ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেটঃ বাবাকে হত্যা করতে দেখে ফেলায় খুন করা হয় মেয়ে নুসরাতকে। এতে সম্মতি ছিল মা আরজিনার। শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) মোস্তাক আহমেদ এ তথ্য জানান। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতারকৃত স্ত্রী আরজিনা বেগম। অন্যদিকে তার কথিত প্রেমিক শাহীন মল্লিককে ৪ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, আরজিনা বেগম ও জামিল ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড্ডায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। একই বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন শাহীন। ওই বাড়ির প্রথম তলায় থাকতো আরজিনারা। আর তৃতীয় তলায় থাকতেন শাহীন ও তার স্ত্রী মাসুমা। মাসুমা সারাদিন অন্যের বাসায় কাজ করতেন। জামিল ছিলেন ড্রাইভার। আরজিনা বেগম ও শাহীন দু’জনই সারাদিন বাসায় থাকতেন। সে সুযোগে তাদের মধ্যে নানা কারণে নৈকট্য হয়। কয়েকদিন পর ওই বাড়ি ছেড়ে জামিল ও আরজিনা ময়নারবাগে বাসা ভাড়া নেয়। নতুন বাসায় এসে শাহীনকে কাছে পেতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেন আরজিনা। সংসারের খরচ কমানোর কথা বলে শাহীনের পরিবারকে সাবলেট দেয়ার পরামর্শ দেন স্বামী জামিলকে। পূর্বপরিচিত হওয়ায় শাহীন ও তার স্ত্রীকে ৩ হাজার টাকায় সাবলেট দেন জামিল। নতুন বাসায় এসে আরজিনা ও শাহীনের সম্পর্ক আরও গভীর হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে আরজিনা জামিলকে তালাক দিয়ে শাহীনের কাছে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে শাহীন তাকে তালাক না দেয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে দুইজন মিলে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত বুধবার রাতে একই বিছানায় ঘুমান জামিল, আরজিনা, নুসরাত ও তার ছোট ভাই। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আরজিনা ঘরের দরজা খুলে রেখে ঘুমান। পরে শাহীন বাড়ির নিচ থেকে একটি কাঠের টুকরা নিয়ে ঘরে ঢুকে জামিলের মাথায় আঘাত করেন। প্রথম আঘাতের পর জামিল উঠে যায় এবং জিজ্ঞেস করে কেন তাকে আঘাত করা হলো। এরপর শাহীন কোনো কথা না বলে আরও কয়েকবার আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। এ সময় ঘুম থেকে জেগে যায় মেয়ে নুসরাত। সে শাহীনের কাছে বাবাকে কেন হত্যা করা হলো জানতে চায় এবং চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহীন। তবে প্রথমবার এতে আরজিনা সম্মতি দেননি। পরবর্তীতে বিপদে পড়ার আশঙ্কায় মেয়েকে হত্যার সম্মতি দেন আরজিনা। এরপর নুসরাতকে বিছানায় গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করেন শাহীন। তখন নুসরাত চিৎকার করায় মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়।
জামিল ও নুসরাতকে হত্যার পর ছাদে শাহীন ও আরজিনা গল্প সাজাতে থাকেন। একপর্যায় তারা সিদ্ধান্ত নেন কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে ডাকাতরা জামিল ও তার মেয়েকে হত্যা করেছে। এছাড়াও ডাকাতরা যাওয়ার সময় তাকে ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করবে আরজিনা। এই নাটক বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য সারা রাত ছাদের সিঁড়ির সামনে মুখ গোমড়া করে বসে ছিলেন আরজিনা। পরদিন সকালেও পুলিশ গিয়ে তাকে সিঁড়ির সামনে বসে থাকতে দেখে। আর ওই রাতেই স্ত্রী মাসুমাকে নিয়ে খুলনায় পালিয়ে যান শাহীন।
ডিসি জানান, এ ঘটনায় তদন্তে আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা শিশুও কিছু তথ্য দিয়েছে। সব মিলে এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই দুইজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে শনিবার আসামিদের ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। অপরদিকে শাহীনের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের ৩০৬/পাঠানভিলার তৃতীয় তলায় ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বাবা জামিল শেখ (৩৮) ও মেয়ে নুসরাত জাহানের (৯) মরদেহ।