সন্তানকে নামকরা স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেটঃ নামকরা স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম চলে। সন্তানকে পছন্দের স্কুলে ভর্তি করাতে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু এ যেন সোনার হরিণ! এবারো লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণিতে শিশুদের ভর্তি করা হবে। রাজধানীর ৩৫টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনটি গ্রুপে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। অন্যান্য বছরের মত এবারো শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের জন্য আলাদা ভর্তি নীতিমালা করা হবে।

ব্যাংক কর্মকর্তা উজ্জ্বল আহমেদ তার শিশু কন্যা ফাইজাকে এবার স্কুলে ভর্তি করাবেন। রাজধানীর ভালো একটি স্কুলে তার মেয়েকে ভর্তি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানালেন। তিনি বলেন, প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেয়া হয়। এতে করে শিশুদের ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিংসহ বাড়তি প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ছে না। তবে লটারি পুরোটাই ভাগ্যনির্ভর। আমার মেয়ে মেধাবী। প্রতিযোগিতায় যেকোনো নামকরা স্কুলে সুযোগ পাবে। লটারিতে ভর্তির কারণে এখন কেবল আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কোনো গতি নেই।

অনেক অভিভাবকই সন্তানের স্কুলে ভর্তি অনুযায়ী বছরের শুরুতে বাসা বদল করবেন। এ প্রসঙ্গে পুরান ঢাকার শেখ মুরাদ বলেন, তার ছেলে যে স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে, সেখানে বাসা ভাড়া নেবেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে ৬ বছর বয়সী শিশুদের লটারির মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তথ্যমতে রাজধানীতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিশু রয়েছে প্রায় দুই লাখ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ঢাকায় গড়ে ২ লাখের বেশি শিশু প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিন্তু মাত্র ৪৫-৫০ হাজার শিশু পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারছে।

অন্যদিকে শহরে ব্যাঙের ছাতার মত কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। তিন শতাধিক সরকারি প্রাথমিক স্কুল থাকলেও অভিভাবকরা এসব প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পড়াতে আগ্রহী নন। এর বাইরে ইংরেজি পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। রাজধানীর ৩৮টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল এবং অর্ধশতাধিক নামকরা বেসরকারি স্কুলে অভিভাবকরা ভর্তি মৌসুমে এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের কাছে পছন্দের বিচারে শীর্ষে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল আবেদন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। কোনো প্রতিষ্ঠান হাতে হাতে আবার কোনোটি অনলাইনে ফরম দিচ্ছে। রাজধানীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শনিবার ২৫ অক্টোবর থেকে আবেদন নিচ্ছে। আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইন আবেদন করা যাবে। আবেদন বাবদ ২শ’ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণির আবেদন শেষে উš§ুক্ত লটারির আয়োজন করা হবে। আবেদন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য কলেজের ওয়েবসাইট (http://www.vnsc.edu.bd) থেকে জানা যাবে।

ঢাকা মহানগরীতে ৩টি ফিডার শাখাসহ ৩৮টি সরকারি এবং ৪৫৬টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে এবার রাজধানীর ভালো স্কুলগুলোতে সব শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে না। এবার ১৬টি সরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। অন্যান্য শ্রেণিতে ১০ হাজার ২৩৭ জন ভর্তি করবে। গতবছর সরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে সাড়ে ৯ হাজার আসনের বিপরিতে ৭২ হাজার ৯০১ শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। জানা গেছে, এবারো সব সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আগের দু’বছরের মতোই এবার এসব স্কুলে মোট আসনের ৫৯ শতাংশ কোটায় ভর্তির প্রস্তাব আছে। এগুলো হচ্ছে-‘এলাকা’, ‘সরকারি প্রাইমারি স্কুল’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘প্রতিবন্ধী’ ও ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী’ কোটা।
এদিকে গতকাল সোমবার প্রথম শ্রেণিতে শিশুদের ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চলমান লটারি প্রথা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষিত দুই শতাংশ কোটা বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ। এ রিটে শিক্ষা সচিব, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ চার জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

সরকারি ছাড়া রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল, সেন্ট ফ্রান্সিস গালর্স হাইস্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আ. রউফ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিএফ শাহীন স্কুল, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, হলিক্রস উচ্চ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলসহ অর্ধশত স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকরা রীতিমত যুদ্ধে নেমে পড়েন।

জানা গেছে, রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৫ নভেম্বরের পর ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিল শাখার দিবা শিফটে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং প্রভাতী ও দিবা শিফটের চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করবে না। এ ছাড়া বনশ্রী শাখার দিবা শিফটে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম এবং প্রভাতী শিফটে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করবে না। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণিতে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি নেয়া হবে। মোহাম্মদপুরের সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করবে। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে দিবা ও প্রভাতী উভয় শিফটে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে যথাক্রমে ১০০ ও ৫০ জন করে ভর্তি করা হবে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উভয় শিফটে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ৫০ জন করে ভর্তি করবে। মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সীমিত আসনে ভর্তি করা হবে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩ নভেম্বর নার্সারি-কেজিসহ প্রাথমিক স্তরের ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণিতেই কম-বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে বাংলা ভার্সনে প্রাক-প্রাথমিক ও ইংরেজি ভার্সনে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি নেয়া হবে। ইংরেজি মিডিয়ামে নার্সারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। ভর্তির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে (www.wlfsc.edu.bd) পাওয়া যাবে।

তেজগাঁওয়ের বিএএফ শাহীন কলেজে কেজি স্তরে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফরম বিতরণ ও জমা নেয়া শুরু হয়েছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম কেনা যাবে। জমা দেয়া যাবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। ফরমের দাম ২শ’ টাকা। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যেসব শিশুর বয়স ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে কেবল তারাই আবেদন করতে পারবে। কুর্মিটোলার বিএএফ শাহীন কলেজে কেজি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে শিক্ষার্থী ভর্তির ফরম ২৫ অক্টোবর বিতরণ শুরু হয়েছে। চলবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। ২০০ টাকার বিনিময়ে কিনতে হবে ফরম। ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম জমা দেয়া যাবে। কেজি ও প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। অন্যান্য স্তরে শিক্ষার্থী নির্বাচিত হবে পরীক্ষার মাধ্যমে।

ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবার প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তির ফরম বিতরণ শুরু হবে ১১ নভেম্বর। ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুলে ১৬ নভেম্বর ফরম বিতরণ শুরু হবে। এ প্রতিষ্ঠানে ১ম, ২য়, ৩য়, ৫ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। নার্সারি ও কেজি স্তরেও ছাত্রী ভর্তি করা হবে।