ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট।। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গম পাচারের ছবি তুলতে গিয়ে কারারক্ষীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো অফিসের ফটো সংবাদিক শামীম আহমেদ। শনিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে কারা ফটোকের মধ্যে আটকে তাকে নির্যাতন করা হয়। শামীম আহমেদকে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচ কারারক্ষীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি প্রিজন তওহিদুল ইসলাম।
বরখাস্ত হওয়া কারারক্ষীরা হলেন- উজ্জ্বল মিয়া, আবুল খায়ের, আবু বক্কর সিদ্দিক খোকন, কাওছার ও সাঈদ। এছাড়া চোরাই গম ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় গাজী স্টোর নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক সহ দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন ভ্যান চালক।
শামীম আহমেদ বলেন, কারাগার থেকে রেশনের গম চোরাইভাবে বাইরে পাচার করা হচ্ছিলো। এসময় কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ দুই ভ্যান গম আটক করে। এ নিয়ে পুলিশ ও কারারক্ষীদের মধ্যে টানা হেঁচড়া চলছিলো। তখন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে পুলিশ ও কারারক্ষীদের মধ্যে গমের ভ্যান নিয়ে টানা হেঁচড়ার ছবি তুলি। এতে কারারক্ষীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার এর উপর হামলা করে। এমনকি টেনে হেঁচড়ে কারাগারের ভেতরে নিয়ে বুট দিয়ে লাথি ও এলোপাথারি পেটায় কারারক্ষীরা।
এদিকে তাকে নির্যাতনের খবরে বরিশালে সাংবাদিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তারা কারা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে হামলাকারীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় ডিআইজি প্রিজন তওহিদুল ইসলাম ও সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের কাছে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়। সাংবাদিকদের বিক্ষোভের মুখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ কারারক্ষীকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লোজড ও পরে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেন কারা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বরিশাল জেলার সভাপতি কাজী মিরাজ বলেন, একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যই ছবি তুলতে যায়। সেই ঘটনা আড়াল করতে সাংবাদিকের উপর হামলা করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলার দু’জনই এই ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন। তারা কি ব্যবস্থা নেবেন আমরা সেই ঘোষণার অপেক্ষায় আছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের স্থায়ী বরখাস্ত না করা হলে সাংবাদিকরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
যুগান্ত’র বরিশাল ব্যুরো চীফ আখতার ফারুক শাহিন বলেন, কিছু হলেই সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আমরা কোন আশ্বাস চাই না। বিচার চাই। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না দেয়া হলো সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ডিআইজি প্রিজন তওহিদুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি রেশনের গম বাইরে বের করা নিয়ে সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছে। যাই হোক না কেন একজন সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলা হবে তা মেনে নেয়া যায় না। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা পাঁচজনকে প্রথমে ক্লোজড এবং পরে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরো কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা সে বিষয়টিও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গম পাচারের বিষয়ে ডিআইজি প্রিজন বলেন, অনেক সময় রেশনের গম কারারক্ষীরা নেয় না। তারা তাদের ভাগের গম বিক্রি করে দেয়। এটা তেমনটাই হয়েছে নাকি সত্যিই চোরাইভাবে পাচার করা হচ্ছিলো সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে গম জব্দ করার বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাইনুল ইসলাম বলেন, কারাগার থেকে গম পাচারের খবরে অভিযান চালানো হয়। এসময় বাজার রোড থেকে দুই ভ্যান গাড়িতে থাকা ২৮ বস্তা গম জব্দ ও ভ্যান চালকদের আটক করা হয়। পাশাপাশি গাজী স্টোর নামের যে দোকানে গম বিক্রি করা হচ্ছিলো সেই দোকানের মালিক ও একজন ভ্যান চালককে আটক করা হয়েছে। যাচাই বাছাই পরবর্তী এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএস