বরিশাল পাউবো’র বিরুদ্ধে সরকারি জমি ইজারা দেয়ার অভিযোগ

0
300

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট।। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিনে থাকা প্রায় ৮ একর জমি অবৈধভাবে ইজারা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো প্রকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই ২০১৫ সালে তিন বছরের জন্য ১৬ ব্যক্তির কাছে ওই জমি ইজারা দেয়া হয়। এর বিনিময়ে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সার্ভেয়ার মোটা অংকের ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ। দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করছেন বলে জানান তিনি।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে প্রায় দুই বছর পাউবোর রাজস্ব শাখার সার্ভেয়ার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন কার্য-সহকারী শরিফুল ইসলাম শাহিন। একই সময় পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক। তারা দুজন দায়িত্বে থাকাবস্থায় ২০১৫ সালে নভেম্বর মাসে ১৬ জন ব্যক্তিকে মোট ৭৯৯.৭৫ শতাংশ জমি অবৈধভাবে ইজারা দেন। কিন্তু এর রাজস্ব জমা হয়নি সরকারি কোষাগারে। ২০১৬ সালে ওই জমির বিবরণি পাঠানো হয় পাউবো সদর দপ্তরে। তখন জমির সাথে সমানজস্যতা না থাকায় অনিয়মটি ধরা পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব জমির মধ্যে নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড সাগরদী কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে জেলা পরিষদ কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত ১.৭৫ শতাক জমির ইজারা গ্রহণ করেন নির্মলেন্দু রায় বাবু নামের এক ব্যবসায়ী। পূর্ব পাশে পাউবোর সীমানা প্রাচীর ঘেষে ০.০৫ শতক জমির ইজারা দেয়া হয় ইউসুফ আলী মিলন নামের একজন সরকারি কর্মচারীকে। এই দুই জমিতেই অবৈধভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১.৭৫ শতক জমির উপর দ্বিতল ভবন এবং অপর ০.০৫ শতক জমিতে একতলা টিন সেট ভবন তৈরি করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবৈধ ভবন ও স্থাপনা অপসারণের জন্য জেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট লিজ দাতাদের একাধিকবার নোটিশ দেয়া হয়।

তাছাড়া এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজিজুল হককে নির্দেশনা প্রদান করেন পাউবোর পওর সার্কেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামাণিক। কিন্তু তার নির্দেশনার গুরুত্ব দেননি নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজুল হক। এসব কারণে আজিজুল হককে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি সার্ভেয়ারের পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয় কার্য-সহকারী শরিফুল ইসলাম শাহিনকে। তার আগে দুর্নীতির প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৩০ জুন বরিশাল পাউবোর অধীনে থাকা সব জমির নতুন লিজ প্রদান ও পূর্বের লিজ গ্রহীতাদের নবায়ন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় পাউবো সদর দপ্তর। এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পাওয়া মো. বাবুল আখতার পাউবোর ইজারা চুক্তি ভঙ্গ করে ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় ইজারা বাতিলের নোটিশ জারি করেন। কিন্তু তারপরেও ১৬ জন ইজারাদাতার দখল কার্যক্রমে বহাল রয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তাদের ইজারা মেয়াদ শেষ হলেও এখনো সবাই বহাল রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসলে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক ও সার্ভেয়ার শরিফুল ইসলাম শাহিনকে শোকজ করা হয়। পাশাপাশি ২০১৭ সালে তাদের কাছে ৭৯৯.৭৫ শতাংশ ইজারাকৃত জমির রাজস্ব আদায়ের তথ্য দাখিলের নির্দেশ দেন বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ। কিন্তু তারা তা দিতে ব্যর্থ হন। এভাবে সরকারি জমি অবৈধভাবে লিজ দেওয়ার বিষয়টি ঢাকা ও স্থানীয় পর্যায়ে তিন দফা তদন্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি দুজনকে শোকজ করে। এদের মধ্যে সার্ভেয়ার শরিফুল ইসলাম শাহিন ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্পন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শৃঙ্খলা পরিদপ্তরের পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন ২০১২ সালে ১০ জানুয়ারি টেন্ডার কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ১৬ জন ব্যক্তিকে ৭৯৯.৭৫ শতাংশ জমি ইজারা দেয়া হয়। ২০১৫ সালে ইজারা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি ভুলবসত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেই সাথে ইজারার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, অবৈধভাবে ইজারা গ্রহণের বিষয়টি ধামা চাপা দিতেই ২০১২ সাল টেনে আনা হয়েছে। তাছাড়া যে ১৬ জনকে ইজারা প্রদান করা হয়েছে পাউবোর রেজিস্ট্রার অনুযায়ী চারজন লিজ গ্রহীতা এখনো ইজারার জামানাতের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। এরা হলেন- বাকেরগঞ্জের বামনীকাঠির মো. জসিম উদ্দিন, হিজলা উপজেলার মোল্লার হাটের হযরত আলী বেপারী, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার প্রদীপ কুমার ও একই উপজেলার অরুন চন্দ্র কর। অথচ ২০১২ সালের যে বিবরণি দাখিল করা হয়েছে তাতে ওই চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, এসব ঘটনা আমার দায়িত্বকালিন সময় ঘটেনি। তবে অভিযোগের বিষয়টি এখনো তদন্ত হচ্ছে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সদর দপ্তরে এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটি এর মধ্যে বরিশালে এসে সরেজমিন তদন্ত করেছে।  আবারো তাদের বরিশালে তদন্তে আসার কথা রয়েছে।

LEAVE A REPLY