চশমা হিলের বাসভবনের আঙিনায় পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে স্বাগত জানান প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী ও কনিষ্ঠ ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী। এরপর ঘরে ঢোকার সময় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, মহিউদ্দিন চৌধুরীর একটি কক্ষে প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছবি ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তোলা তাঁর অনেক ছবি ছিল। ফ্রেমে বাঁধানো ছবিগুলোর দিকে তাকানোর সময় প্রধানমন্ত্রীকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা গেছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কক্ষে প্রবেশ করেন, যেখানে পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনও ছিলেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন-সংগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনীতিতে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। মহিউদ্দিন চৌধুরীও চলে গেছেন। কিন্তু তিনি সাধারণ মানুষের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন বলে সবাইকে তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখছেন।
মোশাররফ হোসেন আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন চৌধুরীর বসার ঘরে চলে যান। সেখানে অপেক্ষমাণ নিহত ১০ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন তিনি। এ সময় প্রতি পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বহন এবং চাকরিযোগ্য কেউ থাকলে যথাযথভাবে আবেদন করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী তাঁর বাবার মৃত্যুতে সান্ত্বনা দিতে আসা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে গেছেন। অনেক নির্যাতন ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তিনি নীতিচ্যুত হননি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।’
নিহত ঝন্টু দাশের স্ত্রী লাকী দাশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেয়ে অভিভূত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কঠিন সময়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের খোঁজ নিয়েছেন, টাকা দিয়েছেন। আমার সন্তানের পড়াশোনার খরচ এবং চাকরি করার উপযুক্ত থাকলে চাকরি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’
মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি উপলক্ষে গত ১৮ ডিসেম্বর একযোগে নগরের ১৪টি কনভেনশন ও কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করা হয়। রীমা কনভেনশন সেন্টার বরাদ্দ ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য। ওই দিন রীমার পশ্চিম দিকের ফটক খুলে দেওয়া হলে হুড়োহুড়ি করে ঢোকার সময় পদদলিত হয়ে ১০ জন মারা যান। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ভালোবেসে বেশির ভাগ মানুষ সেদিন কমিউনিটি ও কনভেনশন সেন্টারে উপস্থিত হয়েছিলেন।
১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যান।
প্রধানমন্ত্রীর চশমা হিলের বাসভবনে আগমন উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে সাধারণ মানুষের চলাফেরা এবং গাড়ি চলাচল সীমিত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়। প্রধানমন্ত্রী গতকাল নেভাল একাডেমিতে কুচকাওয়াজ দেখে সাগরপাড়ে নির্মাণাধীন আউটার রিং রোড দিয়ে ফৌজদারহাট ও জাকির হোসেন সড়ক হয়ে চশমা হিলে যান। একই পথ দিয়ে তিনি আবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে উড়োজাহাজে চড়ে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান।