চরফ্যাশন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচণ কুচিলা চাষে

0
437

সোহেব চৌধুরী চরফ্যাশন: চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিন আইচা থানার চর হরিশ গ্রামে ১০টি পরিবার বানিজ্জিকভাবে শুরু করেছে কুচিলা চাষ। আঞ্চলিক ভাষায় কুইচ্চা বলেও অবিহিত করা হয়। ময়মনসিংহ থেকে পোনা সংগ্রহ করে ১০ টি খামারে চষে করা হচ্ছে এ কুচিলা। আর্থিক সচ্ছলাতা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ চাষিরা। পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থনৈতিক সহায়তায় বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান পরিবার উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নে ৫ মাস পূর্বে এ প্রকল্পটি শুরু হয়। এর মধ্যেই চরফ্যাশন উপজেলায় ব্যপক আলোরণ সৃষ্টি হয়েছে এ কুচিলা চাষ। কুইচ্চা চাষের জন্য চর হরিশ গ্রাম এখন কুইচ্চা পল্লী নামে নতুন প্রকাশ পেয়েছে।

বাংলাদেশ ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষন ও নিরাপত্তা আইনে রক্ষিত বন্য প্রাণীর তালিকায় তফসিল ২ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। কুচিলাা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেই পাওয়া যায়। অন্যান্য দেশে সাধারণত কুচিলার দেখা মিলে না। আমাদের দেশের নি¤œ আয়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমরুপে কুইচ্চা চাষ বেছে নিয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে শুধুমাত্র গত অর্থ বছরে ৭০.০১৭৫ টন কুইচ্চা বিদেশে রপ্তানি করে প্রায় ১.৫ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। তাইওয়ান, হংকং, চায়না, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ প্রায় ১৭ টি দেশে কুচিলা রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এ ব্যবসার সাথে জড়িত।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চরফ্যাশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০ পরিবার আলাদা আলাদা ১০ টি খামার তৈরী করে। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১০ ফুট প্রস্ত এবং সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতায় খামার গুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী কুচিলার পোনা ছাড়া হয়েছে। বর্তমানে স্বল্প আকারে বিক্রি করলেও কিছু দিনের মধ্যে বড় ধরনের কুইচ্চার চালান ঢাকা পাঠানো হবে বলে জানান চাষিরা।

কুচিলা চাষি কমল কালু জানান, আমাদের এই কুচিলা চাষাবাদ দেখে চরফ্যাশন উপজেলার অনেক বেকার যুবক, কলেজ ছাত্র খামার তৈরীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি আশাকরি খামারের কুচিলা রপ্তানি করে পরিবারের অর্থের চাহিদা মিটিয়ে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবো। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রেখে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে এখনই বানিজ্যিক ভিত্তিতে কুচিলাা চাষের প্রচলন করা খুবই জরুরি।

চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডাঃ মাহবুব কবির বলেন, কুইচ্চা অনেক সু-সাদু খাবার, শরীরের রক্ত শুন্যতা, ডায়াবেটিস, বাত, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। কুইচ্চা খেলে হৃদপিন্ড সুরক্ষা হয় এবং স্টোক হওয়ার প্রবনতা ১৩ শতাংশ কমে যায়। ভক্ষনযোগ্য প্রতি ১শ গ্রাম কুইচ্চা প্রায় ১৭.৭ গ্রাম প্রোটিন, ০.৮ গ্রাম চর্বি, ২.৪ গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ১ হাজার ৪শ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন ১শ ৮৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুক হোসেন মিনার বলেন, আমি চর হরিশ গ্রামে ১০ পরিবারের কুচিলা খামার গুলো পরিদর্শন করেছি। চাষিদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য একাধিক বার প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। এ উপজেলার যে কেউ কুচিলা চাষাবাদে আগ্রহী হলে আমরা সকল প্রকার সহযোগিতা করবো। চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এই অঞ্চলের দুস্থ পরিবারগুলো স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বেকারত্ব কমবে পাশাপাশি বাংলাদেশ উপার্জন করবে বৈদেশিক অর্থ

LEAVE A REPLY