কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি!

0
476

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট :  আগামী একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কিছুটা ‘শঙ্কায়’ সরকার। সুরেন্দ্র কুমার (এস. কে) সিনহাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর সরকারের আশা-আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। কিন্তু সরকারের অনেক ‘অপছন্দ’ কাজ করায় সদ্য বিদায়ী এই প্রধান বিচারপতি আলোচনা-সমালোচনায় পড়েন। এ কারণেই বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ধীরগতি চলছে বলে জানা গেছে।

বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অতীতের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। এই তিন বিচারপতির মধ্যে থেকে একজনই হবেন প্রধান বিচারপতি। তবে আগামী ৩১ জানুয়ারির পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে। তবে মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেয়ার পক্ষে সরকার। তার ভিন্নমত পোষণ করে পৃথক রায় দেয়ার বিষয়টি সরকারকে ভবিষ্যত ‘শঙ্কায়’ রেখেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা সাঈদীকে আপিলে খালাস ও সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় সরকারের পক্ষে না থাকাসহ অনেক বিষয়ে তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না সরকার বলে ক্ষমতাসীন দলের একটি সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক মানবকণ্ঠকে বলেন প্রধান বিচারপতির পদ থেকে এস কে সিনহা পদত্যাগ করেছেন, তার আর চাকরির মেয়াদ থাকে কোথায়? এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতিই ঠিক করবেন কবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যে কোনো বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিতে পারেন। এ কারণে পুরো বিষয়টি এখন রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করছে।

দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক কেন্দ্রীয় নেতা মানবকণ্ঠকে বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে অনেক বিষয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বর্তমান দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্?হাব মিঞা ভিন্নমত পোষণ করে পৃথক রায় দেয়ার বিষয়টি সরকারকে ভবিষ্যত ‘আতঙ্কে’ রেখেছে। অপরদিকে বিচারক হিসেবে আইনজীবীদের ভেতরে তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা সমভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া না হলে আইনজীবীদের মাঝে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে কিনা সেটা বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সে কারণে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্?হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বিষয়টি সীমিত করে নানা মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানান আইনজীবীদেরও এই শীর্ষ নেতা । তবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, রায় বিবেচনা করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয় না। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আইনমন্ত্রী বলতে পারেন।

প্রসঙ্গত, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন (সুপারসিড) করে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ আগেও একাধিকবার হয়েছে। সর্বশেষ, ২০১১ সালে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলে আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি ছুটিতে যান। তারা হলেন বিচারপতি আবদুল মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পরেও প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ পড়াননি এমন ঘটনাও ঘটেছে। বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবু ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়ার পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম তাদের শপথ পড়াননি। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম অবসরে যাওয়ার পর পরবর্তী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ওই দুই বিচারপতিকে শপথ পাঠ করান।

আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর অবসরে যাবেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন।

এদিকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে বিচারপতি এস কে সিনহার চাকরির মেয়াদ। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহা গত বছর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে পড়েন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে প্রধান বিচারপতির দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। রায় নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে। ওই প্রস্তাব পাসের আগে সংসদে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে আনা সংবিধান সংশোধন বাতিলের এই রায় দিয়েছেন। ‘সংসদ ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে’ এই রায় দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। রায় নিয়ে সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা আদালতে একটি মামলার শুনানিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করেন। ওই রায় দেয়ার পরের পরিস্থিতির দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেছিলেন, বিচার বিভাগ যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছে।

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কানাডা ও জাপান সফর শেষে দেশে ফেরেন। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার রাষ্ট্রগুলোর প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে তিন যোগদান করেন। কানাডায় অবস্থানরত অসুস্থ মেয়েকে দেখতে প্রধান বিচারপতি ৮ সেপ্টেম্বর কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক মাসের ছুটি মঞ্জুর করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৪ অক্টোবর ২০১৭ এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

LEAVE A REPLY