‘আপনে কোন ডিপারমেন্টের টিচার?’

0
311

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। নির্ধারিত কর্মসূচি থেকে একজনকে আটক করার প্রতিবাদ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক। এরপরই তাঁর ওপর চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা আঙুল উঁচিয়ে তাঁর দিকে তেড়ে এসে বলেন, ‘আপনে কোন ডিপারমেন্টের টিচার?’

অধ্যাপক ফাহমিদুল হক নিজের পরিচয় দিলেন।

এরপর অধ্যাপক ফাহমিদুল হককে ধাক্কাতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। এমনই এক ধাক্কায় ফাহমিদুল চলে গেলেন সড়কের প্রায় মাঝে। প্রায় পাশ দিয়ে চলে যায় একটি বাস। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেন তিনি।

এরপর আবার এলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। অন্য এক কর্মকর্তাকে তিনি নির্দেশ দিলেন, ‘এই উনার নাম লেখ। উনি প্রিজনভ্যানে ভাঙচুর করেছে।’ তারপর এই অধ্যাপককে নিয়ে পুলিশ আরেক দফা ধাক্কাধাক্কি করল।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। এর আগে পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মানববন্ধন। বিকেল ৪টায় ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে ওই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।

ওই কর্মসূচির সময় পুলিশ আটক করে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহকে।

এর প্রতিবাদ জানান অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ও নৃবিজ্ঞানী ড. রেহনুমা আহমেদ। একপর্যায়ে তাঁদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা পথরোধ করার চেষ্টা করলেও পুলিশ বাকী বিল্লাহ ও রেহনুমাকে আটক করে নিয়ে যায়।

এর কিছু সময় পর শাহবাগ থানা থেকে বাকী বিল্লাহ ও রেহনুমা আহমেদকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটের দিকে অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ফেসবুকে ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক আছি। আমার পরিচয় দেবার পরও পুলিশ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। বাকী বিল্লাহকে গ্রেপ্তার করলে আমি আর রেহনুমা আহমেদ প্রিজন ভ্যানে উঠে যাই এবং অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে চাই। অফিসার এসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে আমি প্রিজন ভ্যানের ক্ষতিসাধন করেছি। তাই গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশের সঙ্গে আমার ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়েছে, তারা গ্রেপ্তারও করতে চেয়েছে, কিন্তু আন্দোলনকারীরা করতে দেয়নি। বাকী আর রেহনুমাকে নিয়ে ভ্যান চলে যায়।’

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কার্যত ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই।’ এ সময় তিনি পুলিশের এই বাড়াবাড়ির তদন্ত দাবি করেন ।

অধ্যাপক ফাহমিদুল হক সাংবাদিদের বলেন, ‘ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার, নায্য প্রক্রিয়াগত জায়গা থেকে এ কাজটি তাঁরা করছে। এখন এ অবস্থায় তাঁদের ওপর যদি হামলা করা হয় তাহলে আমরা শিক্ষক হিসেবে নাগরিক হিসেবে, অভিভাবক  হিসেবে চুপচাপ বসে থাকতে পারি না।’

সমাবেশ আহ্বানকারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘ছেলেদেরকে, মেয়েদেরকে বীভৎসভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন, আমরা এই পরিস্থিতির অবসান চাই।’

পরে বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, পুলিশ বিনা কারণে হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করেছে।

প্রতিবাদ করতে আসা অভিভাবক নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর, ছেলের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমি তার প্রতিবাদে এখানে এসেছি। সমস্ত ছাত্র আমার সন্তান। আমার সন্তানদের পড়াশুনার জন্য নিরাপদ পরিবেশের নিশ্চয়তা এই সরকার করুক।’

পরে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সিপিবি, বাসদ ও বামমোর্চা প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

LEAVE A REPLY