গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলার গুরুক্ত বিবেচনায় সেতু স্থাপনের পাশাপাশি নতুন সংযোগের দাবী ২২লাখ মানুষের

0
10

মো. আফজাল হোসেন ॥ দ্বীপ জেলায় একের পর এক নতুন করে গ্যাসের সন্ধ্যান যেন অবহেলীত দ্বীপবাসীকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সর্বশেষ জেলার নবম আর দেশের মধ্যে ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ঘোষণা করার আনন্দটাই যেন আলাদা। তবে এখন পর্যন্ত চাহিদামত বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় রয়েছে সাধারন মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ। সংযোগের দাবীতে চলছে আন্দোলন। ভোলার চারপাশটা মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী বেস্টিত বলে জেলাটি তুলনামুলক একটু অবেহলিত। তবে সেই দু:খকে ঘুচিয়ে মাথা উচু করে দাড়িয়েছে ১৯৯৩-৯৪ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এর মধ্যদিয়ে। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক গ্যাসকুপ খনন আর নতুন করে গ্যাসের সন্ধ্যান যেন পুরো জেলার মানুষের আনন্দের সন্ধান দিয়েছে। সম্প্রতি ভোলার-১ গ্যাস কুপে বিপুল পরিমানের গ্যাসের সন্ধানে আনন্দের মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্রে সম্ভাব্য মজুত ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। যা থেকে দৈনিক উত্তোলন করা যাবে ২০-২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এমনটাই খোদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এর। এছাড়াও দ্বীপ এই জেলাটিতে থাকা এখন পর্যন্ত ভোলায় সব গ্যাস কুপগুলোর সব মিলিয়ে প্রায় ৩ টিসিএফ গ্যাস মজুদ থাকার বিষয়টি তিনি আশা করছেন।
এদিকে আনন্দর খবরে জেলার অন্তত ২২ লাখ মানুষের মাঝে। এটাকে বড় ধরনের সফলতা বলে দাবী সাধারন মানুষসহ সচেতন মহলের। তবে সব আনন্দ যেন আবার মলিন হয়ে যায়, যখন ঘরের রান্না করার খাবার নিজে নয়, অন্যরা খাবে অথচ নিজে পরখ করেও দেখতে পারবে না,এমনটা যখন হয়। কথা এমন হলেও সত্য। দ্বীপ জেলায় এতো গ্যাস মজুদ থাকার পরেও স্থানীয় বাসিন্দারা যখন বাসা-বাড়িতে সংযোগ না পায়। যে বোরহানউদ্দিনের শাহবাজপুর গ্যাসকুপে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মিলেছে সেই উপজেলাবাসী থেকেই যাচ্ছে অবহেলিত। আর চাহিদা অনুযায়ী সংযোগ পাচ্ছে না ভোলা জেলা শহরের মানুষ। অন্য উপজেলার কথা বাদই দিলাম।
তথ্যমতে বোরহানউদ্দিন উপজেলায় মাত্র ৫টি বাসায় গ্যাস সংযোগ দেয়া রয়েছে। এছাড়া ঐ উপজেলায় কোন বাসা-বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয়নি। এছাড়া জেলা শহরে ২ হাজার ৩৪০টি বাসা-বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। দুটি ইটভাটাসহ ৬টি শিল্প এবং ২টি কমার্শিয়াল ভাবে সর্বমোট জেলায় ২ হাজার ৩৫৩টি গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান,সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরো বলেন, সরকারী সিদ্ধান্তের কারনেই বর্তমানে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবীতে সাধারন মানুষ আন্দোলন করেই যাচ্ছে। যদিও ভোলার গ্যাস দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়ার কার্যক্রম শুরুর পথে। এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, নদীর ঠিক উপর দিকে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছি। এখান থেকে ২৬-৩০ বছর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাবে। আশা করছি ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে পাইপলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে। ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাবে একটি পাইপলাইন। প্রি-ফিজিবিলিটি শেষ এখন ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির কাজ চলছে। এমন খবরে দক্ষিনাঞ্চলীয় ২১ জেলার মানুষের মাঝে আনন্দ থাকলেও ভোলাবাসীর দাবী ভোলা-বরিশাল সেতুতে করেই গ্যাস নিতে হবে।
ভোলায় গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য বহুদিন আগেই ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া মো: নাজমুল সিকদার বলেন, আমরা কবে যে গ্যাস পাব কোন আশা পাচ্ছি না। অথচ নতুন করে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। উম্মে কুলসুম বলেন, আমরা ভোলাবাসী সবার আগে গ্যাস চাই, তা না হলে জেলার বাহিরে গ্যাস নিতে নিব না। ভোলার বিষয় সরকারের আলাদা চিন্তা করার দাবী জানান এই নারী।
সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম বাপেক্সের হয়ে কূপটি খনন করে। গত মার্চে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মালের হাটসংলগ্ন এলাকায় খনন কাজ শুরু হয়। তিন হাজার ৪৭৫ মিটার গভীর পর্যন্ত খননকাজ শেষ হয় ২৪ এপ্রিল। এই কূপের তিন স্তরে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে জানান, বাপেক্স ভূ-তাত্বিক বিভাগের জিএম মো. আলমগীর হোসেন।

LEAVE A REPLY