ভোলা নিউজ২৪ডটনেটঃ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গতবার (২০১৪) কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু এবার সে সমস্যা নেই, সব দলই নির্বাচনে আসবে। আজ বুধবার (০৩ অক্টোবর) জাতিসংঘ সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে এ আশাবাদ জানান। পাশাপাশি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ইভিএম ও সরকারি চাকরিতে কোটা প্রসঙ্গে তার মতামত তুলে ধরেন। সফরের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং অন্যান্য ইস্যুতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার তিন দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এক লিখিত বক্তব্যে সফরের বিস্তারিত কর্মসূচি ও তৎপরতা তুলে ধরেন।
সব দলই নির্বাচনে আসবে
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজের প্রশ্নের জবাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে। দেশের মানুষও ভোট দেবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে কোন দল আসবে, আর কোন দল আসবে না, সে সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে।’ বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘২০১৪ এর নির্বাচনে আমার চেষ্টা ছিল, সবাই অংশ নিক। কিন্তু সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। আপনারা যাদের নির্বাচনে চাইছেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে। আর যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কেন?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ এর নির্বাচন ঠেকানোর নামে যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তারা কেমন আছে, কেউ কি খোঁজ নিয়েছেন? আমি অনুরোধ করবো, ওই সময় যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিল,তাদের পরিবার কেমন আছে, তাদের খোঁজ নিন। মানুষ পুড়িয়ে মারার ওই আন্দোলনে অনেক মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের সংসার কেমন চলছে? যে দলের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা, তাদের জন্য এতো মায়াকান্না কেন?’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে বিএনপির আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে আমার কাছে আসে। আমি তাদের সাহায্য করি। যাদের কারণে মানুষের এই অবস্থা,তাদের জন্য মায়াকান্নার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগ আছে, মামলা আছে। ওই সব অভিযোগ-মামলার সাক্ষীও আছে অনেক। খালেদা জিয়া,তার ছেলে, তার দলের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। মানুষ নৌকায় ভোট দেবে। কারণ, একমাত্র নৌকা ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়।
আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার করার পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রী। এক সাংবাদিকের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আপনি সবচেয়ে প্রিয় জিনিস টাকা মোবাইল ফোনে পাঠাতে পারেন। ভোটটাও আপনার প্রিয় জিনিস, তো ভোটটাও কেন আপনি ইভিএমে দিতে পারবেন না? আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বরং এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করা উচিত, যেন মোবাইল থেকেও মানুষ ভোট দিতে পারে। তাহলে আর ভোটকেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। ইভিএমটা হোক।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) প্রজেক্ট পাস করে দিয়েছি। যেহেতু আমরা পাস করে দিয়েছি, তাহলে বুঝতেই পারেন, আমাদের মানসিকতা কী। জনগণের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তাদের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব। আর সেটা মনে করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইভিএম ব্যবহারে আমার কোনও আপত্তি নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএমে ভোট হলে বেশি সুবিধা। মানুষ সহজে ভোট দিতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে আবার তা গুণে রেজাল্ট পাওয়া যাবে। আগে সিল মেরে বাক্স ভরা যেতো। ভোটের বাক্স নিয়ে গিয়ে একটা ডাণ্ডা, ২০টা গুণ্ডা নির্বাচন প্রভাবিত করলো। ইভিএম হলে সেই জায়গা থেকে মুক্তি মিলবে।’
যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দেবো
২০ দলীয় জোটের সমাবেশে মানুষ চাইলে তার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ করে দিতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। আমি বলেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা জায়গা করে দিন, যে যতো খুশি বক্তব্য দিক। আরও দু’একটি জায়গা পাওয়া যায় কিনা তাও দেখছি। এটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে পারি। তাদের এসব সমাবেশ নিয়ে আমার ভয়ের কিছু নেই।’
২০ দলীয় জোট সম্প্রসারণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জোট হচ্ছে আমি খুব খুশি। তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করবো। কারণ আমরা জানি, বাংলাদেশে ভোট আছে দুপক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি হলো এন্টিআওয়ামী লীগ। এখন এন্টিআওয়ামী লীগ ভোটগুলোকে তো একটি জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছে। জোট হওয়াতো ভালো কথা। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জোট গঠন নির্বাচনের জন্য ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে কিনা বা আসার সামর্থ তাদের আছে কিনা বা সে সাহস তাদের আছে কিনা সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন।’
জোটের কলেবর বাড়ানোর চিন্তা নেই
নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কলেবর বৃদ্ধির কোনও চিন্তা নেই বলে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক দীপক দেবের এক প্রশ্নের জবাবে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চারদিকে অনেক বড় বড় জোট-মহাজোট হচ্ছে। এসবের মধ্যে আমাদের জোটের কলেবর বাড়ানোর তেমন কোনও চিন্তা নেই। এরপরেও কেউ যদি আমাদের সঙ্গে আসতে আগ্রহী থাকে, তখন আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারি।
এ সময় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকার প্রধান বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনও ফর্মুলা নেই। সংবিধানে বলা আছে প্রতি ৬০ দিন অন্তর সংসদ অধিবেশন বসার জন্য। তবে নির্বাচনের আগে এ বিষয়টি শিথিল থাকে। সংসদ বহাল রেখে কিভাবে নির্বাচন আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে আমরা কথা শুরু করেছি। আমাদের জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েকটির সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনাও নেওয়া হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব দেশে পার্লামেন্টারিয়ান ডেমোক্রেসি রয়েছে তাদের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছে তারা সরকার যেভাবে থাকে সেভাবে রেখেই পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের তিন মাসে নির্বাচন আয়োজন করে। তবে কোনও কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হলে তারা সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে। এটাই আসলে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নিয়ম।
তিনি আরও বলেন,আমরা ওই নিয়মেই নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করবো।এক্ষেত্রে কেবিনেট ছোট করে নিয়ে কাজ করা হবে। কারণ নির্বাচন সময়ে আরপিও অনুযায়ী চলাচলে বিভিন্ন সমস্যা থাকে।
এ সময় চলতি সংসদের ওপর জনগণের আস্থা বেড়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এবারের সংসদ অন্য যে কোনও সংসদের চেয়ে ভালো ছিল। কারণ এবার কোনও গালিগালাজ নাই, নোংরা কথা নাই, কোনও অঙ্গভঙ্গি নাই। বরং গঠনমূলক, সুস্থ এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল। এ কারণে জনগণ এই সংসদের প্রতি অনেক বেশি আস্থাশীল।
জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই: শেখ হাসিনা
দেশের রাজনীতি নিয়ে বিশ্ব নেতারা কোনও পরামর্শ দেননি বলে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন,‘নির্বাচনের ব্যাপারে এমন কোনও পরামর্শ আমাকে কেউ দেয়নি।’ এ সময় সাংবাদিকরা হাততালি দিলে তিনি বলেন, ‘তালি বাজানোর কিছু নেই। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার সঙ্গেই কথা বলেছি,তারা বলেছেন,তারা চান আগামীতেও যেন আমাদের সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কী হবে না হবে, তা নিয়ে কোনও কথা হয়নি। তবে যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, আমি যেন পুনরায় ক্ষমতায় আসি।’
তিনি আরও বলেন,‘আমি বলেছি, আমাদের দেশে আগে কী হতো, মিলিটারি ডিক্টেটর থাকতে, নির্বাচন বলতে কী হতো? স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, নির্বাচনি পরিবেশের যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আমরাই করেছি। আমাদের সরকারের আমলে ছয় হাজারের ওপরে নির্বাচন হয়েছে, কয়টা নির্বাচনে আমরা হস্তক্ষেপ করেছি? বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে। আমরা তো সেখানে হস্তক্ষেপ করিনি। সিলেটে আমরা সামান্য ভোটে হেরে গেছি। বিএনপি থাকলে তো সিল মেরেই নিয়ে নিতো। আমরা তো সে পথে যাইনি। কাজেই, আমাদের ওপর মানুষের আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়ন করি মনের টানে, নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করি না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ‘২০০৭ সালে কাদের পত্রিকায় বড় বড় হেডলাইন, প্রতিদিন আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর অপচেষ্টা ছিল? আমার বিরুদ্ধে একের পর এক—মোট ১৬টা মামলা দেয়। প্রত্যেকটা মামলা তদন্ত করে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখনও কেউ কেউ বসে থাকে যে সরকার চলে যাবে—যারা মানুষের কাছে ভোট চাইতেও যাবে না তাদেরও ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে— তাদের খায়েশ পূরণ করতে গিয়ে তো মানুষকে খেসারত দিতে হয়। জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। এটা নিশ্চয় আমাদের কারও ভুলে যাওয়া উচিত না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘দশ বছর ক্ষমতায় আছি। সবাই শান্তিতে আছে। এটাই তো সব না। যারা ষড়যন্ত্র বা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা উপকৃত, তাদের তো একটা আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়। তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে গিয়েই তো দেশকে বারবার বিপদে পড়তে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করবো। আর দেশ যাতে আরও এগিয়ে যায় সেজন্য ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি।’
অপরাধী মন না থাকলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগের বিষয়ে সাংবাদিক জ ই মামুন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা খুব উদ্বিগ্ন, আমি বুঝলাম। কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা দেখবে কে? বা যারা ভিকটিমাইজ হচ্ছে, তাদের উদ্বেগটা কে দেখবে? আর তাদের কীভাবে ক্ষতিপূরণ করবেন। ওই জায়গায় একটু কমতি আছে। যেটা ইংল্যান্ডের আইনে আছে। আমরা এটা করার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনগুলো দেখেছি। তারপর এটা অনলাইনে ছিল। এটা সকলের সঙ্গে আলোচনাও হয়ে গেছে। এরপর এসে হঠাৎ এত উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন কিসের জন্য সেটাও আমার প্রশ্ন? কারও যদি অপরাধী মন না থাকে,বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই। আগে তো সমন জারি করা হতো, সরাসরি গ্রেফতার করা হতো। আমি সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। আগে তো হুট করে ধরে নিতো। আপনারা সাংবাদিকরা যাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছেন তাদের কি করতে পেরেছেন? আর আপনারা এখন উদ্বিগ্ন। এখন বৈঠকের পর বৈঠক। বৈঠকে আমি এমন মানুষ দেখেছি…মানে লেখা তৈরি করে বসে আছে। একটার পর একটা লেখা আমার বিরুদ্ধে চালাবে। উদ্বিগ্ন হবে তারা। আপনাদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্তত আমি যতদিন আছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা এখানে স্পষ্ট বলবো যে সাংবাদিকরা কোনও অন্যায় কাজ করে না, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবে না বা বিভ্রান্ত করবে না; তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। এ আইনে যেটা দেওয়া আছে, সিআরপিসিতে যা আছে-তাই দেওয়া আছে। সেখানে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে। জঙ্গিবাদ দমনে কিছু কিছু ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে তাদেরকে ট্র্যাক করার জন্য। এখন ট্র্যাক করার পর তো বসে থাকা যাবে না। তাকে তো ধরতে হবে। কারণ, সেতো আমাদের জন্য বসে থাকবে না। সারা বিশ্ব এটাই করে। উদ্বিগ্ন তারা বেশি হবে, যারা এত দিন ধরে খুব তৈরি হয়ে আছে। নির্বাচনের শিডিউল এলে যারা আমাদেরকে ভালো করে ঘায়েল করার জন্য ডক্যুমেন্ট তৈরি করে বসে আছে। তারা উদ্বিগ্ন হতে পারে। তারা ভাবছে যে এরকম একটা মিথ্যা নিউজ করবো। এখন তো মাঠে মারা যাবে। ওখানে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) একটা জিনিসের ল্যাপস আছে। একটা জিনিস ওখানে ঢোকানো উচিত আমি মনে করি। সেটা হলো- যদি কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনও মিথ্যা তথ্য দেয়, তাহলে সেই মিথ্যা তথ্যটা তাকে প্রমাণ করতে হবে যে এটা সত্য। যদি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় যে সাংবাদিক লেখবে, যে পত্রিকা বা মিডিয়া প্রকাশ করবে, ইলেট্রনিক বা ডিজিটাল ডিভাইস যেটাই ব্যবহার করবে বা যে এটা প্রকাশ করবে তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। এবং যার বিরুদ্ধে লিখবে তার যে ক্ষতিপূরণ হবে সেটার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটা ইংল্যান্ডে আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আপনারা স্মরণ করে দেখেন, বিবিসি একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নিউজ করেছিল। পরে সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। আর বিবিসির টপ টু বটম সবাইকে রিজাইন করতে হয়েছিল। ২০০৭ সালে আমি যখন বন্দি। আমার বিরুদ্ধে যত নিউজ করা হলো পরে সেটা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হলো। ওই পত্রিকার কোনও সাজা হলো না। কিন্তু তার সম্মান তো নষ্ট হলো। তাদের তো এই লজ্জা হয় নাই যে একটা মিথ্যা তথ্য দিলো। কিন্তু যার সমাজে সম্মান নষ্ট হলো তার তো সব গেলো। পদ্মাসেতু নিয়ে যারা বড় বড় হেডলাইন লিখেছে, তারা তো এখনও সমাজে বুক উঁচু করে চলছে। কিন্তু পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে যে হেয়প্রতিপন্ন হলো; অসম্মান হলো তাদের কে দেখবে?’
ল’ উইল টেক ইটস ওন কোর্স
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে সরকার কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুর এমন প্রশ্নর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘ল’ উইল টেক ইটস ওন কোর্স।’’
থাকে লক্ষ্মী, যায় বালাই
আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে যে উন্নয়ন করেছিলাম তা বিএনপি আসার পর থেমে যায়। আমার ইচ্ছা ছিল আমি যদি একটানা দুইবার থাকতে পারি তবে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হবে। মানুষ তার সুফলটা পাবে। দুই টার্ম থেকেছি। মানুষ তার সুফল পেয়েছে। এখন জনগণ ভোট দিলে আছি না দিলে নাই।এখন আমার কাছে ক্ষমতা- ‘থাকে লক্ষ্মী, যায় বালাই। আমার কোনও চিন্তা নাই।’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের সম্প্রসারণ নিয়ে আমার কোনও ভয় নেই। ভয় থাকে তার, যার হারানোর কিছু আছে। আমার হারানোর কিছু নেই।
আমার ফেসবুক নাই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। খালিদী বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার লিটন দাসের ফেসবুকে দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ছবি পোস্ট করা ও তা নিয়ে চরম নোংরামির পরিপ্রেক্ষিতে পোস্টটি তুলে নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি দেখেননি বলে জানান।
তবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো মোকাবিলার জন্যই তো আমরা সাইবার সিকিউরিটি আইনটি পাস করেছি। এটা আপনাদের জানা দরকার। এই সমস্ত নোংরামি যেন না হয় সেটা মাথায় রেখেই সাইবার সিকিউরিটি আইনটি করা হয়েছে। প্রত্যেকটা দেশেই এটা একটা বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নানা ধরনের ক্রাইম বা জঙ্গিবাদ এবং পর্নো নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে। সেজন্য সবাই প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। সেই ছেলেটা (লিটন দাস) চমৎকার খেলেছে। তারপরও কেন ছেলেটাকে গালি দেওয়া হলো?’
কারও কোটা লাগলে আন্দোলন করুক
বুধবারের (০৩ অক্টোবর) মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে। একইদিনে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কোটা তুলে দেওয়া ঠিক হলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন মেয়েরাও কোটা চাই না বলে আন্দোলন করে, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরাও কোটা চায় না। তাহলে কোটা রাখবো কার জন্যে। এজন্যই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনির সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা তুলে দিয়েছি। যদি কারও কোটা লাগে তাহলে আন্দোলন করুক। তখন ভেবে দেখবো।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আমি সেখানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার বিষয়ে কথা হয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ সেপ্টেম্বর আমি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করি। জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের সরকার প্রধানরা এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আমি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনটি সুপারিশ তুলে ধরি। তার মধ্যে রয়েছে- মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রথাগুলো বাতিল করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে, তাদের অধিকার ও নাগরিকত্ব লাভের উপায় নিশ্চিত করতে হবে; নাগরিকের সহযোগিতার জন্য মিয়ানমারে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করতে হবে ও তাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।ওআইসির নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে থাকার জন্য তাদের আমি বলেছি। তারা রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি।