আইপিএল’র ক্রিকেট জুয়ায় আক্রান্ত দ্বীপজেলা ভোলা ধ্বংসের পথে যুব সমাজ/ভোলা নিউজ২৪ডটনেট

0
510

এম শাহরিয়ার জিলন/ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট॥ইন্ডিয়া প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ক্রিকেট জুয়ায় ভাসছে দ্বীপজেলা ভোলা। প্রতিনিয়িত ক্রিকেটের প্রতিটি ওভার ও বলে বলে টাকা বাঁজির কারণে ক্রিকেট প্রেমিরা এখন জুয়ার নেশায় আক্রান্ত হয়ে পরেছেন। যুব সমাজ, বেকাররা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি সহ নানা পেশার মানুষও মেতেছে এসব জুয়া খেলায়। প্রতিদিন জুয়ার টাকা নিয়ে চলছে বাগ্বিতন্ডা। জুয়াকে কেন্দ্র করে অনেক যায়গায় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। জুয়ার টাকা লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ফোনে, বিকাশের মাধ্যমে। এখন আইপিএল জুয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে কেউ কেউ। তবে আইপিএল ক্রিকেট জুয়ার কারনে সম্প্রতি ভোলায় চুরি, মাদক সহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বীপজেলা ভোলায় ইন্ডিয়া প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়া এখন তুঙ্গে উঠেছে। পছন্দের দল, বলে বলে ও ওভারে ওভারে বাঁজি চলে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া মহল্লায়। ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন, মনপুরা উপজেলার

গুরুত্বপূর্ণস্থানগুলোতে আইপিএল’র শুরু থেকেই প্রকাশ্যেই জুয়ার বাঁজি ধরার ঘটনা ঘটছে। এ কারণে ক্রিকেট প্রেমিরা এখন জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। বড় বড় বাজার থেকে শুরু করে অলি গলিতে এখন ক্রিকেট জুয়ায় আক্রান্ত। উঠতি বয়সের কিশোর-যুবক ও বেকার, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি সহ নানা পেশার মানুষও মেতেছে এসব জুয়া খেলায়। এখন আইপিএল জুয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে কেউ কেউ। অন্য পেশা বাদ দিয়ে অনেকেই মেতেছে আইপিএল জুয়ায়। খেলা শুরুর আগেই জুয়ারীরা প্রছন্দের দল বেঁছে নেয়। পছন্দের দল অনুযায়ী টাকা নির্ধারন করেন জুয়ারীরা। বড় দল ও ছোট দলের মধ্যে খেলা হলে জুয়ার হিসাবও পাল্টে যায়। যে ছোট দল নিবে সে জিতলে টাকার অংকটা বেশি পায়। আর যে বড় দল নেয় সে জিতলে টাকার অংক কম হয়। আর দু’দল যদি ভালো হয় তাহলে টাকার অংক সমান সমানও হয়। এছাড়াও প্রতি ওভার ও বলে বলেও চলে ক্রিকেট জুয়া। জুয়ারীরা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জুয়ার বাঁজি ধরে থাকে। টাকা লেনদেন হয় বিকাশ, ডাচ বাংলা, শিওর ক্যাশের মাধ্যমে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ক্রিকেট জুয়ার মিশনে অধিকাংশ ব্যক্তিরা নিঃস্ব হলেও কিছু জুয়ারী দুই হাতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শুধু আইপিএলই নয় ফুটবল, ক্রিকেট সহ সকল ধরনের খেলাকে কেন্দ্র করে চলে জুয়া। জুয়ার টাকা নিয়ে অনেক যায়গায় চলে বাগবিতান্ডা। জুয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু এলাকায় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে, আইপিএল ক্রিকেট জুয়াকে কেন্দ্র করেই ভোলার চুরি, মাদক সহ অন্যান্য অপরাধ বেড়ে চলছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জুয়ারী জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাঁজি ধরা শুরু হচ্ছে। এর প্রতিটিই ছোটখাটো জুয়ার আসর। টিভি মানেই একটি জুয়ার বোর্ড। ম্যাচে জয়-পরাজয়, এক ওভারে কত রান, এক বলে কী হবে, কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এমন সব কিছুর ওপরই হচ্ছে জুয়া। চায়ের দোকানের এসব ছোটখাটো আসরে পুরো ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে একেক ধরনের রেট থাকে। তবে সাধারণত ফেবারিট দলের পক্ষে দেড় হাজার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের পক্ষে ১ হাজার টাকা ধরে খেলার প্রচলনই বেশি। মাঝারি মাপের জুয়ায় ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা হয় রেট। বড় আসরে বলই শুরু হয় পাঁচশ টাকা থেকে। সেখানে একাউন্টধারীরাই শুধু খেলার সুযোগ পান। প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আইপিএল বাজি ধরে কেউ কেউ দামি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, স্ত্রীর সোনার গহনাসহ নানা দামি জিনিসপত্র বন্ধক রাখছে। এখন আইপিএল জুয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে কেউ কেউ। এই খেলার সাথে শিক্ষার্থী, যুব সমাজ, বেকার ও বিভিন্ন পেশায় কর্মরতরাও জড়িত রয়েছে বলে জুয়ারারীরা জানিয়েছেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক ইয়ারুল আলম লিটন বলেন, খেলাধুলা মানুষের বিনোদনের অংশ। খেলা নিয়ে জুয়া হলে সমাজে ও মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভোলায় আইপিএলকে কেন্দ্র করে যে জুয়া চলে, এই জুয়া সারাদেশেই চলছে। আসলে এখন দেশজুড়ে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে না, হচ্ছে জুয়া খেলা। এই জুয়া খেলা এখনই বন্ধ করা উচিত। আইপিএল, বি ব্যাশ ও বিপিএল থেকে জুয়া বন্ধ না হলে ক্রিকেট জুয়ায় সর্বস্ব হারাবে দেশের যুবসমাজ।
দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক আলহাজ্ব মু. শওকাত হোসেন বলেন, সমাজের নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি, বিশৃঙ্খলা, সমস্যার সৃষ্টি হয় অপকর্মের মাধ্যমে। তেমনি অপকাজ হচ্ছে জুয়া। জুয়া বলতে আমরা বুঝি টাকা দিয়ে একজন অন্যজনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ধরা। আর এই জুয়ার আসর বৃদ্ধি পায় আইপিএল (ক্রিকেট খেলা) এলে। এটি খুব জনপ্রিয় ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ। বাংলাদেশের মানুষ এই লিগটি দারুণ উপভোগ করে। তবে সমস্যা হচ্ছে এই লিগ এলে জুয়ার আসরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন ছোট বড় চায়ের দোকানে ভিড় জমে যায় জুয়াড়িদের। আজকাল দেখা যায় শিক্ষিত স্কুল কলেজের ছাত্ররাও এই জুয়ার নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই অপকর্মের ফলে সমাজের নতুন প্রজন্মের বেড়ে উঠতে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অনেকে জুয়ায় তার টাকা সব হারিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। টাকা সংগ্রহ করে এনে আবার জুয়া খেলে। এটা একটা মারাত্মক ক্ষতিকর নেশা। এই নেশায় যারা জড়িত হয়ে পড়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে অভিভাবকদেরকে। এই অপরাধ দমনের জন্য প্রশাসনেরও তদারকি প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

LEAVE A REPLY