ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যখন ছাড়পত্র নিয়ে চলে যায় তখন তাদের হাসপাতালে থাকাকালীন যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন (রিপোর্ট) দেওয়া হয় না। ওই রিপোর্টগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটকে রেখে রোগীদের বিপাকে ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজধানী ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এমন কমপক্ষে ২০ শিশুর স্বজনের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁরা প্রায় সবাই একই ধরনের অভিযোগ করেন।
সাতক্ষীরা থেকে আসা মীম (২) নামের এক শিশুর খালা জ্যোৎস্না আক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত বছর ৩০ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। এরপর যখন চলে যাবো তখন তারা শুধু এক্সরে রিপোর্ট আর ছাড়পত্র দিয়ে বলল আর কিছুই দেব না। আর কিছু দেওয়ার নিয়ম নেই আমাদের।’
জ্যোৎস্না আরো বলেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর আবার এসে ভর্তি হই আমরা। পুনরায় অপারেশনের (অস্ত্রোপচার) জন্য ডাক্তাররা আগের রিপোর্ট দেখতে চান। এরপর আমি হাসপাতালকে জানাই যে রিপোর্ট লাগবে। জানানো হয়, ওই রিপোর্ট নাকি হাসপাতাল খুঁজে পাচ্ছে না! ‘হিসটোপ্যাথোলজি রিপোর্ট’ খুঁজে আটদিন পর দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যে রিপোর্ট খুঁজতে সময়ই লাগার কথা নয়। কারণ এটা কম্পিউটারে সেভ করে রাখা থাকে। অথচ ওই রিপোর্টের জন্যই আমাদের অপারেশন আটকে রেখেছে ডাক্তার।’
জোৎস্না আরো বলেন, ‘এই আটদিন আমরা কেবিনে থেকেছি। টাকা খরচ হয়েছে। তারপর গত ৩ অক্টোবর অপারেশন সম্পন্ন হয়। এই বলে, সেই বলে এতদিন আটকে রাখছে এরা। আটকে রাখার একটাই কারণ। যাতে আমাদের কাছ থেকে একটা বড় অঙ্ক কামিয়ে নিতে পারে।’
নোয়াখালী থেকে আসা নীরব (১) নামের এক রোগীর খালা রহিমা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি চলে যাওয়ার আগে সব রিপোর্ট চাইতে গেলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানাল, এসব দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই তাদের।’
রহিমা বেগম আরো বলেন, ‘গতবার যখন এসেছিলাম তখনো দেয়নি কোনো কিছু। এবারও দেয়নি। সব কাগজপত্র হাসপাতাল রেখে দিয়েছে।’
শিশু রাসেলের (৬ মাস) বাবা মজনু চৌধুরী বলেন, ‘যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর হাসপাতাল যে রিপোর্টগুলো দেয় না তার একটাই কারণ। সেটা হলো এই রিপোর্টগুলো একবার রোগীকে দিয়ে দিলে যদি রোগীরা অন্য কোথাও চিকিৎসা করায় তখন তো হাসপাতালেরই লোকসান।’
মজনু আরো বলেন, ‘সেবিকা, হাসপাতাল বা চিকিৎসকেরা রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সঙ্গে যে ব্যবহার করে তাতে এই হাসপাতালে মানুষ আর আসতে চাইবে না। এসব ভেবেই হয়তো রিপোর্টগুলো এরা কাছে রেখে দিয়ে জিম্মি করার চেষ্টা করে।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা অভি (দেড় বছর) নামের শিশুর মা অর্থী বলেন, ‘এখান থেকে এক্স-রে রিপোর্ট ছাড়া আর কোনো রিপোর্ট দেবে না আপনাকে। কিন্তু রোগের বিবরণ হালকা করে ছাড়পত্রে লিখে দেয়।’
সম্পা রানী রামের এক রোগীর মা বলেন, ‘প্রথম বার যখন এসেছিলাম তখন রিপোর্ট দেয়নি আমাকে। রিপোর্টসহ সব কিছু যদি হাসপাতাল দিয়ে দেয় তবে আমার মনে হয় এখানে আর ওই রোগী আসবে না!’
এক শিশুর মা ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘যে রিপোর্টগুলো তারা দেয় না এটার জন্যই আপনাকে আবার এখানে আসতে হবে। অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলেও এখানে আপনাকে রিপোর্ট নিতে আসতে হবে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির উপপরিচালক ডা. এইচ এস কে আলম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের কাছে রিপোর্ট চায় আমরা দিয়ে দেই। রোগীর বাসায় গিয়ে তো আর আমরা বলব না যে রিপোর্ট নিয়ে যান আপনারা। তা ছাড়া আমরা তো মূল রিপোর্ট না দিলেও ছাড়পত্রে সবই লিখে দেই।’
হাসপাতালটির পরিচালক মানজুর হুসাইন বলেন, ‘আমরা আসলে এগুলো আমাদের কাছে রেখে দেই অনেক আগে থেকেই। কারণ হচ্ছে, পরে যখন এই হাসপাতালে ওই রোগী আবার আসবে তখন যেন এগুলো রোগীরা ঠিক মতো পায়। কারণ সব রোগীই যে এগুলো ঠিকঠাক করে রাখার ক্ষমতা রাখে, তা নয়।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আপনি যদি আপনার টাকা দিয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন তাহলে হাসপাতাল আপনাকে ওই রিপোর্ট দিতে বাধ্য। আর শিশু হাসপাতাল তো বেসরকারি, সুতরাং তারা এটা কোনোভাবেই আটকে রাখতে পারবে না।’
কাজী জাহাঙ্গীর আরো বলেন, ‘যদি হাসপাতালটি এসব রিপোর্ট আটকে রাখে তাহলে এটা অবশ্যই অপরাধ। অন্য সব বেসরকারি হাসপাতাল তো এই রিপোর্টগুলো রোগীদের দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে এদের দিতে সমস্যা কী?’ (এনটিভি অনলাইন থেকে নেয়া)।