আদিল হোসেন তপু/ ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট॥ একটি রোগা শিশু, দরিদ্র শিশু যার সারা গায়েই যখম। নির্মম নির্যাতনে ফুলে উঠা চোখগুলো দেখলে যেকারো হৃদয় ক্ষরন হবে। তার পিঠে সহ সারা গায়ে গরম খুন্তি দিয়ে সেকা দেওয়ার দাগ। রয়েছে মাথা ফাটানোর দাগও। অভাবের তারনায় দুবেলো দু মুঠো ভাতের জন্য ৯বছর বয়েসেই মাত্র ৮শত টাকা বেতনে যার মা তাকে বসা বাড়িতে কাজে দিয়েছিলো ভোলার মনপুরায়। কিন্তু তাকে ফিরতে হলো শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য দাগ,ক্ষত ও যন্ত্রনা নিয়ে। এমই হৃদয় বিদায়ক ঘটনা ঘটেছে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাদঁপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ৯ বছরের নিষ্পাপ সুরমার সাথে।
গুরুতর অবস্থায় গৃহকর্মী সুরমা বেগম এখন ভোলা সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুরমার পরিবারের পক্ষ থেকে ভোলার মনপুরা থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গছে।
গত বৃহস্পতিবার (০৯ নভেম্বর) গুরুত্বর অবস্থায় নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুরমা (৯)কে মুমুর্ষ অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সুরমা ভোলা সদর হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে একস্ট্রা ৮নং বেডে মানুষিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে।
জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলার চাদঁপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ কেয়ামুল্যাহ গ্রামের মুনাফ আলী বাড়ীর মৃত ফজলুল রহমানের মেয়ে সুরমা। দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থেকে ৩ বছর আগে মারা যান ফজলুর রহমান। ফজলুর রহমান জীবিত থাকাকালীন সময়ে পরিবারের ভরণপোষনের জন্য আশেপাশের বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালাতো স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর কয়েক মাস পর আনোয়ারা বেগম পুনরায় অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মা আনোয়ারা বেগমের বিয়ের পর গত ১০ মাস আগে মেয়ে সুরমাকে পড়াবে-খাওয়াবে বলে পাশের বাড়ীর হাজী দিলাওয়াত মাস্টার তার মনপুরার উপজেলার বাসিন্দা মেয়ে মিনারা বেগম (মিনু) এর বাসায় কাজে দেয়। মিনারা বেগমের বাসায় কাজ করার পর থেকেই সুরমার সাথে তার মা আনোয়ারা বেগমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার (০৯ নভেম্বর) সকালে মা আনোয়ারা বেগম মেয়ে সুরমার মনপুরা থেকে তজুমদ্দিন আসার খবর পেয়ে দিলাওয়াত হাজীর বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে মর্মান্তিক অবস্থায় মেয়ে সুরমাকে দেখতে পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মা আনোয়ারা বেগম। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় সুরমাকে প্রথমে তজুমদ্দিন হাসপাতালে ও পরে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সুরমা বেগম ভোলা সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৮নং বেডে মুমুর্ষ অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
ভোলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সুরমার সারা শরীরে আঘাতের চিহ।গরম স্টিলের তালাসী দিয়ে সুরমার মাথা, মুখ সহ বিভিন্ন অঙ্গপতঙ্গে আঘাতের দাগ দেখা যায়। যার অধিকাংশই ক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও তার শরীরে অসংখ্য দাগ রয়েছে যা কয়েক মাস আগের বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সুরমাকে জিজ্ঞাসা করলে সে ভারসাম্যহীন অবস্থায় জানায়, আমারে মিনু কাকি মারছে। আমারে গরম তালাসি দিয়া ছ্যাক দিছে। আগেও পিডাই তো। আমার সারা শরীরে পিডাইছে..। এসব কথা বলে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন সুরমা।
সুরমার মা আনোয়ারা বেগম বলেন, মায়ারে হাজী সায়েবের হাতে দিছি। তিনি তার মায়ার বাসায় পাডাইছে। আমার মায়ায় এমন ছিলো না। ওর সারা গাও পিডাইছে। আমি এইডার বিচার চাই।
মনপুরা থানার ওসি ( ভারপ্রাপ্ত) শাহিন খান ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট কে জানান, গৃহকর্মী সুরমাকে মারধরের ঘটনাটি আমরা শুনেছে এ ব্যাপারে আমরা দ্রুত ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
ভোলা সদর হাসপালের আরএমও ডা. তৈয়বুর রহমান ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট কে বলেন আমরা শিশুটিকে পর্যবেক্ষনে রেখেছি।তার চিকিৎসা চলছে তবে তার শরীরে আনেক ক্ষত দাগ দেখা গেছে। এ সকল দাগ আনেক দীর্ঘদিনের এমনটা মনে হচ্ছে যে ওকে প্রায় এ ধরনের নির্যাতন করা হতো। এবং সেখানে ঔষদ ও দেয়া হতো না। যার ফলে ওর শরীরের ঘাগুলো এখন ওর যন্ত্রনার কারন হয়ে দাড়িয়েছে।