ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশে চাকরি হলো না আসপিয়ার

0
8

ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য সাতস্তরে যাচাই-বাছাই, শারীরিক যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং দুই দফা মেডিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বরিশালের হিজলা উপজেলার কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম। তবে ভূমিহীন হওয়ার কারণে পুলিশে চাকরির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না তার।

পুলিশের প্রতিবেদনে হিজলায় জমি না থাকায় তার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে যোগ্যতা বলে চাকরি পাওয়ার দাবি নিয়ে

বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামনের কাছে গিয়েছিলেন ওই কলেজছাত্রী।

সেখান থেকেও নিরাশ হয়েছেন তিনি।

যোগ্যতা থাকার পরও ভূমিহীনরা চাকরি পাবে না—পুলিশের এমন নিয়ম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা।

অন্যদিকে মেয়েটির পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে জমিসহ একটি ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।

গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন হিজলার খুন্না-গোবিন্দপুরের ভূমিহীন বাসিন্দা মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে আসপিয়া ইসলাম।

২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হয়ে ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। পরদিন ২৫ নভেম্বর ভাইভার ফলাফলেও মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়ে উত্তীর্ণ হন।

২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা ভাইভায় উত্তীর্ণদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ হয় আসপিয়া। সবশেষ ২৯ নভেম্বর ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাতে তিনি উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আসপিয়া ও তার পরিবার ভূমিহীন হওয়ায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে গত বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া।

গত ৩৫ বছর ধরে হিজলায় বসবাস করছে আসপিয়ার পরিবার। ওই এলাকার ভোটার তার পরিবারের চারজন সদস্য। তার বাবা ২০১৯ সালে মারা যান। তিনিও ওই এলাকার ভোটার ছিলেন। বড় ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে এবং মেজ বোন একটি রেস্তোরাঁয় বাবুর্চির কাজ করেন। আর সেজ আসপিয়া হিজলা ডিগ্রি কলেজে বিএ-তে পড়াশোনা করছেন। ছোট বোন পড়ে প্রাইমারিতে।

চাকরির স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়া আসপিয়া ইসলাম বলেন, আমি যোগ্যতাবলে ৭টি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় আছি। এমন সময় হিজলার ওসি তাদের জানিয়েছেন, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। আমরা ভূমিহীন। আমার জন্মের আগে থেকে আমার পরিবার হিজলায় বসবাস করে। পূর্ব পুরুষের বাড়ি ছিল ভোলায়। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে সেখানে তারা কোনো জমি ভোগ দখল করেন না। হিজলায় আমাদের জমি না থাকায় আমার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে স্যারের কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আসপিয়ার পরিবারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী হিজলা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্বাস জানান, আসপিয়ার পিতা মারা গেলেও মা, ভাই-বোন নিয়ে হিজলায় বসবাস করেন। কিন্তু তাদের মূল বাড়ি হিজলায় নয়। তাদের মূল বাড়ি হচ্ছে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। সেখানে তার দাদার নামে জমি আছে বলে আমাদের কাছে জানিয়েছে। কিন্তু অতদূর আমাদের খতিয়ে দেখার বিষয় না। তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা কিনা সেটি তদন্তে চায়। আমি তদন্তে পেয়েছি আবেদনকারী বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। সেটি উল্লেখ করেছি। বাকি বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, শারীরিক এবং একাডেমিক যোগ্যতায় অজপাড়াগায়ের একটি মেয়ে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। যোগ্যতা থাকার পরও শুধুমাত্র ভূমিহীন হওয়ায় তার চাকরি হবে না, এটা মানা যায় না। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে হলেও যোগ্যতা বলে ওই মেয়েটিকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের কোথাও যদি তার ভূমি না থাকে, সেটা তিনি দেখবেন। আর যদি কোথাও ভূমি থাকে তাহলে সেটাই তার স্থায়ী ঠিকানা।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভূমি না থাকায় কারো চাকরি না হওয়া দুঃখজনক। তিনি ওই মেয়েটির পরিবারকে হিজলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে জমিসহ ঘর তথা একটি স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েটির ছবি সংবলিত একটি পোস্টের কমেন্টে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান লিখেছেন, চাকরি হয়েছে জেলা ভিত্তিতে, যার সভাপতি সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার। আমি ডিআইজি। আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি জানার আমার সুযোগ নেই। কারণ তার পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। এটা গোপনীয় প্রক্রিয়া। মেয়েটা জানতে পেরেছে, বরিশালে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় নাকি তার চাকরি হচ্ছে না। সে জানতে এসেছিল। সে জানিয়েছে, তার বাবা-মা দুজনই ভোলা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তার বা তার বাবা-মায়ের বরিশালে কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, মানে জমি নেই। আমি তাকে ভেরফিকেশন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছি। পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। পুলিশ সুপারকে তার বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখতে বলেছি। ওনাকে পরামর্শ দিয়েছি, স্থায়ী ঠিকানা বা নাগরিকত্বের প্রমাণ বা উপায় বের করতে। বরিশালের ডিসিকে বিষয়টি জানিয়েছি। আসপিয়ার বিষয়টি পুলিশে চাকরিপ্রত্যাশীদের কল্যাণে কাজে লাগবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY