সিনহা হত্যা মামলা : ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন দেওয়ার আশাবাদ তদন্ত কমিটির

0
26

ভোলা নিউজ ২৪ ডটকম ।। কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় আগামী ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। আজ রোববার বিকেল ৫টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন।

গত ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশের নিহত হয় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আজ টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে গণশুনানির আয়োজন করে তদন্ত কমিটি। গণশুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

এ সময় সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আজ তদন্তের স্বার্থে গণশুনানি করেছি। এতে ১১ জন সাক্ষ্য দিতে নাম নিবন্ধন করলেও আমরা নয়জনের কাছ থেকে সাক্ষ্য নিয়েছি। অন্য দুজনকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মনে হয়নি। সুত্র এনটিভি অনলাইন

মিজানুর রহমান বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থে যেখানে যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন আমরা সব জায়গায় গিয়েছি। এতে সরকারি-বেসরকারি ৬০ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।’

এদিকে গণশুনানির খবরে সকাল থেকে শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণশুনানি শুরু করার আগে সাক্ষ্য দিতে ১১ জনের নাম নিবন্ধন করা হয়। নিবন্ধন করা এসব সাক্ষীর মধ্যে নয়জনের সাক্ষ্য নেয় তদন্ত কমিটি।

এর আগে গত ১২ আগস্ট সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় গণশুনানি করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ওই দিন তদন্ত কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছিল।

সিনহা রাশেদ নিহতের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত হয় এই তদন্ত কমিটি। এ তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান। সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহা. শাজাহান আলী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ।

এই কমিটিকে প্রথমে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলা হয়। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় আরো সাত দিন বাড়ানো হয়।

কাজ শুরুর পর গত ৪ আগস্ট কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান কক্সবাজারে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তদন্ত কমিটির আনুষ্ঠানিক কাজ আজ থেকে শুরু হয়েছে। কমিটির প্রথম বৈঠকে তদন্তের কর্মপন্থা ঠিক করা হয়েছে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলা হবে। ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে যেটুকু করা দরকার, তদন্ত কমিটি তাই করবে। কমিটি সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করবে।’

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।

পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।

এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব। যাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।

LEAVE A REPLY