ঘিঞ্জি পুরান ঢাকার আরেকটি ভয়াবহ ট্রাজেডির সাক্ষী হলো বিশ্ববাসী। আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিয়েছে অন্তত ৭০টি তাজা প্রাণ। দগ্ধ হয়েছেন আরো অর্ধশত মানুষ। খাবারের হোটেল, বাসাবাড়ির মানুষের পাশাপাশি পুড়ে মরেছে রাস্তার মানুষও। এই ট্রাজেডি কাঁদিয়েছে গোটা দেশের মানুষকে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এগিয়েছে এসেছে। তবে ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে বেগ পেতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। আর তাতেই ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এই ভয়াবহতায় উদ্বেগ ছিল সবার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাতভর উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন।
বুধবার রাতের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন।
তিনি বলেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৪১ জন, তাদের মধ্যে ৩২ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদের কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। আহতদের হাসপাতালে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিহতদের শনাক্তের কাজ চলছে, যাদের শনাক্ত করা যাবে না তাদের জন্য ডিএনএ টেস্টের ব্যবস্থা করা হবে।
‘উদ্ধার কাজ সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো। তিনটি টিম কাজ করবে। আগুন নিভে গেছে। উদ্ধার কাজ সমাপ্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’
ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সরকারের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সারারাত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সারা রাত জেগে উদ্ধার কাজ তদারক করেছেন। এ ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সকালে ঘটনাস্থলে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন হতাহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফায়ারকর্মীদের জন্য চ্যালেঞ্জ
ঘনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, রাস্তা সরু, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ব্যবস্থা না থাকা, বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, বৈদ্যুতিক ওয়ারিং এলোমেলো থাকায় সব মিলিয়ে এখানে একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শাকিল নেওয়াজ বলেন, এটা একটা ভালো নিউজ দিয়েছে, ওয়েক আপ কল দিয়েছে যে তোমরা সতর্ক হও, এর চেয়ে বড় দুর্ঘটনা আসছে।
উচ্ছেদে ছাড় নেই
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দাহ্য কারখানা সরানোর জন্য সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
সাঈদ খোকন বলেন, আমরা কিছুদিন আগে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই’র সঙ্গে বসে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। গত সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তার দু’দিনের মাথায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। আপনাদের বলতে চাই, কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে কঠোর থেকে কঠোরত অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
দশ বছর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতে আগুনে পুড়ে শতাধিক প্রাণহাণির পর কেমিক্যাল গোডাউন সরানো নিয়ে তার ব্যর্থতা রয়েছে কিনা- প্রশ্নে মেয়র বলেন, এই শহরের মানুষ সফলতা-ব্যর্থতা প্রত্যক্ষ করেছেন। এটা জনগণই নির্ধারণ করবে।
‘কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাব যতক্ষণ না সরিয়ে নিতে পারি। কেমিক্যাল গোডাউন এখানে থাকতে দেবো না। কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পুরান ঢাকায় দাহ্য পদার্থের কোনো গোডাউন থাকতে দেবো না।’
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য ও বিভিন্ন সহায়তার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে বলে জানান মেয়র খোকন। যার নম্বর- ৯৫৫৬০১৪। এছাড়া নিকটস্থ ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ও থানায় প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।
মুক্তি চান এলাকাবাসী
পুরান ঢাকার চিকন গলি বা রাস্তায় স্বাভাবিক চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। ফলে তিন রাস্তার মোড়ে আগুনের ঘটনায় রাস্তায় থাকা মানুষগুলোও পুড়ে মরেছে। পুড়ে যাওয়া কয়েখটি প্রাইভেটকার ও রিকশাগুলোই যেন তার প্রমাণ।
আব্দুল বাছেদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আবাসিক এলাকার মধ্যে কোন কারখানা থাকবে এটা হয় না।