অমি আহমেদ ,ভোলা নিউজ২৪ডটনেট।। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের মহানায়কখ্যাত সংগ্রামী জননেতা বানিজ্য মন্ত্রি আলহাজ্জ্ব তোফায়েল আহমেদের আজ শুভ জন্মদিন।
১৯৪৩ অব্দটি বাংলার ইতিহাসে ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বছরটি ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মহাধ্বংসযজ্ঞের কাল। এই কালপর্বে বাংলায় ভয়াবহ খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। এতে প্রায় ৪০ লাখ মানবসন্তান অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। সেদিন ছিল দেশব্যাপী মহাবিপর্যয়ের ঘোর ঘনঘটা। তখন কে জানত যে, বাংলার প্রত্যন্ত জনপদ ভোলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী এই শিশুটি একদিন বড় হয়ে বাংলার মানুষের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে নিজ জীবনকে নিবেদন করে উজ্জ্বল সূর্যের আলোকচ্ছটায় অমানিশার অন্ধকার বিদূরিত করে বাঙালির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ইতিহাসের মহত্তম অধ্যায় সৃষ্টিতে অবদান রাখবেন!
এর পর খায়েরহাট জুনিয়র হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে বোরহানউদ্দীন হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। প্রাইমারি ও জুনিয়র স্কুলের পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। বোরহানউদ্দীন হাই স্কুলে যখন ভর্তি হন তখন তাকে কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছে।
১৯৬০-এ ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এটা ছিল তার জন্য বেদনাদায়ক। সে জন্য ঢাকা কলেজ ছেড়ে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। ব্রজমোহন কলেজ থেকে সাপ্তাহিক ছুটিতে লঞ্চযোগে ভোলায় মায়ের কাছে একদিন থেকে ফিরে আসতেন। তার মাতৃভক্তি অনন্য এবং অনুসরণীয়! কলেজে পড়াকালে ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের অভিযাত্রার শুরু। তার পর ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে কাস রিপ্রেজেন্টেটিভ, কাস ক্যাপ্টেন, স্কুল ক্যাপ্টেন, পরে যথাক্রমে ছাত্রলীগের অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি, অ্যাডমিন সেক্রেটারি, ব্রজমোহন কলেজের ক্রীড়া সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্রীড়া সম্পাদক, পরে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন, তার পর হলের নির্বাচিত সহসভাপতি, সোয়্যাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের ভিপি, ডাকসুর ভিপি, ’৬৯-এর গণআন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন এবং ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ’৬৭ থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত ডাকসুর ভিপি থাকাকালে চারটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বঙ্গবন্ধু মুজিব প্রদত্ত ৬ দফা (দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলনসহ) হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য, ’৬৬-এর ৮ মে থেকে ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলায় তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলেন এবং ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তিদানে স্বৈরশাসককে বাধ্য করেন।
পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মুক্তমানব শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। আর ’৬৯-এর ২৫ মার্চের মধ্যে তথাকথিত প্রবল পরাক্রমশালী লৌহমানব স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে পদত্যাগে বাধ্য করে গৌরবের যে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সেল। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে অর্জিত হয় বাংলার মানুষের রাজনৈতিক অধিকার তথা ভোটাধিকার। এরপর ’৭০-এর ৭ জুন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ভোলা-দৌলতখান-তজুমদ্দি-মনপুরা আসন থেকে বঙ্গবন্ধু তাকে ২৬ বছর বয়সে মনোনয়ন দেন। ’৭০-এর ১২ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ১০ লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ভোলায় তার নির্বাচনী এলাকা ছিল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি আসনের নির্বাচন পিছিয়ে ’৭১-এর ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি শপথগ্রহণ করেন। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে পাকিস্তান সামরিক শাসকগোষ্ঠীর টালবাহানার পরিপ্রেক্ষিতে ’৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বীয় বাসভবনে ৪ যুবনেতাকে- শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ- আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এর পর ’৭১-এর মার্চের ১ তারিখ পূর্বাহ্নে আহূত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণায় সারা দেশ প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। শুরু হয় সর্বব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন। দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করতে তিনি উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন। পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে ২৫ মার্চ রাত ১২টায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। শুরু হয় সর্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে জাতির জনকের পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী তিনি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ গঠন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র সৃষ্টিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এর পর ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরমাকাক্সিক্ষত বিজয় অর্জনে বদ্ধপরিকর তোফায়েল আহমেদ ছিলেন ‘মুজিব বাহিনী’র অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও পাবনা সমন্বয়ে গঠিত মুজিব বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষাধিক প্রাণ আর ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলে ১৮ ডিসেম্বর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। একই বছরের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ নেতারা দেশে ফিরে এলে বিমানবন্দরে তাদের বীরোচিত সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহত্তর বিজয় অর্জিত হলেও সে বিজয় পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। কারণ তখনো পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ সোচ্চার হলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৪ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তোফায়েল আহমেদকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেন। ’৭২-এর ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ গণপরিষদের অধিবেশন আরম্ভ হয়। গণপরিষদ সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ৪ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক সর্বসম্মতিতে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’ গৃহীত হয় এবং ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর গণপরিষদের ৩৯৯ জন সদস্যের সঙ্গে তিনি ‘শহীদের রক্তে লেখা’ সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। এর পর ’৭৩-এর ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেন। ’৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি দেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার প্রতিষ্ঠার পর প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিনি রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী নিযুক্ত হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সফরে সঙ্গী হন। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, অটোয়ায় কমনওয়েলথ সম্মেলন, লাহোরে ওআইসি সম্মেলন, আলজেরিয়ায় জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং জ্যামাইকায় কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদান এবং যুগোশ্লাভিয়া ও ইরাক সফর করেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনকের নির্মম হত্যাকা-ের পর পরই তাকে প্রথমে গৃহবন্দি ও পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং রেডিও অফিসে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ ৩৩ মাস তিনি কারান্তরালে ছিলেন। ’৭৮-এ কুষ্টিয়া কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন সাফল্যের সঙ্গে এই পদ অলঙ্কৃত করে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে পরপর তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ’৯১ এবং ’৯৬-এর নির্বাচনে ভোলা-১ ও ভোলা-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে ’৯১-এর জাতীয় সংসদে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। একই বছর আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নির্বাচিত হন। পবিত্র সংবিধান থেকে কলঙ্কিত ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ অপসারণ, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তার ভূমিকা অগ্রগণ্য। ’৯৬-এ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের গণরায়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করে দেশ-বিদেশে রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। মন্ত্রী হিসেবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্মেলনে যোগদান করে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্য উন্নত দেশগুলোয় শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের অঙ্গীকার আদায় করেন। এ সময় তিনি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মুখপাত্র নির্বাচিত হন।
মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন এবং সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠায় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তোফায়েল আহমেদের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যে কারণে তিনি এরশাদ আমলে ৪ বার এবং ’৯৫-৯৬-এ ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে আন্দোলন হয় তাতে খালেদা জিয়ার আমলে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। এ ছাড়া ২০০২-এ খালেদা-নিজামী জোট সরকারের শাসনামলে তাকে কারাবন্দি করা হয়। রাজনৈতিক জীবনে সর্বমোট ৭ বার তিনি কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। কিন্তু কোনো স্বৈরশাসক তাকে কারাগারে আটকে রাখতে পারেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় আদর্শ- গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নে নিবেদিতপ্রাণ নেতার মূলমন্ত্র ‘অসত্যের কাছে কভু নত নহে শির, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর।’ রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক সংগ্রাম ও বিস্তর বন্ধুর পথ তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে। সংগ্রামী জীবনে সততা, মেধা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও বাগ্মিতার ফলে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জনকল্যাণমূলক রাজনীতির অভীষ্ট লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে চলেছেন। ’৭৫-এর পর রাজনীতির ক্ষেত্রে দল ও মতাদর্শ পরিবর্তনের হিড়িক পড়ে যায়। রাজনীতিকরা স্বৈরশাসকের বেচাকেনার সামগ্রীতে পরিণত হয়। প্রলোভন ও হুমকির মুখে বহু আদর্শবাদী আদর্শচ্যুত হলেও তিনি ছিলেন নির্ভীক, ব্যতিক্রম এবং অনন্য। মাথা নত করেননি। এমনকি ১/১১-এর পর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্ত্রী-কন্যাসহ মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রকার প্রলোভন বা হুমকির কাছে নতি স্বীকার করেননি। বরং জেল-জুলুম-হুলিয়া তার রাজনৈতিক জীবনের প্রধান অলঙ্কার তথা ভূষণ হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে শুধু দেশের মানুষের কাছে নয়, সমগ্র বিশ্বেই বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারক হিসেবে তিনি পরিচিত। জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ও সংসদীয় গণতন্ত্র অগ্রসর করার ক্ষেত্রে তার প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে। জনসাধারণের দাবি আদায়ে তার শক্তিমান কণ্ঠস্বর রাজপথে ও সংসদে আজীবন সোচ্চার! প্রায় ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একই আদর্শ ও দলে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে ‘রাজনৈতিক ইন্টিগ্রিটি’ বজায় রাখার মহত্তর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার মহতী স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম সারথি সংগ্রামী গণনায়ক তোফায়েল আহমেদের শুভ জন্মদিনে ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট ও হেল্প এন্ড কেয়ার সামাজিক সংগঠন পরিবার তার দীর্ঘজীবন কামনা করি।