ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট।। লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দুই শিশুকে নিজ বাসায় ডেকে এনে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় গোলাম মোস্তফা ও আজিজুল ইসলাম। ওই সময় শিশু দুটির চিৎকারে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তারা দুজনকেই গলা টিপে হত্যা করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফরিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান। বুধবার (৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।
ডেমরায় দুই শিশু হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) রাতে যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক গোলাম মোস্তফা (৩০) ও আজিজুল ইসলামকে (২৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গামছা, শিশুদের দুই জোড়া স্যান্ডেল ও লিপিস্টক উদ্ধার করে পুলিশ।
৭ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে ডেমরা এলাকায় নুশরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলা (৫) নামে দুই শিশু নিখোঁজ হয়। মাইকিং করে ও বিভিন্ন জায়গাতে খোঁজাখুঁজি করেও তাদের খোঁজ মেলেনি। মোস্তফার স্ত্রী সন্ধ্যার দিকে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরলে স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান। মেঝেতে শিশুদের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন। দুইজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের লোকজন টের পায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। পরে মোস্তফা পালিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তাদের বাসায় খাটের নিচ থেকে শিশু দু’টির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মোস্তফা সিরামিকের কারখানায় ও আজিজুল একটি বেকারিত কাজ করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি ফরিদ উদ্দিন জানান, গ্রেফতারের পর মোস্তফা ও আজিজুল জানায়, লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার নাম করে শিশু দু’টিকে প্রথমে বাসায় ডেকে আনা হয়। এরপর ঘরে উচ্চস্বরে ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এতে শিশু দু’টি ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করলে প্রথমে দোলাকে গলা টিপে হত্যা করে আজিজুল। পরে নুশরাতের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মোস্তফা। হত্যার পর আজিজুল পালিয়ে যায় এবং মোস্তফা দুই শিশুর মরদেহ খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে বাসায় থাকে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শিশু দু’টি নার্সারিতে পড়তো। স্কুল শেষে এলাকায় দু’জনে ঘোরাঘুরি করছিল। ঠিক সেই সময়ই তাদেরকে সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নেয়।
ধর্ষণের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল কি না-জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এই কাজ করার আগে মোস্তফা মোবাইল ফোনে আজিজুলকে ডেকে নেয়। তার মানে বোঝা যাচ্ছে এখানে পূর্ব কোনও পরিকল্পনা ছিল। তারা মামাতো-ফুফাতো ভাই।’
শিশুদের কেন টার্গেট করা হচ্ছে নাকি অবিভাবকদের অসচেতনতা রয়েছে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘এটি বিকৃত মানসিকতা থেকে হচ্ছে। তাছাড়া মাদকাসক্ত এর বড় কারণ। আর যে সব জায়গায় এসব ঘটনা ঘটছে সেখানে অভিভাবকরা একটু কম সচেতন। নিম্নআয়ের কারণে অনেকটা এরকম হয়ে থাকে। তবে দোষ যারা এসব করে তাদের। কারণ তারা কেন এই খারাপ কাজটি করবে। শিশুরা তো ঘোরাঘুরি আর দৌড়াদৌড়ির মধ্য দিয়েই বড় হবে। বড়দের কাছে কেন শিশুরা নিরাপদ থাকবে না।’
এর আগে পুলিশের ধারণা ছিল ‘দুই শিশু হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় মুক্তিপণের বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে’ এর কারণ জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, মুক্তিপণের বিষয়টি এজন্য মনে হয়েছিল যে, আসামিরা মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসা করত। তাদের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় ডাকাতি মামলাও আছে।
পুলিশের ধারণা ছিল যে, মাদকের টাকার জন্য হয়তো মুক্তিপণ চেয়ে থাকবে। কিন্তু তা তো হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আসামিদের আদালতে পাঠানো হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে নিশ্চিত হয় সে ব্যাপারে আমরা তথ্য প্রমাণ ও আলামত দিয়ে সহায়তা করবো।’