ভোলায় যৌতুকের দায়ে গৃহবধুকে আটকে রেখে জ্বলন্ত লাকরীর ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

0
605

ইকরামুল আলম/ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট॥ ভোলায় যৌতুকের দাবিতে মরিয়ম বিবি নামের এক গৃহবধুকে ১৫ দিন ধরে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে মারধর ও গরম লাকরীর ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের কোড়ার হাট এলাকায় ফুফা শ্বশুর বাড়িতে আটকে রেখে গৃহবধু মরিয়মের ফুফু শ্বাশুরী শাফিয়া, ফুফা শ্বশুর হিরণ ও দেবর আশিক তাকে মারধর ও গরম লাকরীর ছ্যাকা দিয়ে শিকল দিয়ে বেধে রাখে বলে ওই গৃহবধু এ সব অভিযোগ করেন। আহত গৃহবধু বর্তমানে ভোলা সদর হাসপাতালের মহিলা সার্জারী ওয়ার্ডের ৬৫ নং কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গৃহবধু মরিয়ম বিবি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের দরিরাম শংকর এলাকার মো. শাহাদাতের ছেলে বিল্লালের সাথে দুই লাখ টাকা দেনমহরে সামাজিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের সময় বিল্লালকে তার বাবা বেলায়েত পাটওয়ারী একটি স্বর্ণের চেইন ও আংটি দেয়। কিন্তু এর পরেও বিল্লাল মরিয়মের পরিবারের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দুই লাখ টাকা না দিলে মরিয়মকে বাবার বাড়িতে থেকে উঠিয়ে নিবে না বলে জানায় বিল্লাল। এটি নিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিদের দিয়ে বিল্লালের পরিবারের সাথে শালিস মিমাংসায় বসেও কোনো লাভ হয়নি। এর মধ্য দিয়ে প্রায় এক বছর চলে যায়। পরে মরিয়মের পরিবার কোনো উপায় না দেখে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ৪ তারিখে আদালতে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করেন। যার সি.আর নং ৫৮/২০১৮। মামলা দায়ের করার দুই মাস পর বিল্লালের পরিবার স্থানীয় গন্যমান্যদের মাধ্যমে মরিয়মকে উঠিয়ে নিতে রাজি হয়। পরে ধনিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. নিজামসহ স্থানীয় গন্যমান্যদের সামনে বিল্লাল ও তার পরিবার কোনো যৌতুক দাবি করবে না ও মেয়ে পক্ষের সকল শর্ত মেনে নিবে মর্মে স্টাম্পে লিখিত দিয়ে মরিয়মকে উঠিয়ে নেয়।
এর পরেই শুরু হয় মরিয়মের উপর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন। মরিয়ম শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর দেবর মো. আসিক মরিয়মকে অকত্থ ভাষায় গালমন্দ, মেরে ফেলা ও শ্লীতাহানির হুমকি দিতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে কারনে অকারনে তার শ্বাশুরী বিবি আয়েশা ও দেবর আসিক মিলে মরিয়মকে গালমন্দ ও মারধর করত। স্বামী বিল্লাল তাদেরকে কিছুই বলতো না। উঠিয়ে নেয়ার এক মাস ১৩ দিন পর মরিয়মের শ্বশুর শাহাদাত মরিয়মকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে। মরিয়ম বাবার বাড়ি আসার দুই দিন পর বিল্লালকে যৌতুক মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে। এর পর থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন মরিয়মকে দোষারোপ করতে থাকে। তার পরও মরিয়ম স্বামী বিল্লালকে দুই দিন পরে জামিনে মুক্ত করে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে দেড় মাস থাকার পর বিল্লাল তাদের বাড়িতে চলে যায়। এর পর থেকে বিল্লাল মরিয়মরে সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বিল্লালের পরিবার তাকে গোপন করে রেখে মরিয়মের পরিবারকে দোষারোপ করতে থাকে। এর কয়েক দিন পর মরিয়মের পরিবার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করে। আদলত ধনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. এমদাদ হোসেন কবিরেকে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেয়।
মরিয়ম আরও জানায়, গত কুরবানীর ঈদের ১০/১৫ দিন আগে ধনিয়া ইউনিয়নের কোড়ার হাট এলাকায় তার ফুফা শ্বশুর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ফুফু শ্বাশুরী শাফিয়া বেগম মরিয়মকে বাসায় ডেকে নেয়। পরে তাকে সেখানে স্বামী বিল্লাল আসবে বলে বাসার ভিতর আকটে রাখে। এরকম করে প্রায় ১৫ দিন ধরে সেখানে মরিয়মকে আটকে রাখে তারা। ঈদের দুই দিন আগে বিল্লাল ওই বাসায় আসে। এবং মরিয়মকে মামলা তুলে নিতে বাসার সবাই চাপ প্রয়োগ করে। মরিয়ম পরিবারের অনুমিত ছাড়া মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে ঈদের দিন বিকেলে স্বামী বিল্লাল তাকে মারধর করে। ঈদের পর দিন তার স্বামী বাসার বাহিরে গেলে ফুফা শ্বশুর হিরন, শ্বাশুরী শাফিয়া ও দেবর আসিক মিলে তাকে বেধম মারধর করে এবং জ্বলন্ত লাকরী দিয়ে তার দুই হাত পুড়িয়ে দেয়। পরে স্বামী বাড়িতে আসলে মরিয়ম স্বামীকে বিষয়টি জানালে সেও এব্যাপারে কিছুই বলে নাই। ওই রাতে তারা মরিয়মকে মেরে ফেলার প্লান করে। এ কথা জানতে পেরে রাতের বেলা মরিয়ম ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিষয়টি তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. এমদাদ হোসেন কবিরকে জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আসিককে তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন করলেও সে ফোন রিসিভ করেনি।
তবে ফুফা শ্বশুর মো. হিরন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মরিয়ম ঈদের দুই দিন আগে বিল্লালসহ আমাদের বাড়িতে আসে। এখানে তারা কয়েক দিন ছিলো। তাকে কেউ মারধর করে নাই।
ধনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. এমদাদ হোসেন কবির বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। মেয়ে পক্ষ আদালতে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করেছে। আদালত আমার কাছে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে। আমি তদন্তপূর্বক রিপোর্ট জমা দিবো।

LEAVE A REPLY