ভোটের পরিবেশ তৈরিতে বিএনপির ৪ দাবি

0
317

ভোলা নিউজ ২৪ডটনেটঃ  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের কাছে চারটি দাবি তুলে ধরেছে দলটি। দাবিগুলো হলো নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। দলটি বলছে, এই দাবিগুলো মানা না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ নির্বাচন হতে দেবে না।

বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই চারটি দাবির কথা উল্লেখ করেন।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এ দেশের জনগণ বুকের রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আবারও বুকের রক্ত দিতে হবে, তবুও তাঁকে মুক্ত করতে হবে।’

গত ২০ জুলাই ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি। প্রায় দেড় মাস পর আবারও সমাবেশ করল দলটি। সমাবেশে দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন।

আজকের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বুকে সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে আজ বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, দেশবাসী, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্ত করতে হবে।

জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকামী সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হোন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করুন। কারণ খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন, এই সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য। তাই সবাই ভেদাভেদ ভুলে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে এই দানবকে পরাজিত করতে হবে। ইতিমধ্যে যাঁরা ঐক্য গড়েছেন, তাঁদের স্বাগত। সারা দেশের সবাইকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাগারে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

নয়া পল্টনে জনসভায় মঞ্চে নেতারা। সামনে বিপুল সংখ্যক কর্মী। ছবি: প্রথম আলোনয়া পল্টনে জনসভায় মঞ্চে নেতারা।

দেশে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারেক রহমানকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দিতে চাইছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি তাঁরা আগেই রায় লিখে রেখেছেন? মনে রাখবেন, কোনো ষড়যন্ত্রের রায় দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’ এ সময় সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় আপনাদের নিতে হবে। দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে।’

খালেদার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আজকের জনসভার প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করেছিল। জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক শূন্যতা দূর করতে বিএনপি গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ তৈরি করে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়েছিল, আর জিয়াউর রহমান দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। সে জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভয় পায়, জিয়া পরিবারকে ভয় পায়।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে ‘অন্যায়ভাবে’ কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। কারণ সরকার খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ভয় পায়। সরকার চায় খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করতে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে না। তাই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে না।

নির্বাচনের বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সব দলের সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বিএনপির প্রবীণ নেতা মোশাররফ বলেন, ‘আপনারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অতীতের কথা ভুলে নিরপেক্ষ হয়ে যান। জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন। কোনো একটি দলের হয়ে কাজ করবেন না।’

আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদার মুক্তি সম্ভব না

জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য ২৪ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। আজ আবার যুদ্ধ করছি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। এ লড়াই জনগণের ভোটাধিকার ও বাগস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার লড়াই।’ তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বুঝে ফেলেছে আওয়ামী লীগ কী ধরনের রাজনৈতিক দল। সরকার তরুণ প্রজন্মকে দেওয়া কথা রাখেনি। এ কারণে তরুণ প্রজন্ম ভোট দিয়ে আর কখনো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে না।’

বিএনপির জনসভায় আসা নেতা-কর্মীদের একাংশ। ছবি: প্রথম আলো

বুলগেরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার বিষয় তুলে ধরে মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তাই একমাত্র পথ হলো রাজপথ, সে জন্য নেতা-কর্মীদের তৈরি হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

জনসভায় বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভোটারবিহীন বর্তমান সরকার আবারও চায় একটি নীলনকশার নির্বাচন করতে। সে জন্য মিথ্যা মামলা, গুম-খুনের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এসবে যখন বিএনপিকে দমাতে পারেনি, তখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। সেটি হলো, ইভিএম। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচন হবে, তবে সেই নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারে। ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে ভোটাধিকার হরণ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, আজ এ দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বধ্য করবে।

জনসভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া জনসভা শুরুর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ছাড়াও ঢাকার আশপাশ থেকে নেতা-কর্মীরা জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY