শিক্ষার্থী নেই,নেয়া হচ্ছে সরকারি বেতন-ভাতা- ২০২ মাদরাসা বন্ধ

0
439

ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : বছরের পর বছর শিক্ষার্থী পায় না। পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিলেও একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারে না। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনে সরকারের কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। শিক্ষার্থী না পাওয়াসহ নানা অভিযোগে সারাদেশে ২০২টি মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। চলতি বছর থেকে এসব মাদরাসা আর কোনো শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এ ছাড়া এবারের দাখিল পরীক্ষায় একজনও পাস করেনি এমন ৯৬টি মাদরাসাকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের জবাব পাওয়ার পর পরই তাদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ মে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কাছে এর জবাব চাওয়া হয়। শতভাগ ফেল করা মাদরাসার মধ্যে ১৯টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাগুরার রিজিয়া রুবিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার ২০ ছাত্রী দাখিল পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে। এমপিওভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটিতে ১৪ জন শিক্ষক ও তিন কর্মচারী রয়েছেন। নামসর্বস্ব এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা বেতন-ভাতা প্রদান করছে। এ ছাড়া গাজীপুর কাপাসিয়ায় বিলাসী মদিনাতুল উলুম বালিকা আলিম মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়ায় খামা বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইল ঘাটাইলে বখশিয়া দাখিল মাদরাসা, নবাবগঞ্জের উপজেলা সদরে সাজাহানপুর ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা, নওগা পত্মীতালয় বড় বিদিরপুর দাখিল মাদরাসা, ছোট মাহারানদি টেকনিক্যাল দাখিল মাদরাসা, বগুড়ায় ধুনট উপজেলায় বেড়েবাড়ির সিনিয়র আলীম মাদরাসা, শিবগঞ্জে মেদিনীপারা মোজাদ্দিদিয়া দাখিল মাদরাসা, দিনাজপুর পার্বতীপুরে ঝিনাইকুরি ওসমানিয়া দাখিল মাদরাসা, যশোর কেশবপুরে প্রতাপপুর দাখিল মাদরাসা, সাতবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা, ইমাননগর এম বি জি দাখিল মাদরাসা, বরিশাল উজিরপুরে মুন্সির তালুক বালিকা আলিম মাদরাসা, পিরোজপুর নেছারবাদে নেসারবাদ মুজাদ্দেদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, পুটয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, পুটয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, পটুয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চাতিলা সেফালিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা। এমপিওবিহীন বাকি ৭৭টি মাদরাসার কোনোটি সরকারি অনুমোদিত ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান।

অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ মাদরাসা অনুমোদন স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রাপ্যতা না থাকলেও নানাভাবে তদবির করে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তা এমওপিওভুক্ত করা হয়েছে। সৃষ্ট পদ অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৬ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই বা একজন শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে কেউ পাস না করায় শতভাগ ফেলের সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকদের সংখ্যাই বেশি রয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা বলেন, এসব মাদরাসায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম নেই। কোনো শিক্ষার্থী গত কয়েক বছর পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করছে না। এই মাদরাসাগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। অনেকে এর জবাব দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি। তিনি বলেন, এ ধরনের ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।

এসব মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী স্বীকৃত কোনো মাদরাসায় রেজিস্ট্রেশন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শতভাগ ফেল করা ৯৬ মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একজন ছাত্র পাস করবে না এমন প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও স্বীকৃতি বাতিল ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সব সুবিধা বন্ধের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে বোর্ড।

মাদরাসা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ হওয়া মাদরাসার মধ্যে বাগেরহাটে ৪টি, বরগুনায় ৫টি, বরিশালে ২টি, ভোলাতে ৬টি, বগুড়ায় ৪টি, বাহ্মণবাড়িয়ায় ১টি, চাঁদপুরে ১টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২টি, চট্টগ্রামে ১টি, কুমিল্লায় ৩টি, দিনাজপুরে ১৯টি, গাইবান্ধায় ১২টি, যশোরে ৫টি, ঝিনাইদহে ১টি, জয়পুরহাটে ২টি, খাগড়াছড়িতে ১টি, খুলনায় ৪টি, কিশোরগঞ্জে ১টি, কুড়িগ্রামে ১টি, কুষ্টিয়ায় ৩টি, লালমনিরহাটে ৫টি, মেহেরপুরে ১টি, ময়মনসিংহে ৪টি, নওগাঁয় ১টি, নাটোরে ১১টি, নড়াইলে ১টি, নেত্রকোনায় ১টি, নীলফামারীতে ৩টি, নোয়াখালীতে ১টি, পাবনা জেলায় ৫টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, পটুয়াখালীতে ৭টি, রাজবাড়ীতে ২টি, রাজশাহীতে ১১টি, রংপুরে ৯টি, সাতক্ষীরায় ৫টি, সিরাজগঞ্জে ১০টি, সিলেটে ১টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৬টি মাদরাসা রয়েছে।

মাদরাসা বোর্ড বলছে, এসব মাদরাসায় দাখিল স্তরের শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী বা কেন্দ্রস্থিত মাদরাসায় রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা করতে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের দাখিল পাবলিক পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। এর কারণ জানতে চেয়ে এসব মাদরাসা প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও অনেকে এর জবাব দেয়নি। আর যারা জবাব দিয়েছে তাতে বোর্ড সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এ কারণে এসব মাদরাসার অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ অনলাইনে পাসওয়ার্ড, মাদরাসা কোড নম্বর ও ইআইআইএন নম্বর বন্ধ করে দেয়া হলো।

LEAVE A REPLY