ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল না কিনে সুবিধাভোগীদের (ফড়িয়া, মধ্যস্বত্ত্বভোগী) কাছ থেকে কেনা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে কৃষি সচিব, খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এই রুলের জবাব দিতে বলেছে উচ্চ আদালত।
এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রুল জারি করে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. ফিরোজ আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত।
দাম কম, পাকা ধানে আগুন দিয়ে কৃষকের প্রতিবাদ
কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল কেনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি গত ২৮ জুলাই উকিল নোটিশ পাঠান জাতীয় কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ।ওই নোটিশের জবাব না পাওয়ায় গত ১৮ অগাস্ট হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন তিনি।
আইনজীবী মো. ফিরোজ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নীতিমালা অনুযায়ী সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু ফড়িয়া, মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে কৃষককে খোলা বাজারে এক মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে চারশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকায়।
“পরে এই ফড়িয়া, মধ্যস্বত্ত্বভোগীরাই সরকারি দর ১০৪০ বা ১২০০ টাকায় কৃষকের এ ধান বিক্রি করছে। মণ প্রতি উৎপাদন খরচ হিসাবে সরকারি এ দামও কিন্তু কম। ফলে কৃষক ধান উৎপাদনের পরপরই ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বা বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর এভাবেই প্রান্তিক কৃষকরা সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে। অনেক কৃষক উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের ধান-চাল কেনার বিষয়টাই একটা চক্রে পরিণত হয়েছে, যা নীতিমালা লঙ্ঘন করেই করা হচ্ছে।”
ধানের দাম কম হওয়ায় গত মে মাসে টাঙ্গাইলে এক কৃষক নিজের পাকা ধানক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
এ আইনজীবী জানান, রিটে তারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার নির্দেশনা চেয়েছিলেন।
“যেহেতু মৌসুম শেষ, তাই রুল জারি করেছেন আদালত।”
অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালার ৪-এ বলা হয়েছে, “কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি সংগ্রহ মৌসুমে উৎপাদিত ধান ও গম এবং বৈধ ও সচল চালকল মালিকদের নিকট থেকে চুক্তির বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মৌসুমের ধান থেকে ছাঁটাই করা চাল সংগ্রহ করা হবে।”
কৃষকের দুর্গতি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় চিন্তিত: কৃষিমন্ত্রী
এছাড়া ৯-এ বলা হয়েছে, “উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সরবরাহ করা মৌসুমে আবাদকৃত জমির পরিমাণ এবং সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণসহ ডেটাবেইজ হতে প্রযোজনীয় সংখ্যক প্রান্তিক কৃষক নির্বাচন করবে। উপজেলা কমিটি প্রত্যেকের প্রদেয় খাদ্যশস্যের পরিমাণসহ নির্বাচিত কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট সংগ্রহ কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কৃষকদের নিকট থেকে ধান ও গম ক্রয় করা হবে। সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্মকর্তা কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড/জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কৃষকদের শনাক্ত করবেন। তালিকা বহির্ভূত কারও নিকট হতে ধান ও গম ক্রয় করা যাবে না।”
রিটে বলা হয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোক বা স্থানীয় সরকারি দলের লোকজনই আসলে সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের সুযোগ পায়। আর তারা কেউই প্রান্তিক কৃষক নন। ক্ষেত্র বিশেষে তারা গরিব কৃষকের ধান কম দামে কিনে বেশি দামে সরকারি গুদামে সরবরাহ করে থাকেন।
“ফলে ঋণ করে ধান উৎপাদন করে এখন কৃষকেরা তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।”
রিটে আরও বলা হয়, দেশের ‘শতকরা ৮০ ভাগ’ মানুষের প্রধান পেশা ধান উৎপাদন করা। শুধু ধান বিক্রি করেই তাদের জীবন-জীবিকা চলে। দিন দিন ধান উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। কিন্তু তাদের উৎপদান খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে কৃষকরা ধান চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এটা দেশের সামগ্রীক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। সুত্র বিডি নিউজ