ইমতিয়াজুর রহমান ।। প্রেমের সূত্র ধরে ঘর পলাতক গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার বাসিন্দা শ্রাবন্তী রাণী মণ্ডলকে নিয়ে গেছেন তার স্বজনরা। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ভোলার দৌলতখান থানার চরখলিফা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আলী হোসেনের বাড়ি থেকে স্থানীয় সালিসের মাধ্যমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
শ্রাবন্তীকে নিয়ে যাওয়ার সময়ের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নেটিজেনদের মাঝে সমালোচনার ঝড় চলছে। একই সঙ্গে ঘর পলাতক শ্রাবন্তী অপহরণ হয়েছেন, এমন মামলা দেওয়ায় সামালোচনার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, গাজীপুর উপজেলায় একটি ফ্যান কোম্পানিতে কাজ করতেন দৌলতখানের আলী হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম। সেখানে শ্রাবন্তী রাণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
কামরুল ইসলাম জানান, আমাদের প্রথম পরিচয় যখন হয় তখন শ্রাবন্তী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। যখন ২ বছর প্রেমের সর্ম্পক চলছিল তখন জানাজানি হলে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দেয় পরিবার। আমি চট্টগ্রামে চলে যাই। সেখানে একটি জাহাজে চাকরি নেই।
সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল শ্রাবন্তি আমার সঙ্গে চলে আসেন দৌলতখানে। ১৫ এপ্রিল নোটারির মাধ্যমে ইসলামধর্ম গ্রহণ করে সে। তার নতুন নাম দেওয়া হয় জান্নাতুল ফেরদৌস। এরপরে আমরা বিয়ে করি। শুক্রবার থেকে আমরা একই ঘরে সংসার শুরু করি।কামরুল ইসলাম আরও জানান, পরে জানতে পারি জান্নাতুল ফেরদৌসের পিতা শংকর চন্দ্র আমার নামে অপহরণ মামলা দিয়েছেন। পরের শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) লোকজন নিয়ে এসে তারা আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়।
কামরুলের আরেক ভাই নুরুজ্জামান দাবি করেন, স্থানীয় প্রভাবশালী কামাল তুফানি নামে এক লোক ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে কামরুলের স্ত্রীকে তার মা-বাবার কাছে দিয়ে দেন। এ বিষয়টি থানা-পুলিশের লোক সমাধান করতে পারতো। আইন যা বলে সেটিই হতো।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু একটি মেয়ে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে স্বেচ্ছায়, সেদিন কামরুলের স্ত্রী বোরকা পড়েই সালিসে গিয়েছিল। কিন্তু কামাল তুফানি সেই বোরকা টেনে খুলে মেয়েকে তার পিতার কাছে দিয়ে দেন। ওইদিন কোনো পুলিশ আসেনি। যা মনে চায় সেটাই করেছেন কামাল তুফানি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রাবন্তী রাণী ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস চিৎকার করে সবাইকে বলছিল ‘সে তার মা-বাবার কাছে যাবে না। কামরুল তার স্বামী, তার সাথেই থাকবে।’ এ সময়ে স্থানীয় এক মেম্বারের পা ধরে কান্না করতেও দেখা যায় তাকে।
কামরুল বলেন, আমি যদি অপহরণ করতাম তাহলে আমার স্ত্রীকে নিয়ে তো লুকিয়ে থাকতাম। তাকে নিয়ে সালিসে যেতাম না। আমার স্ত্রী সবার সামনে চিৎকার করে বলেছে ‘সে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে।’ তারপরও কেউ আমাদের সাহায্য করতে আসেনি। আমার সংসার ৭ দিনেই ভেঙে দিল।কামরুল দাবি করেন, তার স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০০৩ সালের ৩ মার্চ গাজীপুরে শংকর চন্দ্র মণ্ডল ও নিয়তি রানী মণ্ডলের ঘরে জন্ম নেন শ্রাবন্তী রাণী।
এদিকে জান্নাতুলের ফিরে না যাওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় আজ দুপুরে ‘দৌলখান থানা’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাখ্যা দেন দৌলতখান থানার ওসি।
দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান বলেন, গাজীপুরের একটি মামলায় আমরা সেই মেয়েকে উদ্ধারে সাহায্য করি। তবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে পুলিশের উপস্থিতি ছিল না উল্লেখ করলে তিনি জানান, সিভিল ড্রেসে পুলিশ ছিল। অপরহরণ মামলা হলেও ঘটনাটি একটি প্রেমঘটিত ব্যাপার। কিন্তু মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় অভিভাবকের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ।
তিনি সেখানে দাবি করেন, গাজীপুর থানায় ২৩ এপ্রিল দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে অপহরণকৃত অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু শ্রাবন্তী রাণীকে (১৫) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান উদ্ধার করে। সেই স্ট্যাটাসের নিচে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্নজনকে কমেন্ট করতে দেখা গেছে।