ভোলা নিউজ২৪ডটকম।।ভোলায় যৌতুক জন্য ও পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় স্ত্রীকে অত্যাচার নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ উঠছে ভোলা জজ কোর্টের কম্পিউটার অপারেটর মোঃ আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে। গৃহবধু সাদিয়াকে নির্যাতন করে উল্টো তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন হাশেম। এই হামলায় পুলিশ সাদিয়ার পিতাসহ তিনজনকে আটক করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে নির্যাতনের শিকার গৃহবধু সাদিয়া আক্তার (২৪) এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগে সাদিয়া আক্তার বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ভোলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেনের ছেলে ভোলার আদালতের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরীরত মোঃ আবুল হাশেমের সাথে ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। আমার পিতা মিজানুর রহমান বিয়ের সময় আবুল হাশেমকে স্বর্ণের চেইন, আংকটি ও বাসার আসবাবপত্র দেন। এর কিছুদিন পর হাশেম ও তার পরিবার আমার কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে ৬ লক্ষ টাকা দাবী করলে আমার পিতা সংসার সুখের জন্য হাশেমকে দাবীকৃত যৌতুকের ৬ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পর স্বামী আবুল হাশেম, শ্বশুর আমির হোসেন, শ্বাশুরী কোহিনুর বেগম আমার পরিবারের কাছে আরও ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। আমি যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে আবুল হাশেম ও তার পরিবার গত ১০ অক্টোবর আমাকে বাসায় বেধড়ক মারধর করে জখম।
এসময় তারা আমাকে গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে আমার পিতা, মাতা ও আত্মীয়স্বজনরা এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এছাড়াও আমার স্বামী আবুল হাশেম তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী নাজমা বেগমের সাথে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আমি এতে বাঁধা দিলে বিভিন্ন সময় আমাকে মারধর ও নির্যাতন চালাতো স্বামী আবুল হাশেম। সে ভোলার জজ কোর্টে চাকুরী করে এই ক্ষমতা দেখিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। তার ভয়ে আমরা কাউকে কিছু বলতে সাহস পাইনি। আমাকে নির্যাতন ও মারধরের ঘটনায় আমার পিতা মিজানুর রহমান ও আত্মীয়স্বজনরা ভোলা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করতে গেলে পুলিশ অদৃশ্য কারণে মামলা নেয়নি। উল্টো আমার স্বামী মোঃ আবুল হাশেম আমাকে ১নং আসামী করে মোট ৭জন ও অজ্ঞাত আরও ২/৩জনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন, হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করেছে। আবুল হাশেমের মামলায় আমার পিতা মোঃ মিজানুর রহমান, আরিফ হোসেন ও মোঃ শুভকে ওই দিন রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। যা আমাদেরকে খুবই ব্যথিত করেছে।
আবুল হাশেম ভোলার জজ কোর্টে কম্পিউটার অপারেট পদে চাকুরী করায় প্রভাব বিস্তার করে আমাদেরকে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানী করছে এবং আমরা যাতে মামলা না করি সে জন্য হাশেম ও তার পরিবার বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার আবুল হাশেম ও তার পরিবারের লোকজনের হুমকি-ধামকির ভয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
যৌতুক ও পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ার কারণে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের মারধর ও নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেন নির্যাতনের শিকার সাদিয়া আক্তার ও তার পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে সাদিয়া আক্তারের মা আজিবুনেছা বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার মেয়ের জামাই আবুল হাশেম ও তার পরিবার যৌতুকের জন্য সাদিয়াকে মারধর ও নির্যাতন করতো। মেয়ের সুখের জন্য ৬ লক্ষ টাকা ও বাসার আসবাবপত্র দিয়েছি। এরপরও পুনরায় আরও ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে আবুল হাশেম। যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় আমার মেয়ে সাদিয়াকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করতো হাশেম ও তার পবিরারের লোকজন। গত ১০ অক্টোবর সাদিয়াকে যৌতুকের জন্য বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন করে হাশেম ও তার পরিবার। খবর পেয়ে আমরা ওই বাসায় গিয়ে সাদিয়াকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। ভোলা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ কোন এক কারণে আমাদের মামলা নেয়নি। উল্টো আবুল হাশেম আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট ঘটনা সাজিয়ে মামলা দিয়ে আমার স্বামী মিজানুর রহমানসহ ৩জনকে আটক করেছে। হাশেম জজ কোর্টে চাকুরী করে এই ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা বর্তমানে চরম আতঙ্কের মধ্য গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা এই ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি।
সাদিয়া আক্তার স্বামী আবুল হাশেম এর ফোনে একাধিক বার ০১৭১৪৪৪৪২৬৮ ফোন নম্বরে ফোন দিলে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।