সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি সমালোচনায় কান না দিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঠিক কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশে একটি ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। আপনাদেরই এই শুদ্ধাচারের পরিকল্পনা করতে হবে এবং কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায় সেই উপায় বের করতে হবে। এই পরিকল্পনা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাতে ও তা সফলভাবে কার্যকর করতে হবে। আর যারাই এটা করতে পারবে, তাদের পুরস্কৃত করা হবে।’
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যখন কোনো কাজ করবেন, তখন তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করবেন। কে কী বলল বা কে কী লিখল সেদিকে কান দেবেন না। এসব দিকে কান দিলে কোনো কাজই করতে পারবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কিছু মানুষের স্বভাবই হচ্ছে অন্যের সমালোচনা করা। তাঁরা সামান্য ভুল হলেই অনেক কিছু বলেন, পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনা করেন। কিন্তু তাঁরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজেরা কিছুই করেন না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘তাঁর সরকারই অনেক টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে। আর এর মাধ্যমেই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চলবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের (সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী) আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঠিক কাজটি করে যেতে হবে। যদি আপনাদের এই আত্মবিশ্বাস থাকে যে আপনারা যা করলেন তা জনগণের কল্যাণের জন্য এবং জনগণ এর সুফল ভোগ করবে, তবে আমি বলতে চাই যে আপনারা তাই করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের পাশে থাকা প্রতিটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি বলে তাদের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। আমরা জনগণের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। আর যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁরাও জনগণের সেবা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
করোনাভাইরাস মহামারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অনেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা মাথায় রাখতে হবে যে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীরা কাজ না করে বসে থাকেননি। তাঁরা নিরলসভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কভিড-১৯ মোকাবেলা করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী কভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের পাশাপাশি, প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে জনগণকে সাহায্য করেছেন।’
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি তাদের পড়াশোনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, মহামারিজনিত কারণে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে এবং সমগ্র বিশ্বের মানুষ এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নমূলক কাজের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা যেভাবে এগিয়ে চলেছি তাতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের এই বাধা অতিক্রম করতে হবে এবং এটি স্বীকার করেই কাজ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ায় দুর্যোগ আসবে। তবে আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশের জিডিপির চার শতাংশের বেশির সমতুল্য। বাংলাদেশের আগে কোনো দেশই এ জাতীয় প্যাকেজ ঘোষণা করেনি এবং আমরা এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানেই প্রয়োজন সেখানে প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি হাত খুলে নগদ অর্থ সরবরাহ করেছি এবং ফলস্বরূপ আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।
’ সূত্র : বাসস।