একেমন নির্মমতা বৃদ্ধা মা কেন বাঁশ বাগানে

0
332

নড়াইল প্রতিনিধি ।। মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,পাপোশ বানাইলে ঋণের শোধ হবে না..এই রকম একজন বৃদ্ধা মাকে গভীর রাতে রাস্তায় বাশ বাগানের তলে ফেলে রেখে এসেছে তার গর্ভজাত সন্তান। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে।এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর টনক নড়েছে প্রশাসনের।

এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হওয়ায় শুক্রবার সকালে ঐ মায়ের দুই ছেলে আর এক মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত মেজ ছেলে বাবু শেখ পালিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় সাধারন লোকেরা ঐছেলেদের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে,  উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামের মৃত ছামাদ শেখের স্ত্রী পাঁচ সন্তানের জননী ফুজলী বেগম (৮৯) অনেক কষ্ট করে খেয়ে না-খেয়ে তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে বড় করেছেন। ছেলে-মেয়েদের সবার বিয়ে দিয়েছেন। এখন পাঁচ ছেলে-মেয়েরই আলাদা আলাদা সংসার। কিন্তু  গত কয়েক বছর ধরে  বৃদ্ধা মা’র দায়িত্ব নিচ্ছেন না কোনো ছেলে-মেয়ে।

মায়ের সেবা করতে অপারগতা প্রকাশের পর ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে বৃদ্ধা মাকে বড় ভাই ডাকুশেখ এর বাড়িতে রেখে যায় বড়বোন কুলসুম। বিকালে আবার বড় ছেলে মাকে রেখে আসে মেজ ভাই বাবুর বাড়িতে। সে বাড়িতে তার জায়গা  না হওয়ায় বাবু ও তার স্ত্রী  গর্ভধারিণী মাকে বাড়ি থেকে গলা ও পা ধরে টানতে টানতে নিয়ে এসে বাঁশবাগানের নিচে রাস্তায় ফেলে যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ অন্য কেউ এই বৃদ্ধার দ্বায়িত্ব নিতে চাইলেও তার ছেলে ও ছেলের বৌ বাধা দিয়েছে। রাতভোর তাকে এলাকাবাসী পাহারা  দিয়ে  রাখে। বর্তমানে ওই বৃদ্ধা বড় ছেলে ডাকু শেখের বারান্দায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন।
গ্রামবাসীরা জানান, ‘বৃদ্ধের স্বামী প্রায় ৩০ বছর আগে মারা যান। অনেক কষ্ট করে তিনি ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছেন। বয়সের ভারে বৃদ্ধা এখন নানা রোগে ভুগছেন। আর এ কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন ছেলে-মেয়েদের বোঝা। তিন ছেলের কেউই তার দায়িত্ব নিতে চান না।’

একই গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল শেখ বলেন, ‘বৃদ্ধাকে রাস্তার পাশে একটি প্লস্টিকের বস্তা বিছিয়ে শুইয়ে রেখে যায়। তখন বৃদ্ধার শরীরে অনেক পোকামাকড়ে ভরা ছিল। এমন দৃশ্য দেখলে চোখে পানি আসে। এটি হৃদয় বিদারক ঘটনা।’

কুচিয়াবাড়ি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার জানান, তারা বৃদ্ধার ছেলেদের অনেক অনুরোধ করেছেন। কোনো ছেলেই মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না। গ্রামের লোকেরা সবাই ছেলেদের (বৃদ্ধার) বলেছেন, তারা গ্রামের মানুষ সবাই মিলে বৃদ্ধার খাবার দেবেন। ছেলেরা শুধু বৃদ্ধার থাকার ও সেবার ব্যবস্থা করুক। কোন ছেলেও তাতে রাজি হননি।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে লোহাগড়া থানার এসআই সিদ্দিক আহম্মেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল কুচিয়াবাড়ি গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং বৃদ্ধার খোঁজ খবর নেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিন ছেলে পালিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের।

পরে ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে লোহাগড়া থানা পুলিশ ওই বৃদ্ধার মেয়ে কুলসুম বেগম (৫৮), ছেলে ডাকু শেখ (৬১) ও রাবু শেখ (৪১) কে আটক করেছেন।

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রবীর বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু ২৭ সেপ্টেম্বর বৃদ্ধাকে দেখতে যান। এবং তার স্বজনের কথা বলেন। এসময় বৃদ্ধার জন্য তিনি ৫ হাজার টাকা নগদ দিয়ে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

লোহাগড়া থানার ওসি তদন্ত মো.মনিরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় লোহাগড়া থানায়  মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া নড়াইরের পুলিশ সুপার তত্ত্বাবধানে বৃদ্ধা মাকে পূনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।কপি বাংলার চোখ

LEAVE A REPLY