মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

0
360

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়া নিয়ে তাঁর সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাটা শুধু এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষই বিদ্যুৎ পেয়ে গেছেন। আর ১০ ভাগ মানুষও পাবেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’

শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নয়, বিদ্যুতের জন্য স্টেশন, সাবস্টেশন, সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা প্রভৃতি কাজও তাঁর সরকার ব্যাপকভাবে করে যাচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে জাপান সরকারের সহযোগিতায় এবং জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

মাতারবাড়ির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎপ্রকল্প। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় যে বন্দর নির্মাণ করা হবে, পরে তাকে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত করা হবে।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডিজিটাল কায়দায় প্রধানমন্ত্রী এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচনের সময় তাঁর সরকারের ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ এর কথা পুনরোল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালব সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

সরকার প্রধান বলেন, যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন নাই সেখানে তাঁর সরকার সোলার সিস্টেম ইনস্টল করে দিচ্ছে। প্রায় ৪৬ লাখ সোলার সিস্টেম বসানো হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পৃক্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের এই চাহিদার সঙ্গে মিল রেখেই তার সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে।’

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা কেনতারো সনুউরা এবং জাইকার জ্যেষ্ঠ সভাপতি ইনিচি ইয়ামাদাস গণভবন প্রান্ত থেকে এবং বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইসু ইজুমি মাতারবাড়ির অনুষ্ঠানস্থল থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস প্রকল্পের ওপর অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরী এবং ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্পটি উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

তাঁর সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সর্বাগ্রে প্রত্যন্ত এবং অবহেলিত তৃণমূল মানুষ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহেশখালীতেই আগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতো। প্রকৃতির খেয়াল খুশিতেই এই এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। তিনি বলেন, আজ এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, এলএনজি টার্মিনাল করছি এবং মহেশখালী-সোনাদিয়া হয়ে ডিপ সি-পোর্টও গড়ে উঠছে তাতে একদিকে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীলতা পাবে এবং তাদের জীবন মান বাড়বে।

বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগও তাঁর সরকারের সময়ই গৃহীত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো এলাকায় দেখলাম আমি দিনের পর দিন বিদ্যুৎ নেই। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম এটা সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়, এখানে আমাদের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন আমরা আইন করে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম বলেই আজকে সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠে মানুষের জীবন-মানকে উন্নয়নের সুযোগ করে দিচ্ছে।’

দেশে কেবল বিরোধিতার স্বার্থেই বিরোধিতাকারী মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মহলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন কিছু করতে গেলেই বাধা আসে। অনেক ফর্মূলা আসে। অনেক তাত্ত্বিক গজিয়ে যায়, তারা নানা রকমের কথা বলে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতে ২০১৬ সালের ১ ও ২ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত সাতজন জাপানি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনাটি স্মরণ করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি পুনরায় সমবেদনা জানান। এতকিছুর পরও বাংলাদেশে আসার এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং জাইকাকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে কর্মরত জাপানের নাগরিকসহ বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবাইকে আশ্বস্থ করে বলেন, ‘আমি এতটুকু বলতে পারি আমাদের তরফ থেকে তাদের নিরাপত্তা দিতে যতটুকু করার দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি। আমরা তা করে যাবো এবং আমি স্থানীয় জনগণ বিশেষ করে কক্সবাজার এবং মহেশখালীতে আমাদের যে জনপ্রতিনিধি, দলের নেতা-কর্মী এবং স্থানীয় জনগণ সবাইকে আমি এ আহ্বান জানাবো- আপনারাও তাদের নিরাপত্তার দিকটাতে খুব ভালোভাবে লক্ষ্য রাখবেন। কারণ তাঁরা আমাদের মেহমান, তাঁরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, আমাদের দেশের উন্নতির জন্যই তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।’

এ সময় স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাপানের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে জাপান বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বতভাবে সহযোগিতা করেছিল। তিনি বলেন, জাপান সে সময় শুধু সমর্থনই দেয়নি জাপানের ছোট স্কুলের শিশুরা তাদের একদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তারা তা দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। যে কথাটা আমরা সব সময় স্মরণ করি, উল্লেখ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকেও সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রয়েছে এবং এখনো আমরা উন্নয়নের জন্য যে কাজ করে যাচ্ছি সেখানেও জাপান বিরাটভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য জাপান সরকার এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রীকেও তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি এ প্রসঙ্গে জাপান সরকারের সহযোগিতায় হোটেল সোনারগাঁও নির্মাণেরও কথা উল্লেখ করেন।

মাতারবাড়ির এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের  ব্যবস্থা তাঁর সরকার করেছে এবং করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। তাদের পুনর্বাসনে আমরা সব রকমের ব্যবস্থা নেব এবং এজন্যও জাপান সরকার যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।’

জমি অধিগ্রহণ করার পরে যারা এখনো অর্থ পায়নি সেটাও তাঁর সরকার লক্ষ্য রাখছে। কেউ বঞ্চিত হবে না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদানের জন্য আমরা কিছুটা সমস্যায় রয়েছি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই নাগরিকদের তারা ফেরত নিতে পারে।

তা ছাড়া তাদের বসবাসের জন্য সরকার ভাষাণচরে অস্থায়ী ঘর-বাড়ি এবং সাইক্লোন শেল্টার করে দিচ্ছে, বাঁধ নির্মাণ করে দিচ্ছে, যাতে পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গারা চলে গেলে দেশের মানুষ সেটা ব্যবহার করতে পারে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা সমস্যাটা সাময়িক বরং এখানকার স্থানীয় জনগণের উন্নয়নটাই তাঁর সরকারের চিন্তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে তাঁর সরকার যথেষ্ট সচেতন এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY