সেলিম রেজা,তজুমদ্দিন প্রতিনিধি,ভোলা নিউজ২৪ ডট কম।। হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা শীতের সকালে কয় বছর আগেও চোখে পড়তো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। তবে গ্রামবাংলার এ দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ নিধন, নতুন বাগান তৈরী না করায় দিনে দিনে কমছে খেজুরের গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও।
সুস্বাদ ও পিঠাপুলির জন্য অতি আবশ্যক উপকরণ হওয়ায় এখনও খেজুর রসের চাহিদা রয়েছে । তবে আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।এদিকে, শীত মৌসুম ঘনিয়ে আসতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছের রস আহরণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন গাছিরা।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এই মধুবৃক্ষ (খেজুর গাছ) ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তুলনামূলকভাবে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। যে হারে খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ করা হয় না।
শীত মৌসুমে সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে শেষ করা যাবে না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েস তো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের গ্রামাঞ্চলে রসের ক্ষীর, পায়েস ও পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শুধু খেজুরের রসই নয়, এর থেকে তৈরি হয় গুড়। রস আর গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।তজুমদ্দিন উপজেলা চাঁদ পুর ইউনিয়নের দালাল কান্দি গাছি হান্নান (৪৫) বলেন, কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না।
আমাদের নাতি-নাতনীরা তো আর সেই দুধচিতই, পুলি-পায়েস খেতে পায় না।
তবুও ছিটেফোঁটা তাদেরও কিছু দিতে হয়। তাই যে কয়টি খেজুর গাছ আছে তা থেকেই রস, গুড়, পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়।
ফকিরকান্দি গ্রামের মো. মনজু মামাতাব্বর (৫৫) বলেন, গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় তজুমদ্দিন উপজেলা খেজুর রসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখন গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন নেই। তবুও কয়েকটা গাছের পরিচর্যা করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।গাছি মতিন জানান, খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসারের খরচ চলতো। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই। শশীগঞ্জ গ্রামের গাছি ছলেমান মাঝি (৪৫) জানান, এইতো কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ৫০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা। জানা গেছে, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় ও ইউ বিল পোকার আক্রমনে মরে যাওয়ায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হতো। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।
জানতে তজুমদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার আজকের প্রত্রিকা কে বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুরগাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুরগাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত বেশি করে খেজুরগাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সকলকে খেজুর গাছের পরিচর্যায় এগিয়ে আসা উচিত।