ড. মাহফুজুর রহমান। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান। এটিএন নিউজেরও চেয়ারম্যান তিনি। একসময় তিনি ছিলেন সফল পোশাকশিল্প (গার্মেন্ট) ব্যবসায়ী। একাধিকবার জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও পেয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত চ্যানেল এটিএন বাংলা পেয়েছে এমি অ্যাওয়ার্ডসহ বহু পুরস্কার। গান গাইতে ভালোবাসেন তিনি। এবার ঈদুল আজহায় এটিএন বাংলায় সম্প্রচারিত তাঁর একক সংগীতানুষ্ঠান ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক সফল্য, গানের জগতে নিজেকে জড়ানো এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এসব কথা বলেন তিন।
তিনি বলেন, ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষ আমার গানের অনেক সমালোচনা করেছেন, অনেকে জঘন্য জঘন্য কথা বলেছেন। অনেক সাংবাদিকও এর মধ্যে আছেন। আমার সবচেয়ে দুঃখ লাগে যখন দেখি, এঁরা না বুঝে সমালোচনা করছেন। আমার গানের সমালোচনা যদি সাবিনা ইয়াসমিন বা রুনা লায়লা করতেন কিংবা অন্য কোনো ছেলেশিল্পী করতেন, আমার আপত্তি থাকত না। কিন্তু যারা গানের ‘গ’-ও বোঝে না, তারাই ফেসবুকে সমালোচনা করছে।
ফেসবুকে এমনও অনেকে লিখেছে, ‘মাহফুজুর রহমানের মতো কত গায়ক আসছে, কত গেছে। দুই দিন পর ঝরে যাবে।’ আমিও এখন তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলব, আমি ঝরে যাওয়ার জন্য আসিনি। আমি প্রতিবছর দু-তিনটা গান আপনাদের উপহার দেবো। গত ঈদে আমার গান টিআরপিতে ওপরে ছিল। এবারও দেখবেন, আমার গান টিআরপিতে ওপরেই থাকবে। আমি দেখাতে চাই, মানুষ চেষ্টা করলে, ইচ্ছে করলে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। যাঁরা এখন সমালোচনা করছেন, তাঁরাই একদিন আমার কাজ স্বীকার করে নেবেন।
ফেসবুকে অনেকে ভালো ভালো কমেন্টও করেছেন। কোটি কোটি দর্শক-শ্রোতা গানগুলো দেখেছেন। সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেছেন, ‘গানগুলো আরো ভালো হতো যদি মিক্সিং আরো ভালো হতো।’ তার মানে, গান ভালো হয়েছে। বাদশা বুলবুলও গানের প্রশংসা করেছেন। আমি তো প্রফেশনাল শিল্পী নই, শখের বশে গান করছি, ভালো লাগা থেকে গান করছি। আমি তো কোনো শিল্পীর ভাত মারছি না। এ পর্যন্ত হয়তো আমার ২০টি গান প্রচার হয়েছে। তবে আমার গাওয়া ৫০টিরও বেশি গান রয়েছে। অনেক টেলিফিল্মেও আমার গান ব্যবহার করা হয়েছে।
আবারও বলব, যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা না বুঝেই করছেন। তাঁরা যদি সুর আর তালে এক লাইন গানও গাইতে পারেন, তাহলে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁদের সমালোচনা গ্রহণ করব। তাঁরা বাদে কোনো শিল্পী যদি সমালোচনা করতেন, তাহলে আমি সমালোচনা গ্রহণ করতাম।
এটিএন বাংলা শুরু করার পর আমরা অনেক শিল্পী তৈরি করেছি। ইভা রহমান ছোটবেলায় গান শিখত, এর পরে শেখেনি। সেই ইভা রহমানকে আমরা জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে তৈরি করেছি। আমার যদি সুর আর তালের জ্ঞান না থাকত, তাহলে আমি শিল্পী তৈরি করতে পারতাম না। আমি গানের মাস্টারিং পর্যন্ত করি। ইভা রহমানের এক থেকে আটটি গানের অ্যালবামের ফটোগ্রাফি ছিল আমার। ভিডিও এডিটিংও আমি করেছি। গানের প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমার দুর্বলতা ছিল। পরে শিল্পী তৈরি করতে গিয়ে গানের ভুবনে জড়িয়ে পড়লাম। তবে আমি কারো কাছ থেকে গান শিখিনি।
প্রশ্নঃ আপনার গাওয়া ‘তোমাকে দেখে মন ভালো হয়ে যায়’, ‘এ জীবনের অর্থ কী’, ‘চার দেয়ালের মাঝখানে আজ’, ‘তোমার এ হৃদয় জুড়ে’, ‘বেঁচে থাকা বড় কঠিন’, ‘হাত বাড়াও আমি আছি’ গানগুলোতে প্রেম যেমন রয়েছে, তেমনি বিরহও রয়েছে। আপনার গানে রোমান্টিকতা ও বিরহের প্রাধান্য কেন?
ড. মাহফুজুর রহমান উত্তরে: আমি কাউকে হারাইনি, কারো প্রেমেও আমি ব্যর্থ হইনি। ছোটবেলা থেকেই আমি বিরহের গান বেশি শুনতাম। আমার সংগ্রহে বিরহের গান বেশি থাকত। বিরহের গানগুলো আমার গলার সঙ্গে যায়, তাই আমি গাই। আমি রক গান গাইতে গেলে পারব না। রক ও ফাস্ট গান আমাকে দিয়ে হবে না। আমার গলায় সেট হয় রোমান্টিক গানগুলো। বিরহের গানগুলো রোমান্টিক হয়। আমার লেখা একটা গল্প ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’। এই গল্প থেকে কিছুদিন পর একটি এক হাজার পর্বের সিরিয়ালের শুটিং শুরু হবে। এই সিরিয়ালের টাইটেল সং হবে ‘চার দেয়ালের মাঝখানে আজ’। গানটি সংগীত পরিচালক মান্নান মোহাম্মদের স্ত্রী লিখেছিলেন। গান লেখার সময় সিরিয়ালের কাহিনী তাঁকে জানানো হয়েছিল। গল্পের কাহিনী হচ্ছে, একটি হিন্দু মেয়ের সঙ্গে একজন মুসলিম ছেলের প্রেমের সম্পর্ক থাকে। মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটির বিয়ে দিতে রাজি হয় না তার পরিবার। তখনই ছেলেটি ‘চার দেয়ালের মাঝখানে আজ’ গানটি গাইবে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজের বাড়িতে বসে গানটি সে গাইবে।
ব্যর্থ প্রেমের গান আমার ভালো লাগে। গানগুলো অনেক মেলোডিয়াস হয়। বিরহের গান করা আমার শখ। রবীন্দ্রনাথের বিরহের গানগুলো আমি পছন্দ করি, ধুম-ধাড়াক্কা গান ভালো লাগে না।
গান নিয়ে ড. মাহফুজুর রহমান এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
আমার গান নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্নজন বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। অনেকে বলেছেন, আমি ঝরে যাব। কিন্তু আমি প্রমাণ করে ছাড়ব, মাহফুজুর রহমান ঝরতে আসেনি, মাহফুজুর রহমান চিরকাল থাকতে এসেছে। এটাই আমার পরিকল্পনা।
সুত্রঃএনটিভি