ডাবের পানির যত গুণ

0
370

ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট: আর কিছুদিনের মধ্যেই পুরোদমে গরম পড়া শুরু করবে। তবে এরইমধ্যে যে পরিমাণ গরম পড়েছে তাতেই মানুষের কাহিল অবস্থা। যারা এসি রুমে বসে কাজ করেন তারা গরমের আঁচ ততটা বুঝতে না পারলেও, কিন্তু এই গরমে রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষগুলোর অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়। অনেকেই প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শরবতের দোকান থেকে ঠান্ডা পানীয় বা শরবত খান। গরম থেকে বাঁচার জন্য যত পানীয় আছে তার মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পানীয় হচ্ছে ডাবের পানি। কচি ডাবের পানিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন, মিনারেলস এবং ফাইবার।

ডাবের পানির পুষ্টিগুণ

ডাবের পানি হচ্ছে একটি লো ক্যালরি পানীয় কিন্তু শরীরের জন্য অনেক উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম কচি ডাবের পানিতে খাদ্য শক্তি পাওয়া যায় ১৯ কিলো ক্যালরি। এছাড়া ১০০ গ্রাম কচি ডাবের পানিতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে ৩.৭১ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.২০ গ্রাম। এছাড়া সোডিয়াম রয়েছে ১০৫ মি.গ্রাম, পটাশিয়াম রয়েছে ২০৫ মি.গ্রাম।

ডাবের পানি পানের উপকারিতা

হজম বিপাকে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে
ডাবের পানি বা নারকেলের পানিতে প্রাকৃতিক ভাবে বিভিন্ন ধরণের বায়ো অ্যাক্টিভ এনজাইম যেমনঃ এসিড ফসফাটেজ, ক্যাটালেজ, ডিহাইড্রোজিনেজ, পারঅক্সিডেজ, আর এন এ পলিমারেজ থাকে। আর এই এনজাইমের কার্যকারীতায় হজম ও বিপাক কাজ প্রভাবিত হয়। এই বায়ো অ্যাক্টিভ এনজাইমগুলো হজম এবং বিপাক প্রক্রিয়া উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে ওজন কমাতে সাহায্য করে। দেহের ইলেক্ট্রোলাইটস এবং পি এইচ এর ভারসাম্য রক্ষা করে। নারকেলের পানিতে রয়েছে ভাল পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইটস পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম। যা একসঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই যেকোনো ধরণের পানিশূন্যতা দূর করার জন্য ডাবের পানি খুব ভাল কাজ করে। সুতরাং গরমে বা ডায়রিয়া যে কারণেই পানিশূন্যতা দেখা দিক ডাবের পানি পান করুন। তৃষ্ণা পেলে রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে শরবত কিনে না খেয়ে ডাবের পানি পান করেন। এছাড়া ব্যায়ামের পর এনার্জি বাড়াতেও ডাবের পানির বিকল্প কিছু হতে পারে না।

 

রক্তচাপ, এল ডি এল এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়
ডাবের পানি হার্ট টনিক হিসাবে কাজ করে। এতে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ২০১২ সালে ‘জার্নাল অব মেডিসিনাল ফুড’ এর এক গবেষণায় দেখা যায়, ম্যাচিউর বা কচি ডাবের পানি উভয়ই লিপিড মেটাবলিজমে সাহায্য করে যা দেহে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কচি ডাবের পানি এল ডি এল কমাতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি এইচ ডি এল এর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।

ব্লাড সার্কুলেশন বাড়াতে সাহায্য করে    
ডাবের পানি ব্লাড সার্কুলেশনের উন্নতি ঘটায় যার ফলে, নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে ধমনীতে প্লাক হবার ঝুঁকি কমে যায়। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে হৃদযন্ত্র ভাল থাকে।

দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়
ডাবের পানি হল প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক যা ইউরিন প্রোডাকশন এর মাধ্যমে টক্সিনকে শরীর থেকে বের করে দেয়। পাশাপাশি মূত্রনালিতে ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং যারা প্রায়ই মূত্রনালির ইনফেকশনে ভোগেন তারা নিয়মিত ডাবের পানি পান করবেন।

ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায় 
অনেকেই ভাবছেন, ডায়াবেটিস রোগীরা বোধ হয় ডাবের পানি একেবারেই খেতে পারবেন না। কথাটি একেবারেই ঠিক নয়। নারকেলের পানিতে থাকা অ্যামিনো এসিড এবং ডায়েটারি ফাইবার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে। যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করেন, তারা প্রতিদিন একটি করে কচি ডাবের পানি পান করতে পারবেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাবের পানি ব্যায়ামের পর পান করা ভাল। তারা অধিক পরিশ্রম করলেও সারাদিনে ২০০ এম এল এর বেশি ডাবের পানি পান করা উচিত নয়।

কিডনির পাথর কমাতে সাহায্য করে
কিডনির পাথর কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ করা উচিত। আর সে হিসাবে ডাবের পানি হল আদর্শ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডাবের পানি পানের ফলে কিডনিতে পাথর ফরমেশনের হার কমে যায়। তাই যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তারা সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন।

বাউয়েল মুভমেন্ট নিয়মিত করতে সাহায্য করে
আমরা কতটুকু সুস্থ তা অনেকটা নির্ভর করে আমাদের অন্ত্রের সুস্থতার ওপর। আমাদের শরীরে নানাভাবে নানা রকম বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করে। আর এই পদার্থ গুলো যত তাড়াতাড়ি শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে ততই মঙ্গল। তবে অন্ত্র যদি সুস্থ না থাকে অর্থাৎ অন্ত্রের সংকোচন যদি নিয়মিত না হয় তবে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং এই টক্সিন গুলো থেকে যেতে পারে। ডাবের পানিতে থাকা দ্রবনীয় আঁশ বাউয়েল মুভমেন্ট নিয়মিত করার মাধ্যমে এই টক্সিনগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে

ডাবের পানি পানের সতর্কতা
ডাবের পানি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর হলেও কিছু ক্ষেত্রে ডাবের পানি পানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের নিন্মোক্ত সমস্যা রয়েছে তাদের অবশ্যই ডাবের পানি পান থেকে বিরত থাকা উচিত।

সিস্টিক ফাইব্রোসিস এর ক্ষেত্রে
যাদের সিস্টিক ফাইব্রোসিস রয়েছে তাদের ডাবের পানি পান না করায় ভালো। সিস্টিক ফাইব্রোসিসের কারণে দেহে লবণের পরিমাণ কমে যায়, বিশেষ করে সোডিয়ামের পরিমাণ। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম বেশি থাকলেও সোডিয়ামের পরিমাণ কম। তাই এ সময় ডাবের পানি পান করা ঠিক নয়।

লো ব্লাড প্রেশারের সমাস্যা থাকলে এবং দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে
যারা লো ব্লাড প্রেশারের সমস্যাতে ভুগছেন তাদের ডাবের পানি না খাওয়া ভাল, এতে প্রেশার আরও কমে যেতে পারে। দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডাবের পানি খাওয়া বাদ দিতে হবে।

কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে 
যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তারা ডাবের পানি খাবেন না। ডাবের পানিতে থাকা অতিরিক্ত পটাশিয়াম কিডনি শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। সুতরাং কিডনিতে কোন সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডাবের পানি পান করবেন না।

LEAVE A REPLY