মোঃ আফজাল হোসেন ॥ ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ না ধরায় পূর্নবাসনের অংশ হিসেবে জেলেদেরকে সরকার কর্তৃক দেয়া খাদ্যসশ্য ভিজিএফ’র চাউল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগে মুখর জেলেরা। তিন মাস চল্লেও প্রায় জেলেরা এখন পর্যন্ত পায়নি বরাদ্ধকৃত চাউল আর যারা পাচ্ছেন তারা ৪০কেজির স্থলে ১৫কেজি। সরকারী কর্তারা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে এর দায় চাপাচ্ছেন একে অপরের উপর।
মার্চ ও এপ্রিল দুইমাস মেঘনা এবং তেতুলিয়া নদীর ১৯০কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম
এলাকা ঘোষনা করে এই এলাকায় সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে মৎস্য অধিদপ্তর। অথচ প্রতিদিন শত শত নৌকা আর ট্রলার নিয়ে জেলেরা প্রকাশ্যে মাছ ধরেই যাচ্ছে। জীবনের ঝুকি নিয়েই এসব জেলেরা জাল হাতে নেমে পড়ছে নদীতে। এর কারন হিসেবে খোজ নিতে গিয়ে বেড়িয়ে আসছে জেলেদর নানান সমস্যার কথা। খেতে না পাড়া আর একাধিক এনজিও গুলো থেকে লোন নেয়ার বিষয়তো রয়েছেই। আটক হয়ে জেলেদের জেল-জরিমানা হলেও থেমে নেই মাছ ধরা থেকে। যদিও সরকার মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসের জন্য প্রতি মাসে ৪০কেজি করে ৪ মাস জেলেদের মোট ১৬০কেজি চাউল দেয়ার কথা রয়েছে। অথচ ১২থেকে ১৫কেজি করে চাউল পাচ্ছে এসব জেলেরা। জানতে চাইলে উত্তওে বলছেন যা যেভাবে আসছে সেই ভাবেই দিচ্ছি,এনিয়ে আমরা খাই না। আবার কেউ কেউ জেলে কার্ড এর জন্য টাকা দিলেও তা বছরের পর বছর পেড়িয়ে আশ্বাস ছাড়া পাচ্ছে না কিছুই। তাদের সকল অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান,মেম্বার আর মৎস্য কর্মকর্তাদের উপর। যা পাচ্ছে তা নিয়েই সন্তস্ট থাকতে হচ্ছে এসব জেলেদের।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ৪নং ওয়ার্ড এর জেলে মোঃ জাকির হোসেন নদীতে মাছ ধরারত অবস্থায় বলেন,৪০কেজি না ২০কেজি করে চাউল দেয়ার কথা বলে নিয়ে চাউল দিয়েছে। ঐ চাউল বাড়ি নিয়ে মেপে দেখি ১৫ কেজি। এটা আমারই সবারই একই অবস্থা। কেউ ১২ আবার কেউ ১৫ কেজি কওে পায়। একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড এর মোঃ কামরুল বল্লেন একই কথা। তিনি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান তাকে বলেছেন,যেমন আইছে তেমনি পাবা। এটা আমরা খাইনা। আর পাবকনিা তার আশা নেই বলে জানালেন এই জেলে। একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর জেলে মোস্তফা বল্লেন,চাউলতো পাওয়ার কথা এশমণ করে। তবে ১০কেজি,১৫কেজি আবার কখনো ১৮কেজি করেও চাউল পাই। যা পাই তাতে চলে না। সমিতি আছে যা চালাতে হয়। তাই নদীতে মাছ ধরতে আই। একমাস ৪/৫দিন মাছ না ধরে বসে ছিলাম। এখন দেখছি আমার খাওয়ার মত কিছু নাই। সমিতি আছে যা চালাতে হয়। দেনা করে আর খেতে পারছি। যে কারনে জীবনের ঝুকি নিয়েই জাল নিয়ে নদীতে নামছি। সরকার চাউল দেয়,ঠিকই তবে ঐ চাউল ভালো ভালো লোকে নিয়ে খায় বলে ক্ষোভ করে বল্লেন,রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা মোঃ ইব্রাহিম। সরকারে চাউল দ্যায় তো কিছুই পাইনা। চেয়ারম্যান আর মেম্বারেরা মিলে খাইয়া ফালায় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর মোঃ কবির। একই ধরনের অভিযোগ করলেন মোঃ হেলাল রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডেও বাসিন্দা।
অপরদিকে চরফ্যাশনের হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের এক জেলে নাম প্রকাশ না করার স্বর্তে বল্লেন,মেম্বার জেলে কার্ড দেয়ার কথা বলে ৫শ টাকা নিয়েছে। এখন কার্ডও দেয় না আর চাউলও পায় না। এওয়াজপুর ইউনিয়নের জেলে মোঃ বাবুল বলেন,অফিসে দেয়ার কথা বলে মেম্বার টাকা নিয়েছে। এখন কার্ড ও চাউল কিছুই দেয় না। দের বছর হয়েছে,বলে শুধু দিব দিব দেয় না। ধরলে বলেন.আপনার সামনেই অফিসে টাকা দিলাম কার্ড আসলেই পাইবনে। চরফ্যাশন নিয়ে ঘুরিয়ে আনে,তবে কার্ড চাউল কিছুই দেয় না বলে জানালেন চরফ্যাশন হাজারিগঞ্জ ৭নাং ওয়ার্ড এর একজন বাসিন্দা। যিনি ছোট বেলা থেকেই মাছ ধরছেন। প্রকৃত জেলেরা কিছুই পায় না বলে জানালেন সামরাজ ঘাটে বসে কথা হওয়া বেশ কয়েকজন জেলে। তারা চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের রোশানল থেকে বাচাঁর জন তাদের নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেন।
এদিকে এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে রয়েছে নানামুখী বক্তব্য। কোন দপ্তরই এর দায় ভার নিতে চাচ্ছে না বলেই একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছেন তারা। যদিও এর আগে বহুবার সরকারী গুদাম থেকে সরকারী এ চাউল ট্রাক অথবা ট্রলারে করে জেলার বাহিরে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দেখা গেছে এসব গুদাম থেকে সরকারী চাউল প্রকাশ্যেই দিনের বেলাতে ট্রলারে করে দেশের বিভিন্নস্থানে নেয়ার ঘটনা। প্রশাসন থেকে এসব দেখার কথা থাকলেও কোন কোন সময় তারা এসব অভিযোগ এরিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে আবার একাধিকবার পুলিশ ও জেলা প্রশাসক কর্তৃক ট্রাকসহ চাউল আটক করা এবং মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। শুধু তাই নয়,জেলেদের জন্য সরকার এর দেয়া ভিজিএফ চাউল বিক্রির জন্য কালোবাজারী ব্যাবসয়ীদরে সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে চাউলের দাম বাজারে কম থাকায় দর নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে দেনদরবার চলছে। যদিও জেলেরা তাদের ন্যায়্য দাবী চাউলের সুষ্ঠ বন্টনের দাবীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধ করেছে জেলেরা।
ভোলা জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন বল্লেন,ভিজিএফ মৎস্য কর্মসুচীর আওতায়
প্রতিমাসে ৪০কেজি চাউল বিতরন করার কথা রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন একসাথে ২মাসের চাউল বিতরন করেন। অথচ ফ্রেয়্রুয়ারী ও মার্চ মাসের চাউল এপ্রিলের শেষ সময় হলেও বুঝে নেয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। গুদাম থেকে চাউল বিক্রি হয়ে যাওয়ার প্রশ্রংগে বলেন.গুদাম থেকে চাউল বিক্রি অথবা বের হয়ে যাওয়ার পর খাদ্য বিভাগের এর সাথে আর কোন সংশ্লিস্টতা থাকে না। চাউল বের হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় জন প্রতিনিধিগন যদি চাউল বিক্রি করে দিয়ে থাকেন বা জেলেদের ঠকিয়ে থাকলে এটা তাদের বিষয়। তার এদাধিক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক,খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা এসব কালো বাজারে চাউল বিক্রির সাথে জড়িত বলে জানালে তিনি বলেন,এসব বিষয় আমার জানানেই। তবে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তখন গুদামে চাউল না এনেই বিক্রি করে দেয়াসহ বিভিন্ন অনয়িমের তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি স্বপক্ষে কোন উত্তর না দিয়ে জেলা মৎস্য কার্যালয় ভালো বলতে পারবেন বলে তাদের উপর দায়ভার চাপিয়ে দেন।
অপরদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস,এম আজহারুল ইসলাম বল্লেন,জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চালের ডিউ প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবার ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর চালের বরাদ্ধ পুনরায় প্রদান করেন। সকলের উপস্থিতিতে এই চাউল প্রদান করে থাকেন। কোন অনিয়ম হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে তিনিও তাদের দ্বায়িত্ব এরিয়ে যান।
তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বল্লেন,সরকার কর্তৃক যে ৪০কেজি করে চাউল
পায় জেলেরা তা ইতিমধ্যেই আমরা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ডিউ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছি। দুই মাস পর পর যে চাউল দেয় তা দেয়ার জন্য আমাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে (চেয়ারম্যানরা)। তবে কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেলেই সংগে সংগে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে হুশিয়ার করে দেন। জেলা প্রশাসক আরো বলেন,কোন ধরনের অনিয়ম হতে দেয়া হবে না।