বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্র্যানসনের রকেটটি ৫৩ মাইল (৮৫ কিলোমিটার) উচ্চতায় পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার তথ্য অনুযায়ী, এই দূরত্ব মহাকাশের সীমার চেয়েও বেশি। এ দূরত্বে গেলে যাত্রীরা ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এ যাত্রার মধ্য দিয়ে মহাকাশ পর্যটনের ইতিহাস গড়লেন রিচার্ড ব্র্যানস
যখন ছোট্ট শিশু ছিলাম, তখন থেকেই এই মুহূর্তের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো কিছুই আপনাকে মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখার জন্য তৈরি করবে না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সকালে এক ঘণ্টার যাত্রার পর ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরেন ব্র্যানসন ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। এ মহাকাশযাত্রার মধ্যে দিয়ে তিনি আরেক ধনকুবের আমাজনের জেফ বেজোসের চেয়ে ৯ দিন এগিয়ে গেলেন। নিজের রকেট ইঞ্জিন তৈরির প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের ‘নিউ শেপার্ড’ নভোযানে ২০ জুলাই ‘মহাকাশের সীমা’ থেকে ঘুরে আসার কথা রয়েছে বেজোসের। সেটিও মানুষ নিয়ে ব্লু অরিজিনের প্রথম অভিযান। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, ব্র্যানসন ও বেজোস মিলে মহাকাশ পর্যটন প্রতিযোগিতার যুগ শুরু করছেন।
পৃথিবীতে ফিরে ব্র্যানসন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যখন ছোট্ট শিশু ছিলাম, তখন থেকেই এই মুহূর্তের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো কিছুই আপনাকে মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখার জন্য তৈরি করবে না।’ তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টাই ছিল জাদুর মতো।’
বিবিসি জানায়, মহাকাশযাত্রায় ব্র্যানসনের সঙ্গে ছিলেন পাইলট ডেভ ম্যাকে ও মাইকেল মাসুকসি। অন্য তিনজন হলেন গ্যালাকটিকের কর্মী বেথ মসেস, কলিন বেনেট ও শ্রীসা বান্ডলা।
রিচার্ড ব্র্যানসনের এই অভিযাত্রাকে মহাকাশ পর্যটনের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক অভিজ্ঞতা বলা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে তিনি আগ্রহী যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করবেন। ইতিমধ্যে ভার্জিন গ্যালাকটিকের কাছে যাত্রী হিসেবে ৬০০ ব্যক্তি অগ্রিম টিকিটের ফরমাশ দিয়ে রেখেছেন। এক ঘণ্টার এই অভিজ্ঞতা নিতে খরচ হবে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বা ২ কোটি ১১ লাখ টাকার বেশি। এ যাত্রায় পাঁচ মিনিটের মতো ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা ও পৃথিবীর দিগন্ত দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে।
রিচার্ড ব্র্যানসনের এই সফলতার পথ কিন্তু একেবারে মসৃণ ছিল না। ২০০৪ সালে মহাকাশ ভ্রমণের জন্য উড়োজাহাজ তৈরির ঘোষণা দেন তিনি। ২০০৭ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে তা চালানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু কারিগরি সমস্যা, মারাত্মক দুর্ঘটনা তা পিছিয়ে দেয়। ব্র্যানসনের ক্যারিয়ারে এটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ ছিল।
বিবিসিকে ব্র্যানসন বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আগামী ১০০ বছরের মধ্যে শত শত মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর লক্ষ্যও রয়েছে তাঁর।
বেজোসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
মহাকাশ পর্যটন ব্যবসায় ব্র্যানসনের কোম্পানির সঙ্গে আমাজনের জেফ বেজোসের কোম্পানির প্রতিযোগিতা চলছে। বেজোসকে টপকে আগেই মহাকাশ ভ্রমণে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্র্যানসন। রোববার পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশে ওড়ার সেই যাত্রা সফল হয়েছে। যদিও উচ্চতা নিয়ে রয়ে গেছে বিতর্ক।
পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল ও মহাকাশের কাল্পনিক সীমা কারমান লাইন নামে পরিচিত। এ সীমা কোথা থেকে শুরু, তা নিয়ে কয়েক বছর ধরে বিতর্ক চলছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা ফেডারেশন অ্যারোনটিক ইন্টারন্যাশনালের মতে, কারমান লাইন শুরু পৃথিবীর ১০০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে। তবে নাসা বলছে, এই সীমা শুরু ৮০ কিলোমিটার থেকেই। যেসব পাইলট, মিশন পরিচালক ও নাগরিক এই সীমা পার হবেন, তাঁরাই নভোচারী হিসেবে গণ্য হবেন। ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড রকেট কারমান লাইন অতিক্রম করবে।
বেজোসের প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের মহাকাশযাত্রার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ভার্জিন গ্যালাকটিকের পক্ষ থেকে তাদের ঘোষণা আসে। ব্লু অরিজিন বলেছে, ২০ জুলাই অ্যাপোলো-১১ চন্দ্রযানের ৫২তম চন্দ্র বিজয়বার্ষিকীর দিনে ওয়েস্ট টেক্সাস থেকে যাত্রা শুরু করবে তাদের নভোযান। ব্লু অরিজিন রকেটে জেফ বেজোসের সঙ্গী হচ্ছেন তাঁর ভাই মার্ক বেজোস, নারী মহাকাশচারী ওয়ালি ফাঙ্ক ও নাম প্রকাশ না করা একজন মহাকাশ পর্যটক।