জলবায়ুর বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশের বিপর্যয়!

0
317

সোহেব চৌধুরী চরফ্যাশন,ভোলা নিউজ২৪ডটনেট।।কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠী নয়, জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে সারা বিশ্বের মানুষ। গত ২০ বছরে জলবায়ুর এই বিরূপ প্রভাব ছড়িয়ে পড়েেেছ এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশেও। গত ২০ বছরে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে নানারকমের প্রভাবে মারা যায় ৫লাখ ২৮ হাজারেরও অধিক মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দাড়িয়েছে (পিপিপি তে) ৩দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং এর সরাসরি ফলাফল অনুযায়ি আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি । ইউএনইপি এডাপ্টেশন গ্যাপ” এর রিপোর্টে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বা এর ফলাফলের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খরচের পরিমান এখনকার খরচের তুলনায় ২-৩ গুন বেড়ে যাবে। আর বর্তমানে যা ধারণা করা হচ্ছে তার চেয়ে ৪-৫ গুন বেড়ে যাবে ২০৫০ সালের ভেতর। অন্যদিকে ২০১৩ সালের ঐ রিপোর্টটিতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ার সীমা ২ ডিগ্রি সেলসিয়সের নিচে রাখার ওপর জোর দেয়া হয়। যার ফলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে ও খরচের হারও এমনটিই আশা করছেন গবেষকদল। তথ্য সূত্র: উড.ঈড়স

এদিকে বাংলাদেশে প্রতি ৩ বছরে গড়ে ১টি ঘুর্নিঝড় আঘাত হানে। সাধরণত বর্ষা মৌসুমের পূর্বে বা পরে এ ঘুর্নিঝড়গুলোর সৃষ্টি হয়। এবং বঙ্গোপসাগরের উষ্ণতের উপর দিয়ে উত্তর দিকে ধেয়ে আসার সময় তীব্রতর হয়ে ওঠে। ঘুর্নিঝড়ে বাতাসের গতি ঘন্টায় ১৫০ কিঃমিঃ এরও বেশি হবার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছাস সাত মিটার (২০-২৫ ফুট) পর্যন্ত উঁচু হয়। এধরনের ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর মানুষের প্র্রাণহানি ও ঘরবাড়ির উপর ব্যাপক ধ্বংসযগজ্ঞ বয়ে আনে। ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে যথাক্রমে আনুমানিক ৫ লাখ ও ১লাখ ৪০ হাজার মানুষের জীবনহানী হয়। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর উত্তর দিকে ক্রমশ সরু হয়ে আসার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে জলচ্ছ্বাসের হার অত্যান্ত বেশি। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির হার বেড়ে গিয়ে আরও পৌনপৌনিক হবার কারণে সমুদ্রে প্রায়শই উত্তাল থাকে ফলে জেলেদের জীবিকাসহ ক্ষুদ্র নৌকানির্ভর পেশাজীবিদের সমুদ্রগমন হুমকির মুখে পড়েছে। যার উদাহরন চলতি মাসের ৫ তারিখেও ভোলা জেলার দুটি ট্রলারের ২৮জন জেলে সমুদ্রের গভিরে হটাৎ ঝড়ের কবলে পরে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ হয়, দির্ঘ ৫ দিন পর কক্সবাজারের সি-গাল পয়েন্ট থেকে স্থানীয় জেলে ও থানাপুলিশ দু’জনকে জীবিত উদ্ধার ও ৭ জেলের লাশ উদ্ধার করেন ,বাকি জেলেরা আজও নিখোঁজ রয়ে গেছেন। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় ”সিডর” এ আনুমানিক সাড়ে ৩হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর খুবই কার্যকর সতর্কীকরণ মানবমৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করেছিল। ৩,৫০০ জনের মৃত্যু অবশ্যই কম না। কিন্ত অপেক্ষাকৃত কার্যকর সতর্কীকরণ পদ্ধতি ও আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে ১৯৯১ সালে মৃত্যুবরণকারী ১লাখ ৪০হাজার জনের তুলনায় এটা সামান্য অংশমাত্র। জলবায়ু পরিবর্তনে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সংযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুকিগুলোর মধ্যে দাবদাহ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা যা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইউরোপ এশিয়া ও অস্ট্রেলীয়ার বড় অংশে দাবদাহ ক্রমাগত বাড়ছে। একইভাবে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ভাড়ী বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও বাড়ছে বর্তমানে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নানা দেশে একই উদাহরনের সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনৈতিক এবং জনসংখ্যার উপরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, গবেষকদলের বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের মতো রাষ্ট্রগুলোর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হলে তাদের হয়তো খুব একটা গায়ে লাগবেনা। কিন্তু দরিদ্র কোনো দেশের ক্ষেত্রে যদি এরকম ক্ষতি হয় তাহলে তাদের কতটা ক্ষতি হবে যা অভাবনিয় ও অপূরণীয়। এই টাকা তাদের মোট জাতিয় উৎপাদনের বড় অংশ ,তাহলে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতিটা কিভাবে পুষবে ? ঘুরেফিরে তো সেই দরিদ্র রাস্ট্রের দরিদ্র জনগণের উপর গিয়েইতো বর্তাবে জলবায়ু পরিবর্তনের এ ভোগান্তি। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বা বিপর্যয় ,বিশ্বের অন্যান্য জায়গা বা দেশের মতো বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। অন্যান্য দেশে যেসব প্রভাব দেখা দিয়েছে ঠিক সেইসব প্রভাবগুলোই বাংলাদেশেও ঘটছে, আশঙ্কার কথা হচ্ছে জলবাযুর বিরূপ প্রভাবে প্রকৃতিক দুর্যোগগুলো দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বছরের প্রায় ১০ মাসের মতোই গরম ও তীব্র দাবদাহ হচ্ছে। বছরে কোনোরকম ২ মাস তাপমাত্রা একটু কম থাকলেও যার মধ্যে এক মাস শিতকাল, তাও সাধারণত নভেম্বর থেকে ডিশেম্বর পর্যন্ত থাকে। এক মাস পরেই শিত আসবে অথচ তখনোও সর্বোচ্ছ তাপমাত্রা ৩৪-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়সের মতো ওঠে। বছরের মাঝেই শুরু হয় কারণে অকারণে অতি বৃষ্টি যার ফলাফল হয় বন্যা। আবার বৃষ্টির সময় বৃষ্টি নেই শিতের সময় শিত নেই গরমের সময় গরম নেই গতকাল ছিল সোমবার শ্রাবণের ১৪ তারিখ বাংলাদেশের ঋতু অনুযায়ি আষাঢ় শ্রাবনে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা অথচ এই বৃষ্টি এই মেঘ এই ঝুম বৃষ্টি এই গরম এই বাতাস তুফান এভাবেই চলছে বর্তমান বাংলাদেশের ঋতুচক্র। এসব ঘটনাকে গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেই দায়ি করছেন। যার ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমছে, বাড়ছে নিত্য নতুন প্রকৃতিক দুর্যোগ ও স্বাস্থ্য ঝুকি। দেশে প্রতিবছর বাড়ছে নদীভাঙ্গন সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘরবাড়িহারা মানুষের সংখ্যা যার ফলে উদ্ধাস্তু ও বস্তির সংখ্যাও বেড়েই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জলবায়ু বিপর্যয়ে আইপিসিসি’র ভবিষ্যাতানুমান অনুযায়ী ২১ শতকের শেষ দশক নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৮-৪.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। অঞ্চলভেদে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় ভিন্নতর হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি)’র ৪র্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমান বাড়বে। ভারত ,নেপাল, ভুটান ও চীন থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহীত নদীগুলোর পানিপ্রবাহের উচ্চতা বাড়িয়ে দিবে। হিমালয়ের হিমবাহগুলোর বরফ গলে যাবার কারণে পানি প্রবাহের এই উচ্চতা মধ্যমেয়াদে আরও বাড়বে। আইপিসিসিসি আরও সতর্ক করে দিয়েছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ০.১৮-০৭৯ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে উপকূলীয় বন্যা বেড়ে যেতে পারে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তৃত নদীগুলো লবণাক্রান্ত হতে পারে। বৃষ্টিপাতের পরিমান বাড়বে এবং বৃষ্টিপাত অনিয়মিত হয়ে যাবে বলে এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। যার ফলে বাংলাদেশে অধিকতর শুষ্ক এলাকা তিব্র খরার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মাসের ২০ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারে জলবায়ুর অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা অর্জনে চরফ্যাশন ,পটুয়াখালী , খুলনা,সাতক্ষীরা,গাইবান্ধা ও কক্সবাজারের যুব জলবায়ু ফোরামের সদস্যদের অংশগ্রহনে ৫দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা অনুষ্ঠীত হয়। এ কর্মশালায় চরফ্যাশন থেকে অংশগ্রহন করেন উপজেলা যুব জলবায়ু ফোরাম। কর্মশালাটির উদ্বোধন করেন কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদ, জলবায়ু অর্থায়ন বৈশ্বিক এবং বাংলাদেশ প্রেক্ষিত বিষয়ে প্রধান আলোচক হিসেবে বিভিন্ন ডকুমেন্ট নিয়ে আলোচনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের উপপরিচালক আমিনুল হক ,জলবায়ু পরিবর্তন এবং মৌলিক ধারনা নিয়ে আলোচনা করেন পটুয়াখালী কোস্ট ট্রাস্টের টিম লিডার নাজমুস সাকিব, সামাজিক জবাবদিহিতা ও সোস্যাল অডিট বিষয়ে আলোচনা করেন প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর (পিসি সিজেধারএফ) আবুল হাসান , জেন্ডার সমতা ও অন্তর্ভূক্তিকরন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোকপাত করেন কোস্ট ট্রাস্ট ভোলা জেলার টিম লিডার রাশিদা বেগম। এসময় কোস্ট ট্রাস্টের উপপরিচালক আমিনুল হক বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত চেলেঞ্জ মোকাবেলা ও দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে রূপকল্প-২১০০ নামের গৃহিত পরিকল্পনাটি তুলে ধরেন।

LEAVE A REPLY