নামাজ শেষ করে মসজিদের বাইরে আসলে সাত্তার উত্তেজিত হয়ে মামুনের হাত মুড়িয়ে দেয় এবং বিষয়টি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনকে জানায়। উত্তেজিত হয়ে আলাউদ্দিন তার লোকজন নিয়ে চৌমুহনী বাজারে মামুনকে ধাওয়া করে। আত্মক্ষার্থে মামুন দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনী মামুনের বাড়ি দরজায় গিয়ে হুমকি ধামকি দেয় বলে মামুন অভিযোগ করেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আমানতউল্লা আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, আমার মাছের গদির কেরানি ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরশাফুল ইসলাম সোহাগকে আলাউদ্দিন হাওলাদার তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে আহত করে। এসময় সোহাগের কাছে থাকা দুই লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণের চেইন ও আংকটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় আলাউদ্দিন ও তার বাহিনী। পরে সোহাগকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে। খবর পেয়ে গ্রামবাসি একত্রিত হয়ে রামনেওয়াজ বাজারে আসলে ফের আলাউদ্দিন তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আক্রমন করে। এতে ১৫-২০ জন গ্রামবাসি আহত হয়। তবে তিনি সবার নাম জানে না। তিনি আরও বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। সে চর নিয়ে বিরোধ করে আমার লোকজনকে মারধর করে আসছে। অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদারের মুঠোফোন (০১৭৫৭৩২৮৩৮১) জানান, আমার সাথে তার কিছুই হয়নি। এব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই। এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন জানান, দুই চেয়ারম্যান সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে। রামনেওয়াজ বাজারে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি। এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।