সাকিব-মিরাজের জালে ফাঁসল আফগানিস্তান

0
10

কী দারুণ শুরুই না পেয়েছিল আফগানিস্তান! ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানউল্লাহ গুরবাজের উদ্বোধনী জুটিতে আফগানিস্তান ইনিংসের শুরুটা যেমন হয়েছিল, তাতে বড় স্কোরের আভাসই পাওয়া যাচ্ছিল। বাংলাদেশের মূল শক্তি পেসারদের এলোমেলো বোলিং অবশ্য আফগানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু সাকিব আল হাসান এসে আফগান-রথ থামান দুর্দান্ত বোলিংয়ে। ধর্মশালায় সাউদাম্পটন ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

২০১৯ বিশ্বকাপে সাউদাম্পটন আফগানদের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। আজ তিনি ৫ উইকেট নেননি, ৩ উইকেটে নিয়েই থেমেছেন। সাকিবের দেখানো পথে আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও নিয়েছেন ৩ উইকেট। তাতেই ঘুরে গেছে ম্যাচের মোড়। শেষ পর্যন্ত ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানে থেমেছে আফগানদের ইনিংস।

হিসাবটা খুব সহজ ছিল। আফগানদের রানের গতি থামাতে হলে দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আউট করতেই হতো। দুজনের টিকে থাকা মানেই বিপদ। আজ বাংলাদেশ ‘পাওয়ারপ্লে’তে সেটা আরও একবার টের পেয়েছে। দুজনই শুরুতে বাউন্ডারি বের করেছেন বাংলাদেশ দলের পেসারদের আলগা বোলিংয়ের সুবিধা নিয়ে। ‘পাওয়ারপ্লে’তে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় দ্রুত রান আসতে থাকে দুই আফগানের ব্যাট থেকে। বেশির ভাগই ড্রাইভে।

বিপজ্জনক রহমত শাহকে ফিরিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উদ্‌যাপন সাকিবের
বিপজ্জনক রহমত শাহকে ফিরিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উদ্‌যাপন সাকিবেরছবি: এএফপি

পেসারদের বোলিংয়ে দ্রুত রান আসায় অধিনায়ক সাকিবকে ইনিংসের সপ্তম ওভারে বোলিং আসতে হয়। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তিনি ইব্রাহিমকে ভুল শটের ফাঁদে ফেলেন। শর্ট কাভার রেখে মিড উইকেট ও ফাইন লেগ ওপরে এনে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে বল করেন। আর ইব্রাহিম ফাঁকা লেগে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন স্কয়ার লেগে। তানজিদ হাসান সেখানে ইব্রাহিমের সহজ ক্যাচ ধরেন। আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে ২২ রান

ক রেন ইব্রাহিম, আফগানদের রান তখন ৪৭। পাওয়ারপ্লেতে (৫০ রান) বাংলাদেশের একমাত্র উইকেট এটিই।

মাঝের ওভারে সাকিবের দেখানো পথে হেঁটেছেন আরেক বিশেষজ্ঞ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। বাঁহাতি হাশমতউল্লাহ শহীদি ক্রিজে আসতেই তাঁকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। এর আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে দুইবার আউট করেন মিরাজ। আজ সংখ্যাটাকে তিনে নিয়ে গেলেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। ২৫তম ওভারে মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন আফগান অধিনায়ক (৩৮ বলে ১৮)।

রহমানউল্লাহ গুরবাজ ভালো শুরু পেয়ে ফিফটির কাছাকাছি গেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি
রহমানউল্লাহ গুরবাজ ভালো শুরু পেয়ে ফিফটির কাছাকাছি গেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননিছবি: এএফপি

মিরাজের বলে মারতে গিয়ে আউট হতে দেখে রাগে ফুঁসছিলেন অন্য প্রান্তে থাকা গুরবাজ। মাঝের ওভারে এই দুজনের লম্বা সময় টিকে থাকা খুব দরকার ছিল। কারণ, পরের ব্যাটসম্যানরা মেরে খেলার জন্যই পরিচিত, জুটি গড়ার জন্য নয়। কিন্তু ঠিক পরের ওভারে গুরবাজ নিজেই ভুল করে বসেন। মোস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ার বলে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় কাভারের দিকে উড়ে যাওয়া বলটা অনেকটা পথ দৌড়ে এসে তালুবন্দী করেন তানজিদ।

 

৪৭ রান করে থিতু গুরবাজকে আউট করার পর তানজিদকে নিয়ে উল্লাসে মাতে পুরো বাংলাদেশ দল। তাদের উদ্‌যাপনই বলে দেয়, ম্যাচের পরিস্থিতিতে কত বড় উইকেট ছিল এটি। আফগানদের রান তখন ১১২ রানে ৪ উইকেট। খুব দ্রুতই তা ১২৬ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয়। ২৯তম ওভারে সাকিব তাঁর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই আউট করেন বাঁহাতি নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (১৩ বলে ৫ রান)। তাসকিন দীর্ঘ হতে দেননি আরেক নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবীকে (১২ বলে ৬ রান)। এ নিয়ে চতুর্থবার নবীকে আউট করলেন তাসকিন।

তানজিদ হাসানের ক্যাচের পর মিরাজের উদ্‌যাপন। ভালো বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন মিরাজও
তানজিদ হাসানের ক্যাচের পর মিরাজের উদ্‌যাপন। ভালো বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন মিরাজওছবি: এএফপি

আফগান ব্যাটিং–ধস তখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। মিরাজ ও শরীফুল নিজের দিকের উইকেটগুলো ভাগাভাগি করে নিলে আফগান ইনিংস থামে ১৫৬ রানে। ৮ ওভার বল করে মাত্র ৩০ রানে ৩ উইকেট নেওয়া সাকিব ছিলেন বাংলাদেশ ইনিংসের সেরা বোলার। ৯ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ নিয়েছেন মিরাজ। শরীফুলের ২ উইকেট এসেছে ৬.২ ওভারে ৩৪ রান খরচায়। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন ও মোস্তাফিজ।  

LEAVE A REPLY