ইমতিয়াজুর রহমান ।। সরকার যা আমাগো লইগা বরাদ্ধ দেয় তা সব উপরের মানুষেরা পায়! অনেকটা ক্ষোভ ও আক্ষেপের সাথে কথা গুলো বলছিলেন, ভোলার দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাট এলাকার সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলে রফিক মাঝি।
তিনি বলেন, নদীতে ২ মাসের অভিযান ছিলো। তখন আমার মাছ ধরি নাই। এখন নদীতে যাই। কিন্তু মাছ পাইনা। এমনকি মাছ ধরার খরচের টাকাও ওডে না। এখন মাছের আশায় সাগোরে জামু তাও দিছে আবার দুই মাসের অভিযান। এই অভিযানে অভিযানেই আমাগো মাছ ধরার সময় শেষ হইয়া যায়। মাছ আর আমগো কপালে থাহে না । এখন কিস্তর টাকা দিমু কেমনে বৌ-পোলাইন লইয়া চলমুইবা কেমনে তার চিন্তায় বাঁচি না। সরকার যা আমাগো লইগা বরাদ্ধ দেয় তা সব উপরের ( যারা প্রকৃত জেলে না) মানুষেরা পায়। আমরা কিছুই পাইনা।
রফিক মাঝির মতো করোনা দুর্যোগের মধ্যেও মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাগরে ৬৫ দিনের জন্য মাছ শিকার বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে ভোলার ৬৩ হাজার জেলে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অভাব-অনাটন আর সংকটের মধ্য পড়েছন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন কাটাবেন সে চিন্তায় দিশেহানা হয়ে পড়েছে।
মার্চ-এপ্রিল ২ মাস বিভিন্ন নদীর অভয়াশ্রম গুলোতে ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ পর ফের সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় হতাশ ভোলার সমুদ্রগামী জেলেরা। তাদের মতে মৌসূম না আসায় মে-জুনে নদীতে এমনিতেই ইলিশ থাকেনা। এসময় সমুদ্র এলাকায় কিছু ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু নদীতে দু মাস মাছ শিকার করতে না পাড়ায় যে ক্ষতির কবলে পড়েছেন জেলেরা তার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগ মূহুর্তে সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার এমন নির্দেশকে তারা বিনা মেঘে বর্জপাতের মতো ঘটনা বলে মনে করছেন।
ভোলার দৌলতখানের সাগররে মাছ ধরতে যাওয়া সফিজল মাঝি বলেন, এমন নিষেধাজ্ঞা থাকলে নৌকা, জাল, জ্বালানি ও শ্রমজীবি জেলেদের ব্যয় নির্বাহ করে এ পেশায় টিকে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। ৬৫ দিনের এই অভিযানে আমরা অভাব-অনাটন আর সংকটের মধ্য পরেছি । কেউ ধার দেনা করে দিন কাটাবেন কেউবা বিকল্প পেশা খুজছেন । কষ্টে দিন কাটাতে হবে আমাদের । এ অবস্থায় সরকারের বরাদ্দ আরো বাড়ানো দাবী করেন তিনি । এছাড়া তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রনোদণা প্রকৃত জেলেদের মাঝে সঠিক সময়ে বিতরণের দাবিও করেন । এ অবস্থায় জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার অথবা সময় কমিয়ে ১ মাসে আনার দাবি জানিয়েছেন।
দৌলতখানে মৎস ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানায়,গত বছর করোনার কারণে ২৭ লাখ টাকা লোকশান দিছি। মাছ কিনে পার্টির কাছে কম দামে বিক্রি করতে হইছে। এবছর আশাকরছি মাছের সিজনে ব্যবসা করবো। কিন্তু ২ মাসের অভিযানে জেলেরা মাছ ধরতে পারে নায়। নদীতেও এখন মাছ নাই। সাগরে যারা মাছ ধরে তাদের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হয়। জেলেরা মাছ ধরে আনবে। সেই মাছ বিক্রি করে আমরা দেনা পাওনা শোধ করমু। কিন্তু সাগরেও এখন অভিযান দিছে। আমাদের দেশের জেলেরা তো সব অভিযান মানে কিন্তু এই সময় বাংলাদেশের জলসীমায় নির্বিচারে মাছ ধরেন ভারতীয় জেলেরা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন মৎস ব্যবসায়ীদের এসময় সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দেয়ার দাবি করেন।
এছাড়াও নিষেধাজ্ঞার শুরুর দিকে যথাযথ সহায়তা না পেলে বাধ্য হয়ে মাছ ধরতে হবে অনেকে জেলেকে বলে জানায় জেলেরা।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম জানান , মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। গত দুই বছর এ কর্মসূচী বাস্তবায়িত হওয়ায় গেলো বছর ইলিশ সহ সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ আরো গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। এসময় মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সেজন্য ভোলার ৬৩ হাজার ৯ শত ৫৪ জন সমূদ্রগমী জেলের জন্য বিশেষ প্রনোদণার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং যথা সময়ে প্রনোদণার চাল বিতরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নৌ-বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সম্মনীত পদক্ষেপ থাকবে। যাতে অবৈধ ভাবে কেউ মাছ ধরতে না পারে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ শিকারে গেলে জেলেদেরকে কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
উল্লেখ্য, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ১শত ৬৪ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড এবং ৩ শত ৩০জন জেলেকে প্রায় ১৪ লাখ ৭৫হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।