বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেলো ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাত

0
350

ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেটঃ ভোলার ইলিশায় বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেলো ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী (জেএসসি পরীক্ষার্থী) জান্নাত বেগম। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ব্যারিস্টার কাচারী এলাকায় পুলিশ প্রশাসন এবং বাল্যবিয়েশিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির হস্তক্ষেপে এই বিবাহ বন্ধ করা হয়। এসময় পুলিশ মেয়ে চাচা, দাদা ও ছেলের ভাইকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

জানা গেছে, ভোলা সদরের ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ব্যারিস্টার কাচারী এলাকার আরব আলী হাজী বাড়ীর প্রবাসী মোঃ ইউসুফ এর মেয়ে ১৬নং চর ইলিশা সরকারি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী (জেএসসি পরীক্ষার্থী) জান্নাত বেগম এর সাথে ইলিশ বটতলার প্রবাসী মামুনের সাথে বিয়ের আয়োজন চলছিলো। খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউসুফের বাড়ীতে বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও কোস্ট ট্রাস্ট এর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা উপস্থিত হয়। বিয়ের আয়োজন দেখে কমিটির নেতৃবৃন্দ সদর থানার ওসি, ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ, সাংবাদিক ও ইউপি সদস্যকে জানায়। পরে ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ শ্রী রতন শীলে নেতৃত্বে এএসআই সুজন মাঝি, সাংবাদিক, ইউপি সদস্য ওই বাড়ীতে যান। এসময় ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ শ্রী রতন শীল, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেতৃবৃন্দ মেয়ের পরিবারকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন। মেয়ের পরিবার তাদের ভূল শিকার করে জান্নাত বেগমকে বাল্যবিয়ে দিবে না বলে অঙ্গীকার করেন। পুলিশ, সাংবাদিক ও কমিটির নেতৃবৃন্দ মেয়ে পক্ষের আশ্বাসে সেখান থেকে চলে আসে।

কিন্তু পুলিশকে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করে দুপুর ২টার দিকে পুনরায় ছেলে পক্ষকে নিয়ে বিয়ের আয়োজন করে মেয়ের পরিবার। বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেতৃবৃন্দ বিষয়টি জানতে পেরে পুনরায় ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ শ্রী রতন শীল ও সাংবাদিকদের খবর দেয়। তারা ঘটনাস্থলে এসে ছেলে ও মেয়ের পরিবারকে বিয়ের আয়োজন করতে দেখেন। পরে ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ শ্রী রতন শীলে নেতৃত্বে এএসআই সুজন মাঝি মেয়ের চাচা, দাদা ও ছেলের ভাইকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এসময় মেয়ে ও ছেলে পক্ষ ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাত বেগমকে উপযুক্ত বয়স হলে বিয়ে দিবেন এই সর্তে মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এসময় মেয়ের চাচা বলেন, আমরা ভূল বুঝতে পেরেছি। জান্নাত বেগমকে পড়ালেখা করিয়ে উপযুক্ত বয়স হয়ে বিয়ে দিবো।

ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ শ্রী রতন শীল বলেন, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি এই বাল্যবিয়ে সম্পর্কে আমাদেরকে জানায়। খবর পেয়ে এএসআই সুজন মাঝিকে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে আমরা বিয়ে বন্ধ করে মেয়ের চাচা, দাদা ও ছেলের ভাইকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসি। পরে তাদের কাছ থেকে বাল্যবিয়ে না দেওয়ার সর্তে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেই। পরবর্তীতে যদি তারা জান্নাত বেগমকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তাদেরকে আইনে আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এ্যাড. সাহাদাত হোসেন শাহিন বলেন, আমরা পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের প্রবাসী মোঃ ইউসুফ এর মেয়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাত বেগমের বিয়ে দেওয়া খবর পাই। পরে কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নেতৃবৃন্দকে সেখানে পাঠিয়ে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এই বিয়ে বন্ধ করি। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে বাল্যবিয়ে বন্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে তাহলে সমাজকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY