নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলা মেঘনার ডেঞ্জার জোনে চলছে ছোট লঞ্চ-ট্রলার

0
814

স্টাফ রিপোর্টার,ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। ভোলায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার অন্তত ২২টি রুটের মেঘনায় চলছে ছোট ছোট লঞ্চ-ট্রলার। বর্ষা মৌসুমে ঝূঁকিপূর্ণভাবে এসব লঞ্চ চলাচলের কারনে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা সম্ভাবনা রয়েছে অন্যদিকে যাত্রীদের জীবন চরম ঝুঁকির মুখে পড়ছে। অবৈধভাবে চলাচলকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় প্রশাসনের কোনো নিয়ম-নীতি মানছে না লঞ্চ মালিকরা। সরকারী সি-ট্রাক সার্ভিস ছাড়া ডেঞ্জার জোনে এসব রুটে লঞ্চ চলাচল করায় যে কোন সময় দূর্ঘটনা আর প্রাণহানীর আশংকা করা হলেও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ থাকছেন নিশ্চুপ। অন্যদিকে, বিকল্প যান না দেয়ায় যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব নৌযানে যাতায়াত করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন ঘাটে দেখা গেছে, একটি লঞ্চ ঘাটে নোঙ্গর করা। একদিকে মালামাল উঠানো হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রীরা উঠছেন। অতিরিক্ত মালামাল আর যাত্রী যেন ধারন ক্ষমতার ৫/৭ গুন। কিন্তু ততক্ষনে নদী উত্তাল হয়ে উঠছিলো। আর এ উত্তাল মেঘনায় ডেঞ্জার জোনের মধ্যেই লঞ্চটি ছেড়ে যায়। এ চিত্র দেখা যায়, জেলার অন্তত ২২টি রুটে। সরকার ঘাটগুলোতে ইজারা বসিয়ে রাজস্ব আয় করলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। এসব অভিযোগ যাত্রীদের।
যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন বর্ষা মৌসূমে, প্রতিদিনিই মেঘনা ভয়ংকর উত্তাল, কিন্তু তারপরেও এ উত্তাল নদী উপেক্ষা করে চরম ঝুঁকি নিয়ে যেন এভাবেই চলছে ছোট ছোট লঞ্চ ও ট্রলার। ঝুঁকিপূর্ণভাবে এই পারাপার দেখলেই বোঝা যায় যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
বিআইডব্লিউটিএ সুত্র জানায়, সরকার নৌ-দুর্ঘটনা রোধে প্রতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পয্যন্ত ৮মাস সময়কে মেঘনার ডেঞ্জার জোন হিসাবে চিহিœত করেছে। এ সময় নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় সি-সার্ভে ছাড়া অন্য যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারী নিয়ম তোয়াক্কা না করেই ভোলায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে লঞ্চগুলো চলছে।
প্রতিদিন ভোলা সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসব লঞ্চ জেলার অভ্যন্তরীন রুট ছাড়াও নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। ফলে চরম ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন।
ব্যাংকার রেজাউল করিম জানান, এমনিতে লঞ্চগুলো খুব ছোট তার উপর একদিকে অতিরিক্ত মালামাল তুলছে, অন্যদিকে ধারন ক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী উঠাচ্ছেন। এতে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
যাত্রী খোকন সিকদার বলেন, অনেক জোরপূর্ব অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করছে লঞ্চগুলো। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও কোন লাভ হয়না। আনিছুর রহমান মজগুনী বলেন, বিকল্প নৌ-যান না থাকায় আমরা এসব লঞ্চে যাতায়াত করছি। কিন্তু জীবন তো আমাদের হাতে মুঠোয় রয়ে যাচ্ছে।

বিবি আমেনা বলেন, আমরা জানি যে যে কোন সময় ঝড় হলে কিংবা নদী অতিরিক্ত মাত্রায় উত্তাল হলে এসব লঞ্চ ডুবে যাবে। কিন্তু কিছুই করার নেই, বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া প্রশাসন এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্যনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভোলার ২২টি রুটের মধ্যে যেসব রুট বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশী ভয়ংকর সেগুলো হচ্ছে, ইলিশা-মজুচৌধুরীরহাট, ভেলুমিয়া-ধুলিয়া, হাকিমুদ্দিন-তজুমদ্দিন, চরফ্যাশনের কচ্ছপিয়া-ঢালচর-কুকরী-মুকরী, বেতুয়া-মনপুরা, তজুমদ্দিন, মনপুরা-চর জহির উদ্দিন, নাজিরপুর-কালাইয়া, হাকিমুদ্দিন-আলেকজান্ডার, মনপুরা-হাতিয়া, দৌলতখান-আলেকজান্ডার-মনপুরা-লক্ষীপুর। ভোলার সাথে অন্য জেলা ও দুর্গম এলাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ, তাই যাত্রীদের নৌ-যান দিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব রুটে ফিটনেসবিহীন ছোট ছোট লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে পারপার হলেও যেন মাথা ব্যাথা নেই তাদের।
এদিকে, ডেঞ্জার জোনে এসব অবৈধ লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে এসব রুটে সরকারী সি-ট্রাক কিংবা নিরাপদ লঞ্চ দেয়ার দাবী জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এ বিষয়ে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক বলেন, অবৈধভাবে চলাচলকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাগন বিষয়টির উপর নজরদারি রাখছে। এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা-তেঁতুরিয়ার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে কোনো ছোট লঞ্চ বা ট্রলার চলাচল করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY