নবজাতক সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না জুলাই-আগস্টের শহীদ দৌলতখানের শাজাহান

0
3

আরিফ উদ্দিন রনি :: সন্তানকে কোলে নেয়া আর মুখ দেখা হলো না জুলাই –আগস্টে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া ভোলার দৌলতখানের হতভাগা শাহজাহানের।আনন্দের মাঝে সেই কস্টের কথা বলছেন নবজাতক শিশু ওমর ফারুকের মা ফাতেহা।

 

মাত্র আড়াই বছর আগে বিয়ে হয় শহীদ শাজাহানের সাথে দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছোটধলী গ্রামের ফাতেহার সাথে। সুন্দর জীবন গড়ার আশায় পাড়ি জমান ঢাকায়। পাপষ বিক্রি করে সংসার চালাতো কোন ভাবে। ছোট বেলায় বাবা হারানো ফাতেহা শপ্ন দেখেন স্বামী শাজাহানকে নিয়ে। তবে সেই স্বপ্ন আর বাস্তবরুপ নেয়ার আগেই জুলাইয়ের ১৬ তারিখ পুলিশের গুলিতে জীবন দিতে হয় হতভাগা শাজাহানকে। মর্গে গিয়ে শাজাহানকে খুজে পায় স্ত্রী ফাতেহা।স্বামী মারা যাবার পরে শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা আর পরিচয় দিচ্ছে না। অসচ্ছল মায়ের কাছে আশ্রয় হয় ফাতেহার। এমন কোন অবস্থা নেই যে মা তাদের দেখে রাখতে পারবে। জরাজীর্ন ঘরে কোন মতে কাটে জীবন। জীবনের বড় কস্ট দুনিয়াতে আসা নবজাতক ওমর ফারুক তার বাবার কোলে উঠতে পারেনি আর বাবাও তাকে কোলে নিতে পারেনি। যেখানে জরাজীর্ন আর দুমোঠো ভাত জোটে না,সেখানে কি ভাবে সন্তানকে বাবার দেখা শ্বপ্ন অনুযায়ী সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়াবেন এটাই এখন চিন্তা।

 

জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিতে শহীদ হন মো: শাহজাহান। তার শহীদ হওয়ার প্রায় সাড়ে ৫ মাস পরে ভোলার শহরে একটি বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারে স্ত্রী ফাতেহা জন্ম দিলেন একটি পুত্র সন্তানের। শাহজাহানের রেখে যাওয়া নাম মো: ওমর ফারুকই রাখা হয়েছে শিশুটির নাম। তবে শিশুটি জন্মের পর একে একে সবার কোলে উঠলেও কোলে উঠা হয়নি বাবার। এমনকি বাবার মূখও দেখা হয়নি তার। তবে দেশের জন্য জীবন দেওয়ার শাহজাহানের ছেলে পড়া-শুনাসহ সকল বিষয়ে সরকারের সহযোগীতার জন্য অনুরোধ করেন  শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা ও তার পরিবার।

 

ভোলার শহরের একটি ক্লিনিকে গত শুক্রবার বিকেলে জন্ম নিয়েছে ঢাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শহীদ হওয়ায় মো: শাহজাহানের পুত্র সন্তান। শিশুটি জন্মের পর মা ফাতেহার কোল থেকে একে একে সবার কোলে উঠলেও কোলে উঠা হয়নি বাবা শাহজাহানের। এমনকি বাবার মূখ ও বাবা বাবা বলে আর কোন দিন ডাকা হবে না তার।  গত বছর ২৫এপ্রিল পারিবারিতভাবে বিয়ে হয় শাহজাহান-ফাতেহা দম্পতির। বিয়ের পর তারা ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তারা। ঢাকার নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাতে পাপোশের ব্যবসা করে সংসার চালাতেন তিনি।

গত ১৬ জুলাই  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে গিয়ে গুলিতে শহীন হন শাহজাহান। তার মৃত্যুর সময় স্ত্রী ফাতেহা ৫ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিলেন। স্বামীর শহীদ হওয়ার পর শ্বশুর বাড়িতে বেশি দিন থাকা হয়নি স্ত্রীর ফাতেহাও। পরে আশ্রয় হয়েছে বাবার বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছোটধলী গ্রামের বদ্দার বাড়িতে। মৃত বাবার রেখে যাওয়া জরার্জীণ ঘরেই মায়ের সাথে দু:খ কষ্টে বসবাস করতেন ফাতেহা। এদিকে ফাতেহার পুত্র সন্তান জন্মের খবর পেয়ে শিশুটিতে দেখতে শনিবার সকালে ভোলার এশিয়া মেডিকেল সেন্টারের ছুঁটে এসেন জেলা প্রশাসক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

 

ফাতেহা ও তার পরিবারের জানান, শাহজাহান শহীদ হওয়ার পর অনেক কষ্টে কাটছে তাদের সংসার। তাই দেশের জন্য জীবন দেওয়ার শাহজাহানের জন্য সন্তানের পড়া-শুনাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন তারা।

 

অন্যদিকে ভোলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জানান, শাহজাহান শীহন হওয়ার পর থেকেই তারা শাহজাহানের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ রেখেছেন। শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুকের আমরা সাবই অভিভাবক। ওমর ফারুকের মাদ্রাসায় পড়া-শুনা ও তাদের অস্বচ্ছল পরিবারের সকল সুযোগ-সুবিধার দেওয়ার জন্য প্রশাসনের বার বার যাবেন।

 

জেলা প্রশাসক মো: আজাহার জাহান শুরু থেকে খোজ-খবর নিচ্ছেন শহীদ শাজাহানসহ শহীদ হোয়া ৪৬ পরিবারেরই। তেমনি ফাতেহার সন্তান হোওয়ার খবরেও ছুটে আসেন ক্লিনিকে। কোলে তুলে তুলে নেন শিশু সন্তান ওমর ফারুককে। ইতোমধ্যে তিনি শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর ও চিকিৎসা জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। এবং শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

 

 

LEAVE A REPLY