আজ পৃথিবীতে আসবে মৃতদের আত্মা

0
511

আবারো বছর ঘুরে এলো হ্যালোইন। সাধারণত আগে আমাদের দেশে এই উৎসব পালন করা হতো না। কিন্তু বিশ্বায়নের প্রভাবে এই উৎসব আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড থেকে উত্তর আমেরিকায় জনপ্রিয়তা পেয়ে এখন আমাদের দেশের তরুণরাও এ বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে। ৩১ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় হ্যালোইন ডে।

হ্যালোইনের প্রচলন প্রথম শুরু হয় প্রাচীন মধ্য এবং পশ্চিম ইউরোপে। মূলত এটি সেল্টিক সভ্যতার একটি উপাদান। এই উৎসবের সূচনা সেল্টিক জাতির হাত ধরে। সেল্টিক সভ্যতা যেখানে গড়ে উঠেছিলো বর্তমানে আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এর উচ্চ ভূমি এবং ফ্রান্স-এর উওর দিকের কিছু অংশব্যাপী। তবে এই উৎসবের নাম অল হ্যালোস ইভ থেকে ‘হ্যালোইন’ হয়েছে বেশ পরে, ১৭৪৫ সালে। যদিও প্রাচীনকালে ‘অল হ্যালোস ইভ’ কিংবা ‘হ্যালোইন’, কোনো নামেই এই উৎসব পালিত হতো না। তখন কি নামে এই উৎসব পালিত হতো তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। ‘অল হ্যালোস ইভ’ নামটির উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে স্কটিশ একটি বই থেকে। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৫৬ সালের দিকে।

যাই হোক, এই সেল্টিকদের মধ্যে ‘প্যাগান’ নামক একটি বিশেষ জাতি ছিল। তারা বিশ্বাস করতো ফসল কাটার শেষ দিন এবং শীতকালের প্রথম দিন রাতে মৃতদের আত্মা ভূত হয়ে পৃথিবীতে আসে। যে কারণে সেই সময়ে তারা রাতের বেলা বিভিন্ন ধরণের উদ্ভট পোশাক পরে ভূতের বেশ ধরত, তাদের বিশ্বাস ছিল ঐ আত্মাসমহু তাদেরকেও ভূত ভেবে ভুল করে। এই রাতে তারা সবাইকে মিষ্টি খেতে দিতো, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল ভূত হয়ে আসা আত্মারা মিষ্টি পছন্দ করে। এই মিষ্টি দেওয়া থেকেই পরবর্তীতে চকলেট দেওয়ার প্রচলন ঘটেছে। আর এই প্যাগানদের কারণেই পরবর্তীতে সেল্টিকদের এই আচার পূর্ণরূপে একটি উৎসবে রূপ নিয়েছিল।

সেল্টিক ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হয় ইংরেজি নভেম্বরের ০১ তারিখ থেকে। ঐ ক্যালেন্ডারে অক্টোবরে গ্রীষ্ম শেষ হয়ে ১ নভেম্বর শীতের দিনের মাধ্যমে নতুন বছরের শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বছরের শেষের রাতে সব অশুভ ঝেড়ে ফেলার জন্যও হয়তো ৩১ অক্টোবর তাদের ক্যালেন্ডারের শেষ দিন তারা এই উৎসব পালন করতো। এখনো অনেক আইরিশ-ওয়েলশরা বিশ্বাস করেন, বছরের শেষ দিনে (সেল্টিক ক্যালেন্ডারের হিসেবে) জগতের সব নিয়মকানুন স্থগিত হয়ে যায়। আর তখন মৃত্যুর দেবতা সব মৃত আত্মাদের অনুমতি দেয় জীবিতদের জগতে আসার। সেল্টিকদের মৃত্যুর দেবতার নাম ‘আনখু’। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে হ্যালোইন উদযাপন করা হয়, বিশেষজ্ঞদের মতে এই উৎসব মূলত খ্রিষ্টধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। তবে খ্রিষ্টের আগে প্রাচীনকালে প্যাগনদের ফসল কাটার শেষ দিনের একটি বিশেষ উৎসব হিসেবেই পরিগণিত হতো।

হ্যালোইন শব্দটি মূলত স্কটিশ শব্দ ‘অল হ্যালোজ ইভ’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বাইবেল মতে ‘হ্যালোইন’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। তবে ‘অল হ্যালোজ ইভ’, হ্যালোইন হয়েছে মূলত ইংরেজিতে এসে। কারণ স্কটিশ ‘ইভ’ ইংরেজিতে এসে ‘ইন’ হয়ে যায়। ‘অল হ্যালোজ ইভ’ থেকে ‘হ্যালোজ ইভ’, সেখান থেকে ‘হ্যালোইন’-এ রূপান্তরিত হয়। হ্যালোইন-এর প্রধান প্রতীক কুমড়া, যার উপরিভাগ কিছুটা বিকৃত আকারের মুখের আদলে কাটা। এবং ভেতরে জ্বলমান একটি মোমবাতি। মুখের এই আদল এবং ভেতরে মোমবাতি জ্বালানোর অর্থ হলো-  আত্মাগুলো কষ্টে আছে কিংবা আত্মাগুলো স্বর্গ এবং নরকের মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে ।

হ্যালোইন উৎসবে পালিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভট পোশাক পরে রাতের বেলা এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ঘুরে বেড়ানো, রাতের বেলা বনভোজন, অগ্ন্যুত্সব, ভৌতিক স্থানসমূহ পরিদর্শন, হরর সিনেমা দেখা প্রভৃতি। প্রথম দিকে, কেল্টিক অঞ্চলের মানুষ এই উৎসব পালন করতো। পরবর্তীতে ১৯শ শতকের দিকে উত্তর আমেরিকার দেশগুলো এই উৎসব ব্যাপকভাবে পালন করা শুরু করে। ঐ শতকের শেষভাগে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও হ্যালোইন উদযাপন করা শুরু করে। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের অনেকগুলি দেশে হ্যালোইন পালিত হয়। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, পুয়ের্তো রিকো, যুক্তরাজ্য উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এশিয়ার জাপানে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও বড়সড়ভাবে হ্যালোইন উৎসব পালিত হয়।

LEAVE A REPLY