ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেটঃ মোবাইল ফোনের নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল (এমএনপি) সেবার লাইসেন্স পাচ্ছে ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার ব্যবসায়ীদের কনসোর্টিয়াম এই প্রতিষ্ঠান।
আজ মঙ্গলবার রমনায় সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এ কথা জানান।
বর্তমানে বিশ্বের ৭২টি দেশে এমএনপি সেবা চালু আছে। ২০১৩ সালে এই সেবা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় চার বছর পর একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হলেও সাধারণ মানুষ এই সেবা কবে থেকে পাবে সে ব্যাপারে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির কর্মকর্তারা কিছু বলতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ইনফোজিলিয়ান বিডি-টেলিটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামরুর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অনেক গ্রাহক নিজ অপারেটরের সেবায় সন্তুষ্ট হন না। কিন্তু নম্বর পরিবর্তন করতে হবে ভেবে অন্য অপারেটরে যেতেও চান না। এই সেবা চালু হলে নম্বর ঠিক রেখে যেকোনো অপারেটরের সেবা নেওয়া যাবেন।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন গ্রাহক ৩০ টাকা খরচ করে অপারেটর বদল করতে পারবে। তবে আগের অপারেটরে ফিরতে হলে তাকে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। ৯০ দিন পর ওই গ্রাহক আবারও অপারেটর বদলের সুযোগ পাবেন।
এমএনপি কী?
এই সেবা চালু হলে নম্বর পরিবর্তন না করেই মোবাইল অপারেটর বদলানোর সুযোগ পাবেন গ্রাহকেরা। একজন গ্রাহক বর্তমানে যে অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করছেন, তিনি ওই একই নম্বর রেখে অন্য অপারেটরের সংযোগ ব্যবহার করতে পারবেন। এ পদ্ধতিটিকে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি)।
দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ-সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করে। ওই সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন এখন নীতিমালা বাস্তবায়নে মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এমএনপি বাস্তবায়িত হলে সুবিধা পাবেন গ্রাহকেরা। এর মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের মধ্যেও সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হবে।
এমএনপি বাস্তবায়নে ২০১২ সালে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল বিটিআরসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ২০১৩ সালের ১৩ জুন মোবাইল ফোন অপারেটরদের এমএনপি সুবিধা বাস্তবায়ন করতে একটি নির্দেশনাও জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যেই গ্রাহকদের এমএনপি সুবিধা দিতে হবে অপারেটরদের। ওই নির্দেশনার পর এখন সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হতে চলেছে। ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বিষয়ে গ্রাহকদের মতামতও সংগ্রহ করেছিল বিটিআরসি।
নীতিমালা অনুযায়ী, এমএনপি সুবিধা পেতে গ্রাহকের খরচ হবে ৩০ টাকা। এমএনপি বাস্তবায়নের জন্য নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৫ বছর মেয়াদে একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হবে। লাইসেন্স নেওয়ার জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে তিন কোটি টাকা দিতে হবে। আর বার্ষিক লাইসেন্স ফি দিতে হবে ৫০ লাখ টাকা। আবেদনের তিন দিনের মধ্যে গ্রাহককে এ সেবা দিতে হবে এবং কোনো গ্রাহক যদি একবার অপারেটর বদলের পর আবারও অপারেটর বদল করতে চান, তাহলে তাঁকে ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৪৫ দিন অপারেটরের সেবা নিতে হবে। প্রিপেইড ও পোস্টপেইড উভয় ধরনের গ্রাহকই এমএনপি সুবিধা পাবেন।
টেলিযোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সেবার মান বাড়বে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে অপারেটর নির্ধারণে তাঁদের ‘স্বাধীনতা’। তাঁদের মতে, নম্বর ঠিক রেখে নেটওয়ার্ক বদল গ্রাহকদের স্বাধীনতা।
গ্রাহকের স্বাধীনতার বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৩ সালের ১৩ জুন দেশের সব মোবাইল কোম্পানিকে এমএনপি চালুর নির্দেশ দিয়েছিল বিটিআরসি।
বিশ্বের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৮ সালের নভেম্বরে তুরস্কে এমএনপি চালু হওয়ার পর সেখানকার শীর্ষ অপারেটর টার্কসেল প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাভিয়া ও ভোডাফোনের কাছে গ্রাহক হারাতে থাকে। টার্কসেলের এক প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে জিএসএমএ বলেছে, এমএনপির কারণে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তাদের বাজার ৫৬ থেকে ৫১ শতাংশে নেমে এসেছিল। গ্রাহক হারানোর পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, মোবাইল সেবার দাম কমানো এবং সেবার মান বাড়ানোর দিকে তাদের মনোযোগ দিতে হয়েছে।
জিএসএমের গবেষণা অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাত্র এক-চতুর্থাংশ এ সেবা চালু করেছে। ১৫ শতাংশ ভবিষ্যতে চালু করার পরিকল্পনা করছে। বাকি ৬০ শতাংশই এমএনপি চালু করার বিপক্ষে রয়েছে অথবা এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ও ভারত এমএনপি চালু করেছে যথাক্রমে ২০০৭ ও ২০১১ সালে। তবে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় তিন বছর পর পাকিস্তান এ সেবা বন্ধ করে দেয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকাও ইতিমধ্যে এমএনপি চালু করেছে।
জিএসএমের গবেষণা অনুযায়ী, এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের মধ্যে এ সেবা চালু করার বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই। এমএনপি সেবা ব্যয়বহুল হবে-এ চিন্তা থেকে মালদ্বীপ ও উগান্ডা ইতিমধ্যে এর বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। পাশাপাশি ৮ শতাংশ দেশ, যেগুলোতে মাত্র একটি মোবাইল অপারেটর রয়েছে তাদের জন্য এমএনপি প্রযোজ্য নয়।
বিশ্বে এমএনপি সেবার সময়সীমা
ভারতে মাত্র ১১ রুপি খরচ করে এমএনপি সেবা নেওয়া যায়। থাইল্যান্ডে এ সেবার জন্য খরচ হয় ৯৯ বাথ। মালয়েশিয়া, হংকং, যুক্তরাজ্যসহ বেশির ভাগ দেশেই সেবাটির জন্য কোনো মূল্য দিতে হয় না।
বিভিন্ন দেশে নম্বর পরিবর্তনের অনুরোধ পাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৩০ দিন থেকে সর্বনিম্ন কয়েক সেকেন্ড লাগে। ভারতে এ সেবা পাওয়া যায় সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে। যুক্তরাজ্যে লাগে পাঁচ দিন, যুক্তরাষ্ট্রে দুই ঘণ্টা, অস্ট্রেলিয়ায় তিন মিনিট। আর নিউজিল্যান্ডে লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড।