ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। একই সঙ্গে তিনি আইন কমিশন থেকে খায়রুল হকের পদত্যাগ দাবি করেন।
আজ রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও শিল্পপতি মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন মওদুদ আহমদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘তিনি নিজে যদি (খায়রুল হক) আয়নার সামনে দাঁড়ান, তাহলে নিজেকে যদি জিজ্ঞেস করেন যে, আপনি কী রায় দিয়েছিলেন পঞ্চম সংশোধনীতে। সরকারের মুখপাত্র হয়ে গেছেন তিনি এখন।’
‘এই লোকটা (খায়রুল হক) একজন নির্লজ্জ, একজন অনৈতিক, ইমমোরাল একজন পারসন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার কোনো যোগ্যতা তাঁর ছিল না। দলীয় কারণে এবং দলীয় আনুগত্যের কারণে তাঁকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছিল। তিনি প্রধান বিচারপতি (সাবেক) হয়ে কী করে আরেকজন প্রধান বিচারপতি বা বর্তমান বিচার বিভাগের সমালোচনা করতে পারেন?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই। দলীয় আনুগত্যের কারণে প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে তিনি তাঁর দলকে খুশি করার চেষ্টা করেছেন। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি এই রায়ের (ষোড়শ সংশোধনী) বিরোধিতা করে তাঁর আসল চেহারা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর উচিত হবে, অবিলম্বে পদত্যাগ করা।’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার আজকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারি দলের রাজনৈতিক অবস্থান বিচারবিভাগের স্বাধীনতার ওপর একটি চরম আঘাত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, উচ্চতম আদালতের ভাবমূর্তি এবং মানসম্মান সরকার ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে।’
‘রায়টা উঁচু মানের, দেশের সত্যিকার সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে এই রায়ে। এই রায়ে অপ্রাসঙ্গিক কোনো পর্যালোচনা নেই, যেসব মন্তব্য রয়েছে তা সবই সঙ্গতিপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। এই রায়ের পর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারি দলের একজন শীর্ষ নেতা সাক্ষাৎ করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হানেন। বিভিন্ন মন্ত্রী এবং নেতারা যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো কোনো সভ্য সমাজে দেখা যায় না। একজন নেতা এমনো বলেছেন যে, এই রায় নাকি একজন ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক লিখে দিয়েছেন। দেশের উচ্চতম আদালতের জন্য এর চাইতে বড় অবমানাকর আর কী হতে পারে?’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আরো বলেন, ‘আমরা যাঁরা আজ বিরোধী দলে আছি, গত নয় বছরে কোনো আদালতে কোনো সুবিচার পাইনি। কিন্তু তারপরও বলব, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ওপর দেশের উচ্চতম আদালত যে রায় দিয়েছেন তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে একটি অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখবে।’
‘রায়টা না পড়ে শুধু সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবর পড়ে ইচ্ছেকৃতভাবে আওয়ামী লীগ এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার জন্য এটা একটা দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।’
মওদুদ বলেন, ‘এত দিন পর সরকার এখন সোজা পথে এসেছে। সংবাদপত্রে দেখলাম, সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে। সেটাই যদি হয়, তাহলে এত দিন যাবত এই আন্দোলন এবং প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশ্লীল বক্তব্য রেখে বিচার বিভাগের যে ক্ষতি সাধন করা হলো তার পরিণতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।’