লালমোহন প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহনে ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যবসায়ীক গদিতে মাছ বিক্রি না করায় অর্ধশত জেলে পরিবারের উপর পরিকল্পিত হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের দেবিরচর মৎস্য ঘাটে শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এসময় জেলেদের ঘাটে ভিড়ানো প্রায় ৩০টি নৌকা ও মাছ ধরা সাবার ভাংচুর করে জালে আগুন লাগিয়ে দেয় হামলাকারীরা। হামলাকালে জেলেরা বেড়ির পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও চেয়ারম্যানের লোকেরা ওইসব ঘরে ডুকেও হামলা ও ভাংচুর করে। এসময় ঘরে থাকা মহিলা ও শিশুদের আঘাত করে তারা। এ ঘটনায় প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে।
দেবিরচর ঘাটের রুবেল, নুর নবী মোল্লা, নেসার মোল্লা, মাহে আলম, রাজ্জাকসহ একাধিক জেলে জানান, শুক্রবার বিকেলে বদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদ উদ্দিন তালুকদার নদীতে কয়েকটি ট্রলার নিয়ে নামে। তার আগে দুপুরের দিকে তেঁতুলিয়া নদীতে মৎস্য অভিযান টিম ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানকালে দেবিরচরের উত্তরদিকে বগিরচর এলকায় হামলা হয়। ওই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান দেবিরচর ঘাটের জেলেদের উপর সুযোগ নেয়। চেয়ারম্যানের প্রায় ১০-১২ জনের বাহিনী ট্রলার নিয়ে দেবিরচর ঘাটে এসে সেখানে নোঙ্গর করে রাখা জেলেদের মাছ ধরা নৌকা ও সাবার এলোপাথারি কুপিয়ে ভাংচুর শুরু করে। কয়েকটি নৌকা কুপিয়ে ইঞ্জিনও ক্ষতিগ্রস্থ করে মালামাল ফেলে দেয়। এসময় জেলেরা এগিয়ে এলে তাদের উপর হামলা শুরু করে। জেলেরা মারপিটের ভয়ে পাশের ঘরবাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েও তাদের উপর হামলা করে। রাজু বেগম নামের এক গৃহবধু অভিযোগ করেন, এক জেলে তার ঘরে দৌড়ে এসে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা তাকে ধরার জন্য ঘরে প্রবেশ করে সুকেচ ও চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে। এসময় তাকে ও তার ৩ বছরের শিশু রাহাতকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তিনি এ ঘটনা সাথে সাথে এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে মোবাইলের মাধ্যমে জানান। সেখানের আবু মিয়ার ৭ বছরের শিশু কন্যা জিরুনাকে মারপিট করলে তার পা ফুলে যায়। হামলাকালে মূছা মাঝি, নুর হোসেন মোল্লা, রিয়াজ বয়াতী, চাঁন বড়–ু, আকবর মাঝি, মনির মাঝি, ইসমাইল মোল্লাসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়।
জেলেরা জানায়, তারা ১ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা মেনে সকল নৌকা ও সাবার দেবিরচর ঘাটে উঠিয়ে রেখেছেন। তারা মাছ না ধরলেও চেয়ারম্যানের নৌকা গুলো ঠিকই মাছ ধরা অব্যাহত রাখছে। শুক্রবার বগিরচর এলাকায় মৎস্য অভিযান টিম ও পুলিশের উপর হামলা চালায়। কিন্তু দেবিরচর ঘাটে জেলেদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়। চেয়ারম্যানের লোকেরা হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা বেড়ির উপর ঘরে ভাত খাওয়া অবস্থা থেকে মনির নামে এক যুবককেও ধরে নিয়ে যায়। এসময় আরো ৩জনকে ধরে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে মোবাইল কোর্টে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামছুল আরিফ তাদের ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। চেয়ারম্যান আটককৃতদের ছাড়াতে প্রত্যেকের পরিবার থেকে ৪ হাজার টাকা করে নেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। হামলায় তাদের প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করা হয়।
এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব জেলেদের মিথ্যা অভিযোগ। আমি কেন তাদের উপর হামলা করাবো। আমি আইনের পক্ষে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য কাজ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামছুল আরিফ জানান, হামলার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমার সামনেও তারা ঐদ্ধর্ত্যপূর্ণ আচরণ করে। ঘরে হামলা বা ভাংচুরের ঘটনা ওই ঘাটের জেলেরা নিজেরাই সাজিয়েছে।