কোরআন মানবজাতির প্রতি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ দান ও অনুগ্রহ। তাই আল্লাহর বাণী কোরআনের বিশেষ যত্ন নেওয়াও আবশ্যক। পরম যত্ন, মমতা, ভালোবাসা ও অবিরাম চর্চা ছাড়া কোরআন আত্মস্থ করা সম্ভব নয়।
কোরআন মুখস্থ রাখতে করণীয়
কোরআন মুখস্থ রাখতে প্রাজ্ঞ আলেমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—
এক. কোরআনের প্রতি যত্নবান হওয়া : আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোরআনের প্রতি লক্ষ রাখবে। যে পবিত্র সত্তার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! কোরআন বাঁধন ছাড়া উটের চেয়েও দ্রুতগতিতে দৌড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৩৩)
দুই. কোরআনের মর্যাদা সম্পর্কে জানা : কোরআনের মর্যাদা ও তা চর্চার পুরস্কার সম্পর্কে অবগত হলে ব্যক্তির জন্য কোরআন মুখস্থ রাখা সহজ। যেমন—মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করল, তার জন্য একটি সওয়াব এবং প্রতিটি সওয়াব ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। আমি বলব না, আলিফ-লাম-মিম একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মিম একটি অক্ষর।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)
তিন. হাফেজে কোরআনের মর্যাদা জানা : মুমিন ব্যক্তি কোরআনের যতটুকু মুখস্থ করবে, কিয়ামতের দিন সে অনুপাতে মর্যাদা লাভ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(কিয়ামতে) কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পাঠ করতে করতে ওপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে-সুস্থে পাঠ করতে, সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৬৪)
চার. কোরআন ভুলে যাওয়াকে ভয় পাওয়া : ইসলামী আইনজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে কোরআন ভুলে যাওয়া পাপ এবং অপরাধ। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) উদ্ধৃত করেছেন, ‘কোনো বান্দা যখন কোরআন মুখস্থ করে তা ভুলে যায় সে পাপের জন্ম করে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, তোমাদেরকে যে বিপদ স্পর্শ করে তা তোমাদের হাতের উপার্জন। আর কোরআন ভুলে যাওয়া সবচেয়ে বড় বিপদ।’ (ফাতহুল বারি : ৯/৮৬)
কোরআন ভুলে যাওয়া কখন পাপ
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ বিন উসাইমিন (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা কখনো কখনো ‘প্রমাণ’ হিসেবে কোরআনের বহু আয়াত মুখস্থ করে এবং তার বড় একটি অংশই ভুলে যায়। এসব আয়াত ভুলে গেলে কি পাপ হবে? জবাবে তিনি বলেন, কোরআন ভুলে যাওয়ার দুটি কারণ। এক. প্রকৃতিগত কারণে, দুই. উপেক্ষা ও অবহেলার কারণে। মানবীয় দুর্বলতা ও প্রকৃতিগত কারণে অনেক কিছুই মানুষ ভুলে যায়। তাতে তার অনিচ্ছা বা অবহেলা থাকে না। এমন প্রাকৃতিক কারণে কোরআন ভুলে গেলে তাতে কোনো দোষ নেই। এমনটি মহানবী (সা.)-এর জীবনেও ঘটেছিল। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন কোরআন তিলাওয়াতকারীকে রাতে মসজিদে কোরআন পড়তে শুনলেন। এরপর তিনি বলেন, আল্লাহ তার প্রতি করুণা করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত মনে করিয়ে দিয়েছে, যা অমুক অমুক সুরা থেকে ভুলতে বসেছিলাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৪২)
আর ব্যক্তির বিমুখতা ও অবহেলার কারণে যদি কেউ কোরআন ভুলে যায়, তবে তার পাপ হবে। কেননা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা এসেছে, ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ অবস্থায়।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪)
ভুলে যাওয়ার ভয়ে কোরআন মুখস্থ না করা
কোরআন মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শয়তানের একটি প্রতারণা হলো ভুলে যাওয়ার ভয়ে মুখস্থ না করা। শয়তান ভয় দেখায় কোরআন মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া পাপ। সুতরাং মুখস্থ কোরো না। মুমিনের উচিত শয়তানের প্রতারণায় পা না দিয়ে কোরআনের মর্যাদা, কোরআন চর্চা ও তা হিফজ করার পুরস্কারসংক্রান্ত আয়াত ও হাদিসগুলো স্মরণ করা। এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘… তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। কেননা শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৬)। আল্লাহ আমাদের কোরআন মুখস্থ করা এবং তা সংরক্ষণের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।