ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। এক সময়ের জমজমাট সিনেমা ব্যবসা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুই দশকের ব্যবধানে ভোলায় বন্ধ হয়েছে অন্তত ২২টি সিনেমা হল। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চারটি হল চললেও সেগুলো এখন বন্ধের পথে। বন্ধ হওয়া হলের স্থানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, মার্কেট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দোকানঘর।
পাইরেসি এবং অনলাইন প্লাটফর্মে ছবি মুক্তির কারণে দর্শকরা ক্রমান্বয়ে হল বিমুখ বলে জানা গেছে। ফলে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগের পরও বছরের পর বছর লোকসান গুনেছে হল মালিকদের।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, হল মালিক-কর্মচারী ও স্থানীয়রা জানান, আশির দশক থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভোলায় সিনেমা ব্যবসা ছিল জমজমাট। ওই সময় জেলায় সাত উপজেলায় একের পর এক গড়ে উঠেছে ২৬টি সিনেমা হল।
হলগুলোর মধ্যে রয়েছে-সদর উপজেলায় অবসর হল, রূপসী ও অনুপম; বোরহানউদ্দিনে রাজমনি, চিত্রমনি ও রুপালী; দৌলতখানে বিউটি, আনন্দ, ডায়মন্ড ও অন্তরা; লালমোহনে লালমনি, বিনোদন, মেঘনা, মধুছন্দা ও সংগীতা; তজুমদ্দিনে স্বাধীন, শশী ও সখী; চরফ্যাশনে সাগরি, ফ্যাশন, সাগর, সবুজ, দুলারী ও রঙ্গিলা এবং মনপুরায় সনি ও ঝলক সিনেমা হল।
বর্তমানে চালু রয়েছে ভোলা সদরের অবসর ও রূপসী, বোরহান উদ্দিনের রাজমনি এবং দৌলতখানের বিউটি। তবে লোকসানের মুখে এগুলোও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
জানা যায়, বন্ধ হওয়া বেশিরভাগ সিনেমা হল এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অনুপম সিনেমা হলের স্থানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, চিত্রমনির জায়গায় গোডাউন, শশীতে মার্কেট, সাগরিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সবুজে খাবার হোটেল খুলে ব্যবসা করছেন মালিকরা। এছাড়া রূপালি সিনেমা হল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অবসর সিনেমা হল মালিক রাজিব চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসানের মূল কারণ পাইরেসি। লাখ টাকা দিয়ে নতুন ছবি এনে হলে দেখানোর আগে সেটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়। দর্শকরা ঘরে বসে নতুন ছবি দেখার সুযোগ পাওয়ায় সিনেমা হলে আসেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সিনেমা হল মালিকদের প্রণোদনা দিচ্ছেন এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু দর্শক না আসলে প্রণোদনার টাকা কীভাবে ফেরত দেব। তাই অনেকেই প্রণোদনা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।’
লালমনি ও অবসর সিনেমা হলের পরিচালক গোপাল দত্ত বলেন, ‘দর্শককে হলমুখী করতে ভালো ছবি বানাতে হবে। ইন্টারনেটে না পেলে দর্শকরা হলে ছবি দেখতে আসবে। দর্শক হলমুখি হলে সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো করা হবে।
রূপসী সিনেমা হলের পরিচালক মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘হলে বলিউডের সিনেমা মুক্তি দিলে দর্শক কী পরিমাণ হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে যদি দর্শক আসে তাহলে ব্যবসা ভালো হবে। বাংলা ছবির মতো দর্শক না আসলে আবারও লোকসান গুনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন ২-৪ জন দর্শক নিয়ে শো চালাচ্ছি। এতে কর্মচারীর বেতন তো দূরের কথা বিদ্যুৎ বিলও উঠে না।’
মো. মঞ্জু ইসলাম নামে এক দর্শক বলেন, ‘এক সময় ছবি দেখতে দল বেঁধে হলে যেতাম। এখন হলের পরিবেশ ও সিটের বেহাল দশা।’
বিরাজ চন্দ্র বাছার নামের আরেক দর্শক বলেন, ‘পরিচালকরা যদি সামাজিক ছবি নির্মাণ করেন, যেটি পরিবার নিয়ে দেখা যায়। এসব ছবি পাইরেসি না হলে মানুষ আবার হলমুখি হবেন। এতে মালিকরাও লাভবান হবেন।’
ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজিত হাওলাদার বলেন, ‘সিনেমা হলের সমস্যা তথ্য সংগ্রহ করে উন্নতির জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’